বছরের পর বছর শ্রমিকদের ইএসআই-এর টাকা জমা দেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তার জেরেই উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে না-পেরে খড়দহের লুমটেক্স জুটমিলের এক অসুস্থ শ্রমিক ও এক শ্রমিক-পত্নীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার আরজিকর হাসপাতালে লালবাবু সিংহ নামে বছর পঁচিশের শ্রমিকের মৃত্যুর পরেই ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা লুমটেক্স জুটমিলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ভাঙচুর চলে। শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল, কারখানা কর্তৃপক্ষ ইএসআইয়ের টাকা জমা করেননি বলে নামী হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি। ফলে উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেলেন লালবাব। শুক্রবার অপর এক শ্রমিকের পত্নী রুকসানা বেগমের মৃত্যুতে ক্ষোভের আগুন আবার জ্বলে উঠেছে। সোমবারই শ্রমিকদের বিক্ষোভের জেরে কারখানা বন্ধ করে কার্যত পালিয়ে যান মালিকপক্ষের লোকজন। শ্রম দফতরের নির্দেশে মঙ্গলবার কারখানা খুললেও পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।
ইএসআই জমা না-পড়ার অভিযোগ এক রকম মেনেই নিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানার অন্যতম মালিক ঘনশ্যাম সারদা স্বীকার করেন, “ইএসআই, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির প্রচুর টাকা জমা পড়েনি এ কথা সত্যি।” কারখানার মালিকানা নিয়ে দাদা গোবিন্দ সারদার সঙ্গে তাঁর মামলা চলছে, তা-ও জানান ভাই ঘনশ্যাম। মালিকানার দ্বন্দ্বের কারণে কর্তৃপক্ষের পক্ষে শ্রমিকদের বকেয়া মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে।
কারখানার অন্যতম শ্রমিক সংগঠন সংগ্রামী মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি শর্মিষ্ঠা চৌধুরী বলেন, “শ্রমিকদের ৪০ কোটি টাকা বকেয়া। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্র্যাচুইটি দেওয়া হয় না। ইএসআই দেওয়া হচ্ছে না বহুদিন।”
শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, লুমটেক্স কারখানারই এক শ্রমিকের স্ত্রী রুকসানা গত সপ্তাহে সন্তানের জন্ম দিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীরের একদিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। তাঁকে মানিকতলা ইএসআই থেকে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “কাগজপত্র পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি, কারখানা কর্তৃপক্ষ পিএফের কোনও টাকাই জমা দেননি। এ দিকে ওই ভদ্রমহিলাকে বাঁচাতে কয়েক লক্ষ টাকা দামের ইঞ্জেকশন দরকার ছিল। ইএসআইয়ের টাকা ঠিকঠাক জমা পড়লে তার ব্যবস্থা করা যেত। টাকা না-থাকায় করা যায়নি।” সেখান থেকে রুকসানাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে। সেখান থেকে বুধবার যাদবপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রুকসানাকে। এ দিন সেখানেই মারা যান রুকসানা।
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এ ব্যাপারে বলেন, “কোনও কারখানা ইএসআইয়ের টাকা জমা দিচ্ছে কিনা সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়। ওটা ইএসআই কর্পোরেশন দেখবে। আমরা শুধু ইএসআই হাসপাতালের পরিষেবা দেখব।” ইএসআই-এর টাকা জমা না-পড়ার মতো বিষয়ের প্রতিকার না করার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকেই দায়ী করেন তিনি।
ইএসআই কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অধিকর্তা গোবিন্দচন্দ্র জেনা বলেন, “কোনও কারখানা দীর্ঘ দিন ইএসআই জমা দিচ্ছে না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনে মামলা দায়ের করি। লুমটেক্সের ব্যাপারে এই রকম কোনও অভিযোগ আসেনি।”
শর্মিষ্ঠা অবশ্য বলেন, “গত ছ’মাস ধরে আমরা নিউ সেক্রেটরিয়েটে ইএসআই কমিশনারের কাছে এ
বিষয়ে চিঠির পর চিঠি দিয়েছি। ১১টি মজদুর সংগঠন ইএসআই জমা না পড়ার কথা জানিয়ে সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়ে এসেছি। কিন্তু কেউ
কান দেননি।” |