নাটক সমালোচনা...
কৌতুক ও ব্যঙ্গরসে
আর্থ সমাজব্যবস্থায় টাকাই মানুষের মূল্য বিচার করে। আদালতের কেরানি অলৌকিক উপায়ে ধনী হয়ে যান। পরশপাথরের ছোঁয়ায় লোহা সোনা হয়, সোনার স্পর্শে পোষ মানে ধনী থেকে পুলিশ সকলেই। পরশুরামের ‘পরশপাথর’ নিয়ে রঙ্গলোকের কমিক নাটক (পরিচালনা: শ্যামল চক্রবর্তী) জমে ওঠে দু’টি স্তরে। হঠাৎ ধনী পরেশবাবুর স্ত্রী প্রতিবেশিনী থেকে প্রাক্তন মনিব পর্যন্ত সকলের উলটপুরাণ আচরণে আর তাঁর সোনা তৈরির রহস্য ঘিরে পুলিশ থেকে সংবাদমাধ্যম সব রকম সামাজিক প্রতিক্রিয়ায়। নাটক দেখে মনে আসতে পারে সত্যজিতের ছবি। বিশেষ কারণ ফিল্মের পরেশ দত্তের সঙ্গে মঞ্চের নায়কের সাদৃশ্য। কিন্তু এই সাদৃশ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তীর্থঙ্কর চন্দের নাট্যরূপ মূল গল্পের বিশ্বস্ত অনুগামী কিন্তু মঞ্চে কৌতুক আর ব্যঙ্গরস দানা বেঁধেছে কিছু দৃশ্য, চরিত্র ও ঘটনার সংযোজনে। নাটকে বিশেষ সংযোজন বিবেকের মতো এক চরিত্র (সঞ্জয় চক্রবর্তী), যে নানা দৃশ্যেই পরেশবাবুকে বিব্রত করে। ৫০ পরশপাথরের মতো চরিত্রটিও অলৌকিক, কিন্তু নাটকের স্থায়ী ভাব ব্যঙ্গ কৌতুকের সঙ্গে, তেল-জলের মতো মেশেনি। অনেক সময় দর্শকই ধন্দে পড়েন নাটকে তার ভূমিকা নিয়ে। কারণ, গৌতম সাধুখাঁর চমৎকার অভিনয়ে পরেশ দত্ত এক সরল নির্দোষ ভালোমানুষ, তাঁর অলৌকিক ধনার্জনে কোনও অসাধুতার ভূমিকা নেই। কৌতুকরসের অন্যতম উৎস শিপ্রা দত্তের গিরিবালা, অপর্ণা বিশ্বাসের মাসিমা। অন্যান্য ভূমিকায় সঞ্জয় চক্রবর্তী, সোনালী চট্টোপাধ্যায় ও কিঞ্জল নন্দ।

জীবনের গভীরেও অন্য জীবন
নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব। যৌথ পরিবার খানখান। ব্যক্তিসত্তা অস্তিত্বর সংকটে। মাঙ্গলিকের নতুন প্রযোজনা ‘অ-পরিচয়’। নাটকটির রচয়িতা সমীর বিশ্বাস। নাটকটি মূলত ব্যঙ্গাত্মক এবং রসাত্মক হাসির ছলে অনেক গভীর কথা বলে। গঙ্গাধর চট্টোপাধ্যায় বিত্তবান। স্ত্রী পামেলা কন্যা সৌমিত্রিকাকে নিয়ে তাঁর সংসার। তবুও গঙ্গাধরবাবুর একাকীত্বের সূত্রপাত। হাইটেক যুগের তালে পা মিলিয়ে চলা পামেলার ও সৌমিত্রিকার সঙ্গে গঙ্গাধর বাবুর মনের বিস্তর ফারাক। সহযোগী সহমর্মী সহানুভূতিপ্রবণ গঙ্গাধরবাবু কাগজে বিজ্ঞাপন দেন অনাথ দত্তক চাই। স্ত্রী-কন্যার ঘোর আপত্তিতেও তিনি তাঁর সিদ্ধান্ততে থাকেন অনড়। বেকারত্বের শিকার বহু যুবকের মধ্যে থেকে শান্ত, সৌম্য এক যুবক গঙ্গাধরবাবুর হৃদয় স্পর্শ করতে সক্ষম হয় এবং থেকে যায় গঙ্গাধরবাবুর বাড়ির ছেলে হয়ে। এর পরই নাটকটি অন্য দিকে মোড় নেয়। নাটকে সব চরিত্রই মানানসই। সমীর বিশ্বাসের অভিনয় নাটকটির বড় সম্পদ। নজর কাড়েন সৌম্য বিশ্বাস, শতাব্দী বসু, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়। সঞ্চয়িতা চৌধুরী একটু আড়ষ্ট।

যখন বিনোদিনী পেয়েছিল নতুন জীবন
সম্প্রতি শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ‘কহন’ প্রযোজিত শ্রুতিনাটক ‘আমি বিনোদিনী দাসী’। শুরুতে নাজমুল হক ‘দেহ তরী দিলাম ছাড়িয়া’ এবং ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা’ লোকসঙ্গীত দু’টি পরিবেশন করেন। তারপর মঞ্চস্থ হল শ্রুতিনাটক ‘আমি বিনোদিনী দাসী’। অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহ তাঁকে নিয়ে আসে বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশ ঘোষের কাছে। তাঁর সাহচর্যে বিনোদিনী যেন খুঁজে পায় এক নতুন জীবন। ক্রমে ক্রমে তার জীবনে আসে রাঙাবাবু, গুর্মুখ রায়ের মতো মানুষেরা। কিন্তু বিনোদিনী যাবতীয় প্রলোভন উপেক্ষা করে তার জীবনের একমাত্র ব্রত করেছিলেন থিয়েটারকেই। শ্রীরামকৃষ্ণের ভূমিকায় জগন্নাথ বসুর প্রাণবন্ত অভিনয় ভাল লাগে। নটী বিনোদিনীর ভূমিকায় চিত্রলেখা সেনের মর্মস্পর্শী অভিনয় শ্রোতাদের বাকরুদ্ধ করে। গিরিশ ঘোষের ভূমিকায় শঙ্কর রায়চৌধুরী যথাযথ। চন্দন মজুমদার ও অমিতাভ চৌধুরীর অভিনয়ে আরও কিছুটা সাবলীলতা কাম্য ছিল। রাখালের গানে প্রলয় সেনগুপ্তের কণ্ঠে ‘জুড়াইতে চাই কোথা জুড়াই’ গানটি বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ভাল লাগে কণিষ্ক সেনের অভিনব মঞ্চ পরিকল্পনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.