ক্যানসার নিরাময় সম্ভব, শিবির করে বোঝাচ্ছেন আক্রান্তেরা
ন’বছরের সৌম্যদীপ এখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। গত বছর স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতাতে পুরস্কারও পেয়েছে। দেখলে কে বলবে, কোনও দিন ব্লাড ক্যানসার হয়েছিল তার। বাবা পার্থপ্রতিম ঘোষের কথায়, “প্রথমে চূড়ান্ত দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয়েছিল। এখন সব ঠিক আছে। ছেলে সুস্থ।”
শুধু সৌম্যদীপই নয়। এমন অনেক ক্যানসার আক্রান্ত মানুষ আজ সুস্থ। অথচ, ‘ক্যানসার মানেই নো অ্যান্সার’এখনও এমনটাই মনে করেন লোকজন। এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করে রোগীদের আলোর দিশা দেখাতে পথে নেমেছেন কয়েকজন ক্যানসার আক্রান্ত মানুষ। যাঁদের কেউ রোগমুক্ত। আবার কারও চিকিৎসা চলছে। আবার রোগের করাল গ্রাসে একমাত্র সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, এমন দম্পতিও রয়েছেন এই দলে। ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে ক্যানসার আক্রান্তদের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘মেদিনীপুর ক্যানসার কেয়ার’। ২০১০ সালের ২ জুন স্বামী সুনিষ্ঠানন্দের অনুপ্রেরণায় মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ওই সংস্থার জন্ম। যদিও প্রধান উদ্যোগী ছিলেন শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি। ২০০৭ সালে যাঁর একমাত্র ছেলে সায়ন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শৈলেন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “মূলত চিকিৎসার গাফিলতির কারণেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছিল। আর যাতে কারও ক্ষেত্রে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি।”
কী করছেন এই সংস্থার সদস্যরা?
সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন যাঁরা। —নিজস্ব চিত্র
বিভিন্ন এলাকায় ও স্কুল, কলেজে গিয়ে শিবির করে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন। ক্যানসার নিয়ে বিস্তর বইপত্রও জোগাড় করেছেন। শিবিরে সংস্থার সদস্যরা পরামর্শ দিচ্ছেন, শুরুতেই চিকিৎসাটা জরুরি। শিবিরের পাশাপাশি ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের খোঁজেও সন্ধান চালাচ্ছে সংস্থাটি। ক্যানসার রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থাও করছে। খড়্গপুর গ্রামীণ থানা এলাকার কেশপালের খুকুমণি মণ্ডলের জরায়ুতে ক্যান্সার হয়েছিল। খুকুমণির কথায়, “সকলে ধরেই নিয়েছিল আমি আর বাঁচব না। চিকিৎসায় অনেক খরচ শুনেছি। তারপরেও লোকে বাঁচে না। চাষ করে কষ্টে সংসার চলে। ওই খরচ করে কী চিকিৎসা করানো সম্ভব।” ওই সময়ই স্থানীয় এক চিকিৎসকের মাধ্যমে মেদিনীপুর ক্যানসার কেয়ারের সন্ধান পান তাঁর ছেলে নবকুমার। তাঁর কথায়, “ওঁদের কাছে মায়ের সমস্যার কথা বলার পরে ওঁরাই মনে ভরসা জোগান। এমনকী কলকাতায় হাসপাতালে ভর্তিও করতে গিয়েছিলেন।” ২০১০ সালের অগস্ট মাসে চিকিৎসা শুরু হয়েছিল খুকুমণিদেবীর। এখনও পর্যন্ত ২৫টি ‘রে’ ও ৬টি ‘কেমো’ দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি সুস্থ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এই সংস্থার সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দীপক বসু, বিধান পাত্র, মুক্তি দে বক্সী, রাজীব গোয়েঙ্কার মতো অনেকেই। এর মধ্যে ঝাড়গ্রামের রাজীববাবু ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে বিয়ে করেছেন। একটি মেয়েও হয়েছে। রাজীব গোয়েঙ্কার কথায়, “আমিও তো বেঁচে ফিরেছি। আমি বলি, ব্লাড সুগারের থেকে ব্লাড ক্যানসার ভাল। ব্লাড সুগার হলে সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে। ব্লাড ক্যানসার হলে কিছুদিন চিকিৎসা করলেই রোগমুক্তি ঘটবে।” মেদিনীপুর শহরের নতুন বাজারের বাসিন্দা বিধান পাত্রও সুস্থ হয়ে বিয়ে করেছেন। এখন ঠিকাদারি করছেন। তিনি বলেন, “মানুষের অজ্ঞতার কারণেই আতঙ্ক ছড়ায় বেশি। সরকারি ভাবে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া বা জেলা শহরে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ার তো উদ্যোগ দেখছি না। এই কারণেই সমস্যা বাড়ছে।”
এখনও পর্যন্ত ৮ জন ক্যানসার আক্রান্তের চিকিৎসার সুব্যবস্থাও করেছে ‘মেদিনীপুর ক্যানসার কেয়ার’। তারই সঙ্গে ক্যানসার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোরও নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা হচ্ছে। রোগের লক্ষণ নিয়ে ক্যুইজের আয়োজন করা হচ্ছে। ক্যুইজের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে থাকছে পুরস্কার। ফলে ছাত্রদের মধ্যেও ক্যানসার সম্বন্ধে একটা প্রাথমিক ধারণা গড়ে উঠছে। সংস্থার সদস্য দীপক বসুর কথায়, “আমরা তো অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারব না। তবে রোগীর পাশে থেকে তার চিকিৎসায় সাহায্য করা, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার মতো কাজগুলো করলেও অনেক উপকার হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.