সময়সীমা পেরিয়েছে সাত মাস আগে। কিন্তু ট্রমা সেন্টার নির্মাণের কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে। টাকা খরচের সরকারি নির্দেশিপত্র সময় মতো না আসার জন্যই কাজ পিছিয়েছে বলে আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে নির্দেশ সম্প্রতি এসে পড়ায় এ বার দ্রুত কাজ হবে বলে আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
আসানসোল হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার গড়ায় গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী ও পুরসভার কংগ্রেসের কয়েক জন মেয়র পারিষদ। হস্তক্ষেপ চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে আলাদা আলাদা ভাবে চিঠিও পাঠিয়েছেন সাংসদ ও ওই মেয়র পারিষদেরা।
আসানসোল হাসপাতালের এই ট্রমা সেন্টার গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে আর্থিক অনুমোদন দেয়। সেই সময়ে খরচ ধরা হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। অনুমোদনের কয়েক মাস পরেই ট্রমা সেন্টারের ব্যবহারের উপযোগী একটি উন্নত অ্যাম্বুল্যান্সও পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু তা হয়নি।
ইতিমধ্যে কাজের অগ্রগতি দেখতে বার কয়েক এই হাসপাতাল ঘুরে গিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ বার একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। চার সদস্যের এই দলে ছিলেন যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা কুসুম অধিকারী, রাজ্য ট্রমা কেয়ার সেন্টারের বিশেষজ্ঞ প্রদীপ মলহোত্র, স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম সচিব অজয় ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ট্রমা কেয়ার সেন্টারের আঞ্চলিক অধিকর্তা সত্যজিৎ সেন প্রমুখ। সেন্টারের কাজ দেখে বিশেষ খুশি হননি তাঁরা। কাজ আরও দ্রুত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেন্টারটি নির্মাণ না হওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সটিও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। খোলা আকাশের নীচে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেটি। |
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আগামী ছ’মাসের মধ্যেই সেন্টারটি তৈরি হয়ে যাবে বলে। কারণ, যে সমস্যার জন্য কাজ ঢিমেতালে হচ্ছিল তা মিটেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ট্রমা কেয়ার সেন্টারের ভবন গড়ছে পূর্ত দফতরের আসানসোল শাখা। প্রায় চার মাস ধরে ভবনের কিছু অংশ নির্মাণের জন্য আনুমানিক এক কোটি টাকা খরচের সরকারি নির্দেশপত্র পূর্ত দফতরের হাতে আসেনি। ফলে, টাকা খরচের ঝুঁকি নিতে পারছিলেন না ওই দফতরের আধিকারিকেরা। গত ৩ মে শেষ বার পূর্ত দফতর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই সরকারি নির্দেশ চেয়ে চিঠি পাঠান। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, চিঠি পেয়েই স্বাস্থ্য দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন তিনি। ফলস্বরূপ, গত ২ জুলাই স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক হয় সুপার নিখিলবাবুর। তাতেই সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয়। সুপার বলেন, “১১ জুলাই স্বাস্থ্য দফতর ওই টাকা খরচের নির্দেশপত্র পাঠিয়েছে। আমরা পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়েছি। এ বার দ্রুত কাজ এগোবে।” পূর্ত দফতরের আসানসোল শাখার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ রাকিব বলেন, “সরকারি নির্দেশপত্র পাওয়ার বিষয়ে সমস্যা মিটেছে। যত দ্রুত সম্ভব ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে।”
এখানেই অবশ্য সব সমস্যার শেষ নয়। ভবনের টাকা খরচের নির্দেশ পেলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কাজ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। সুপার নিখিলবাবু জানান, আধুনিক ভাবে গড়ে তোলা এই সেন্টারের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও উন্নত মানের তৈরি করা জরুরি। তাই সেন্টারের পাশে একটি সাবস্টেশন গড়া দরকার। সে জন্য মোটা টাকা প্রয়োজন। ভবনের ভিতরেও নিয়মমাফিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম লাগানো প্রয়োজন। নিখিলবাবু বলেন, “সাবস্টেশন তৈরি ও আধুনিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম লাগাতে ৭০ লক্ষ টাকা দরকার। সরকারের তরফে এই টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তা এলেই কাজ শুরু হবে।” তিনি আরও জানান, অর্থের সংস্থান হয়ে গেলেই যাতে দ্রুত কাজ করা যায় তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ এনে বিদ্যুতের কাজের ব্যাপারে খসড়া প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।
এখনকার মতো মিটলেও ভবিষ্যতে যে আবার সময় মতো টাকা না পাওয়ার সমস্যা দেখা দেবে না, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার নিখিলবাবু জানান, এ সবের পরে আরও ২৩ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তা পেতে এখন থেকে তদ্বির শুরু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারি নির্দেশপত্র পেতে সমস্যা না হওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাসও মিলেছে বলে জানান তিনি।
ট্রমা সেন্টারের কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “সময়সীমার সাত মাস পরেও কাজ শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীকে বিষয়টি জানিয়েছি।” কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক তথা আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামেরও অভিযোগ, “সেন্টার নির্মাণের কাজ পিছনোয় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছি।”
সব বাধা কাটিয়ে ট্রমা সেন্টারের কাজ কবে শেষ হয়, তাকিয়ে শিল্পাঞ্চলবাসী। |