পঞ্চায়েত ভোটে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে নতুন মুখের উপর ভরসা রাখছে সিপিএম। মায়াপুর-বামুনপুকুর ১ ও ২ নং পঞ্চায়েত মিলিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮টি আসনের মধ্যে ২২টিতেই নতুন মুখ। অন্য দিকে দুটি পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সমিতির ৬টি আসনের ৫টিতেই নতুন মুখ। জেলা পরিষদের ২টি আসনের ১টিতে নতুন মুখ এনেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
২০০৮-এর নির্বাচনে এক কালের শত্রুঘাঁটি মায়াপুরের ২টি পঞ্চায়েতে ভরাডুবি হয়েছিল সিপিএমের। মায়াপুর-বামুনপুকুর ১নং পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ৩টি আসন। তৃণমূল পেয়েছিল ৯টি, বিজেপি ১টি। মায়াপুর-বামুনপুকুর ২নং পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ৫টি, তৃণমূল ৪টি ও বিজেপি ১টি আসন পেয়েছিল। এ বার তাই প্রথম থেকেই উঠে পড়ে লেগেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
রাজ্য জুড়ে যখন প্রবল তৃণমূল হাওয়া, তখন একঝাঁক আনকোরা মুখ কেন বেছে নেওয়া হল নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে?
উত্তরে সিপিএমের স্থানীয় নেতা এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী সুশীল ঘোষ বলেন, “নতুন প্রজন্মকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাদের আগামী দিনের নেতৃত্বের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য। তা ছাড়া সংরক্ষণের ব্যাপার আছে। মহিলা, অনগ্রসর শ্রেণির প্রার্থী সব মিলিয়েই এত নতুন মুখ আনা হয়েছে।”
মায়াপুরের সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক আমিন আলি বলেন, “রাজ্যে পরিবর্তনের পর যা চলছে তার ভুক্তভোগী তো এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। তাই কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর বয়স্ক প্রার্থীদের উপর জোর দিয়েছি। ওরা খুব ভাল ফল করবে।”
নবীন-প্রবীণের এই জোট নিয়ে অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন বিরোধীরা।
তৃণমূলের মায়াপুর ১নং পঞ্চায়েতের সভাপতি সুনীল ঘোষ বলেন, “দুর্নীতি-স্বজনপোষণে জর্জরিত সিপিএম নেতাদের মানুষ বহু আগেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বার তাই নতুন মুখ খুঁজে আনতে হয়েছে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী করেছে সিপিএম।” তিনি আরও বলেন, “সিপিএমের যে সব ভাল লোক ছিলেন তাঁরা সব দল থেকে সরে গিয়েছেন। তাই সব নতুন প্রার্থী করতে বাধ্য হয়েছে।”
চরকাষ্ঠশালী অঞ্চলে প্রার্থী হয়েছেন নিজারুল শেখ। তিনি বলেন, “আমাদের মতো বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য এ রাজ্যে কোনও পথ খোলা নেই। যদি নতুন কোনও পথের সন্ধান মেলে তাই নির্বাচনে লড়ছি।” আবার ২৫ বছরের সান্ত্বনা ঘোষ ইদ্রাকপুর থেকে লড়ছেন। এই প্রথমবার। বললেন, “পাঁচটা বছর তো দেখলাম, কিছুই তো পেল না গ্রামের মানুষ। সিপিএমের পতাকা নিয়ে ময়দানে নেমে দেখি।” এই ভাবেই রেখা বিবি, বীণা সরকার, কাজল শেখ প্রমুখ নিরঞ্জননগর, কামালদিঘি, নির্দয়া থেকে প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন। সবাই জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত।
নতুন মুখ নিয়ে সিপিএমের এই পরীক্ষা কত দূর সফল হয়, তা জানার জন্য ২৯ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। |