ভোটের লাইনে অশান্তি, মৃত্যু জওয়ানের গুলিতে
কাল থেকে নানা প্রান্তে ছোটখাটো গোলমালের অভিযোগ উঠছিল। শুক্রবার ভোট চলাকালীন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রাণ হারালেন তিন জন। দু’জনকে খুন করা হল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে এক এসইউসি সমর্থক মারা যান। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি।
জয়নগর-২ ব্লকের মায়াহাউড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত দারা হাইস্কুল বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অমল হালদার (৩২) নামে ওই এসইউসি সমর্থক। সেখানেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে তিনি মারা যান। তাঁর বাড়ি দারা গ্রামে।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বুথে ভোটার ছিল ১১৩৮ জন। রাত আটটা পর্যন্ত ৫২৫ জন ভোট দিতে পারেন। ভোট নিতে দেরি হওয়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররা বিক্ষোভ শুরু করেন। ভোটকর্মীদের উপর চড়াও হন গ্রামবাসীরা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। তারপরই ওই বুথে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা লাঠি চালাতে থাকেন। কিছু গ্রামবাসী জওয়ানদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তখনই গুলি চলে। অমলবাবুর মাথায় গুলি লাগে বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। গুরুতর জখম অবস্থায় অমলবাবুকে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। আপাতত ওই বুথে ভোট-পর্ব স্থগিত রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা পুলিশের এককর্তা বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এক জওয়ান গুলি চালায় বলে শোনা গিয়েছে। তাতে এক জন মারা গিয়েছেন।”
জয়নগরের এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর বলেন, “দীর্ঘক্ষণ ভোট দিতে না পেরে মানুষ অধৈর্য হয়ে পড়েন। তার পর লাঠি চালিয়ে জওয়ানরা অমানবিক আচরণ করেছে। এরপর গুলি চালানো হয়েছে। অমলবাবু আমাদের সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। আমরা সকাল থেকে ওই বুথে অতিরিক্ত ভোটকর্মীর জন্য আবেদন করেছিলাম। প্রশাসন কথা শোনেনি।” সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অমানবিক আচরণ। ভোট দিতে চাওয়ায় গুলি চালানো হয়েছে। উচ্চ-পর্যায়ে তদন্ত করার প্রয়োজন রয়েছে।”
বারুইপুরের মহকুমাশাসক পার্থ ওঝা বলেন, “দুপুরে ওই কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোটকর্মী পাঠানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন দেরি হচ্ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “কী পরিস্থিতি ওই ঘটনা ঘটেছে তা ম্যাজিষ্ট্রেট পর্যায়ে তদন্ত করে দেখা হবে।”
অন্য দিকে, উস্তির লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে ভোটকেন্দ্রের কাছেই গুলিতে সনৎ ঘোষ (৪৫) নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। তাঁর বাড়ি ওই গ্রামেই। সিপিএমের লোকজনই তাঁকে খুন করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সিপিএম অভিযোগ মানেনি।
বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ দলীয় কর্মীদের জন্য বাড়ি থেকে ভাত নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই তৃণমূল কর্মী। সেই সময়েই তাঁর উপরে হামলা হয়। গুলি চালানোর সময়ে বোমাবাজিও হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই মারা যান সনৎবাবু। সেখান থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরে লক্ষ্মীকান্তপুর ১৭২ নম্বর বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং সশস্ত্র রাজ্য পুলিশও। গ্রামে অবশ্য পুলিশি টহল ছিল না। ওই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কী পরিস্থিতিতে ওই ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করা হচ্ছে।”
নিহতের স্ত্রী অপর্ণা বলেন, “আমরা তৃণমূল সমর্থক। কয়েক দিন ধরেই স্বামীকে সিপিএমের লোকেরা খুনের হুমকি দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মেরেই ফেলল।” মগরাহাটের তৃণমূল বিধায়ক তথা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, “পরাজয়ের আশঙ্কায় সিপিএম আমাদের নিরীহ কর্মীকে খুন করতে পিছপা হয়েনি।” অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সিপিএমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করুক। তারপরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।” উস্তির লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরকে পিটিয়ে মেরে দেহটি পুকুরে দেওয়ার অভিযোগে তার পড়শি এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.