ডেবরায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল
শিলান্যাসের বছর পার, গাঁথা হয়নি একটি ইটও
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা ছিল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে অত্যাধুনিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে প্রত্যন্ত এলাকায়। এই প্রতিশ্রুতি ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল ডেবরা। বছর ঘুরতেই স্বপ্ন চুরমার হওয়ার অবস্থা। কারণ, জমি-জট। আপাতত সেই জটেই থমকে ডেবরায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ।
গত বছর এপ্রিলে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন মমতা নিজে। তারপর থেকে একাধিক সভায় তাঁর সরকারের উন্নয়ন-খতিয়ান দিতে গিয়ে এই হাসপাতালের কথা উল্লেখ করেছেন মমতা। ইতিমধ্যে বছর ঘুরেছে। অথচ একটি ইটও গাঁথা হয়নি। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথমে যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন বলে মনে করা হয়েছিল, পরে দেখা যায় আরও বেশি পরিমাণ জমি লাগবে। এ দিকে, এক লপ্তে পর্যাপ্ত জমি মিলছে না। সেটাই সমস্যা।
সমস্যার কথা মানছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “জমি নিয়ে একটা সমস্যা আছে। এক লপ্তে পর্যাপ্ত জমি মিলছে না। অবশ্য বিকল্প ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে।” প্রায় একই বক্তব্য ডেবরার বিএমওএইচ রজত পালের। তাঁর কথায়, “জমি সমস্যার মিটলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। কারণ, আর তো কোনও সমস্যা নেই।”
সাধারণত, কোনও প্রকল্পের শিল্যানাসের আগেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। জমি চিহ্নিত করা হয়। তারপর শিলা পুঁতে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজের সূচনা হয়। এ ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। শুধু ডেবরা নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ৬টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ডেবরা বাদে বাকি ৫টি হাসপাতাল হবে ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, শালবনি, খড়্গপুর এবং গোপীবল্লভপুর। কোনওটির কাজই সেই গতিতে এগোয়নি। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রামে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোর প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। ডেবরায় প্রকল্পের জন্য প্রথমে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালের অদূরে একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেখানে জায়গা রয়েছে .৫ একরেরও কম। অথচ, পরিকল্পনা অনুযায়ী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি করতে জায়গা লাগবে ১.৫ একর। এখন আশপাশে এই পরিমাণ জমির খোঁজ চলছে।
শুধু ডেবরা নয়, সংলগ্ন সবং, পিংলা, খড়্গপুর গ্রামীণ, কেশপুর থেকেও বহু রোগী এখানে আসেন। ফলে, ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালের উপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে। এখানে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে ১৯৫৭ সালে। পরে তা গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয়। ২০০২ সালে তৈরি হয় নতুন ভবন। এখানেই রয়েছে মেল ওয়ার্ড, ফিমেল ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। তবে নতুন ভবনেও রোগীর স্থান সংকুলান হয় না। এই হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৪০ টি। অথচ রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ জন। বাধ্য হয়েই বহু রোগীকে মাটিতে রাখতে হয়। গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পর এই হাসপাতালকে ‘ফাস্ট রেফারেল ইউনিট’ বলেই চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য দফতর। ফলে, সবং-পিংলা থেকে কোনও রোগীকে ‘রেফার’ করলে প্রথমে এখানে পাঠাতে হয়। তবে, গ্রামীণ হাসপাতালের উপযুক্ত পরিকাঠামো এখানে নেই। ডাক্তার-নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সবই প্রয়োজনের তুলনায় কম। কেউ ছুটি নিলেই সমস্যা হয়।
হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, “এখানে যে সংখ্যক রোগী আসেন, তার একাংশ ডেবরার বাইরের। সে প্রসূতি হোক কিংবা সর্পদষ্ট। শয্যা সংখ্যা কম বলে সমস্যাও হয়।” এই সব সমস্যা সমাধানেই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পরিকল্পনা। কী কী থাকবে সেখানে? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ভবনটি হবে পাঁচতলা। সদ্যোজাত শিশুদের বিশেষ ইউনিট, মেডিসিন-সার্জারি সহ বিভিন্ন বিভাগের পৃথক ইউনিট থাকবে। একটি মহকুমা হাসপাতালে যে পরিষেবা মেলে, সে সবই পাওয়া যাবে এখানে। ডাক্তার-নার্স-কর্মীর সংখ্যা বাড়বে। নতুন মেশিনপত্র আসবে। কিন্তু কবে সে সব হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
প্রস্তাবিত এই হাসপাতাল নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। সিপিএমের ডেবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডলের কটাক্ষ, “বছর খানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী শিলান্যাস করেছিলেন। অথচ, এখনও কাজ শুরু হল না। সেই কবে থেকে শুনছি এখানে বড় হাসপাতাল হবে! কিন্তু কোথায় কী?” জবাবে তৃণমূলের ডেবরা ব্লক সভাপতি রতন দে বলেন, “সব কাজ তো আর এক- দু’মাসে হয় না। কিছু সময় লাগে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হবে!”

এখন রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতাল
• শয্যা সংখ্যা: ৪০
• রোগী ভর্তি থাকেন: গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ জন
• বহির্বিভাগে রোগী: গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ জন
• দিনে রোগী ভর্তি হন: গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন
আগামী পরিকল্পনা
• সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল
• পাঁচ তলা ভবন
• সদ্যোজাত শিশুদের জন্য বিশেষ ইউনিট
• মেডিসিন, সার্জারি-সহ বিভিন্ন বিভাগের পৃথক ইউনিট
• থাকবে অত্যাধুনিক মেশিনপত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.