|
|
|
|
ক্ষতি করছে ইংরেজি, ফের বিতর্ক রাজনাথের কথায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আবার হিন্দি বনাম ইংরেজি বিতর্ক। এ বার প্রসঙ্গটি তুললেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ।
গত কাল আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার আগে এক সম্মেলনে রাজনাথ মন্তব্য করেন, “ইংরেজি ভাষা ভারতের অনেক ক্ষতি করছে। আমরা আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছি। মাত্র চোদ্দো হাজার মানুষ এখন সংস্কৃতে কথা বলেন।” বিজেপির পক্ষে বিষয়টি একটু নতুন। জনসঙ্ঘের সময় থেকেই গেরুয়া শিবির হিন্দি ভাষার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করলেও কখনও সরাসরি ইংরেজির বিরোধিতা করেনি। বরং লোহিয়াপন্থী নেতারা যখন ইংরাজি বিরোধিতার কথা বলতেন, সেই সময়ও লালকৃষ্ণ আডবাণীরা বারবার বলে এসেছেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের থেকে যে শিক্ষা তাঁরা পেয়েছেন, তাতে হিন্দি ভাষাকে তুলে ধরার জন্য ইংরেজি বিরোধিতার কোনও প্রয়োজন নেই।
গত লোকসভা নির্বাচনে বরং ইংরেজি ও কম্পিউটারের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবকে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, মুলায়মের নীতি হল, গরিবকে ধনী করতে না পারলে ধনীকে গরিব করো। সেই সময় মুলায়মের লক্ষ্য ছিল, গো-বলয়ে সেই সব মানুষের মন জয় করা, যাঁরা ইংরেজি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট জমানায় সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির আগে ইংরেজি পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দীর্ঘ দিন। কিন্তু মুলায়ম বা বাম নেতারা কেউই নিজের পরিবারে ইংরেজি শিক্ষায় বাদ সাধেননি। তাঁদের ছেলেমেয়েরা দিব্যি ইংরেজিতেই পঠনপাঠন করেছেন। বিদেশেও গিয়েছেন। মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আধুনিকতার হাওয়া আনতে চাইছেন, ঘটা করে কম্পিউটার বিতরণ করছেন। কিন্তু বিরোধী শিবিবের বক্তব্য, গোবলয়ের পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি। সেখানকার বহু মানুষ এখনও ইংরেজি শিক্ষায় বঞ্চিত। সেই মানুষগুলির কাছে পৌঁছতেই এ বার রাজনাথ নতুন করে পুরনো বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু একটি বিশেষ শ্রেণির শ্রোতা-দর্শকের বলা কথা যে জাতীয় স্তরে এত বিতর্ক তৈরি করবে, তা সম্ভবত রাজনাথ তখন ভাবেননি। এখন বিপাকে পড়ে তিনি আমেরিকা থেকে টুইট করছেন, ‘‘ইংরেজি শেখা বা ইংরেজিতে ভাব প্রকাশ করার বিরুদ্ধে আমি নই।”
কিন্তু তার আগেই তেড়েফুঁড়ে উঠেছে কংগ্রেস। একাধিক নেতা বলেছেন, সঙ্কীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে বিজেপি। মণীশ তিওয়ারি বলেন, “বিজেপির কথা শুনে হাসি পাওয়ার জোগাড়। তাদের ভিশন ডকুমেন্ট তৈরির জন্য এমন লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাঁরা ইংরাজি ছাড়া আর কিছু বলেন না। সেখানে তাঁদের দলের সভাপতির মুখ থেকে এমন মন্তব্য দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়।” শশী তারুরের বক্তব্য, “ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা নিয়েই এ দেশের যুবকরা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করছেন। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির শরিকও হচ্ছেন।” বিতর্ক শুরু হওয়ায় বিজেপিও এখন পাল্টা যুক্তি দিতে শুরু করেছে। অস্বস্তি কাটাতে দলের মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেছেন, “বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যেই ইংরেজির বিরোধিতা করা হয় না। রাজনাথ শুধু বোঝাতে চেয়েছেন, ইংরেজি শেখার জন্য নিজের ভাষার সঙ্গে আপস যেন করা না হয়।” |
|
|
|
|
|