পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে কংগ্রেস-তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর সপ্তমে চড়াচ্ছে। তৃণমূলনেত্রী গেল বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা ভুল হয়েছিল বলে বিভিন্ন সভায় ক্রমাগত বলে বেড়াচ্ছেন। কংগ্রেস নেতারাও বিনা যুদ্ধে শাসকদলকে এক সূচ পরিমান মাটি ছাড়তে নারাজ। দু’দলের এই অহি-নকুল সম্পর্কের মাঝেই মুর্শিদাবাদের জায়গায় জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে উভয় দল জোটবদ্ধভাবে লড়ছে।
কান্দির ভরতপুর-১ ব্লকের আমলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জোট করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। বাকি আসনগুলিতে অবশ্য ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে। ওই পঞ্চায়েতের লোহাদহ গ্রামে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে। কংগ্রেস সেখানে প্রার্থী দেয়নি। একইভাবে জোরগাছিতে দু’টি আসন কংগ্রেস-তৃণমূল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। গৌরীনগর ও নারায়নপুরে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূল সেখানে লড়াইয়ে নেই। একইভাবে ভালুইপাড়ায় কংগ্রেসের সমর্থনে তৃণমূল প্রার্থী লড়ছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস ও তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা দু’দলেরই পতাকা কাধে নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। একই দেওয়ালে দু’দলেরই প্রতীক শোভা পাচ্ছে। সেখানে ভোটারদের আবেদন করে লেখা রয়েছে, “জোট প্রার্থীদের জয়ী করুন।” দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে এই জোট নিয়ে গ্রামের দু’দলের নেতারাই ভাবিত নন। লোহাদহ গ্রামের কংগ্রেস নেতা দেবব্রত পান্ডে ও তৃণমূলের অনন্ত ঘোষ এক সুরে সাফ জানালেন, “সিপিএমকে উৎখাত করার জন্য আমরা এক সাথে লড়ছি। বামবিরোধীদের দাবি মেনেই এই জোট।” উভয় দলেরই ব্লক নেতৃত্ব অবশ্য জোটের কথা স্বীকারই করছে না। কংগ্রেসের ভরতপুর ব্লকের সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই আসনগুলিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের না জানিয়েই তারা প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।” অন্যদিকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সৈয়দ রফিকুল হাসানের সাফ কথা, “কোনও জোট হয়নি।” |
|
|
হাত-ফুল এক জোট। গৌতম প্রামাণিক ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
|
অন্যদিকে বেলডাঙা-১ ব্লকের মাড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেদের হারাতে দুটি আসনে একে অপরের হাত ধরেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। ওই পঞ্চায়েতের ১ ও ২ নম্বর সংসদে দু’দল জোট বেধেছে। একই দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে কংগ্রেস-তৃণমূলের প্রতীক ও প্রার্থীর নাম। জোটপ্রার্থীদের জেতানোর আবেদন করা হয়েছে দেওয়াল লিখনগুলিতে। ১ নম্বর আসনে সিপিএমের সাকিলা বিবির বিরুদ্ধে লড়াই করছে কংগ্রেসের সাইদা বিবি। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দেয়নি। আবার ২ নম্বর সংসদে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূলের আব্দুল রহিম। কংগ্রেস তাঁকে সমর্থন যোগাচ্ছে। সিপিএমের বেলডাঙা-৩ লোকাল কমিটির সম্পাদক শাজাহান আলি অবশ্য জানান, কেবল ওই দু’টি আসনেই নয়, অন্যান্য আসনেও বামেদের হারাতে একত্রে লড়াই করছে তৃণমূল-কংগ্রেস। তাঁর কথায়, “১০ নম্বর সংসদে কংগ্রেসের বিদায়ী প্রধান লুৎফা বিবিকে জেতাতে তৃণমূল কোনও প্রার্থী দেয়নি। অন্যান্য আসনেও আমাদের হারাতে তারা তলে তলে হাত মেলাচ্ছে।”
উভয় দলেরই উচ্চ নেতৃত্ব জোটের বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছে। রেজিনগরের বিধায়ক কংগ্রেসের রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, “সকলকে প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্নই ওঠে না। স্থানীয় স্তরে কী হয়েছে তা খোঁজ নিচ্ছি।” তৃণমূলের বেলডাঙা-১ ব্লক সভাপতি সানাউল্লা শেখের বক্তব্য, “কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়নি। কেউ বলে থাকলে তারাই তার জবাব দেবে।” তবে দু’দলেরই তৃণমূলের স্তরের নেতারা খোলাখুলি জানাচ্ছেন, সাধারণ শত্রু সিপিএমকে মোকাবিলা করার জন্য তাঁরা জোট করেছেন। |