মৃত্যুর বছর খানেক পরও একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে মাটি কেটে সরকারি কোষগার থেকে মজুরি আদায় করছেন এক ব্যক্তি! দুর্নীতির এমন অভিযোগ উঠেছে রেজিনগর ২ নম্বর ব্লকের সোমপাড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আরও রয়েছে। ওই ব্লকের কেন্দ্রীয় রেশম গবেষণাগারের এক কর্মীও একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মজুর খেটে মজুরি আদায় করেছেন। ওই পঞ্চায়েত থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো রিপোর্টেই ওই দাবি করা হয়েছে। রেশম গবেষণাগারে ওই কর্মীর নামে ফের পৃথক দু’টি জবকার্ড রয়েছে। কেন্দ্রে পাঠানো রিপোর্ট অনুসারে ওই প্রকল্পে কাজ করার ফলে বিভিন্ন জনকে যে পরিমাণ মজুরি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি, সেই হিসাবের সঙ্গে মিল নেই স্থানীয় দোপুকুরিয়া পোস্ট অফিস থেকে মজুরদের মেটানো টাকার পরিমাণের সঙ্গে। পোস্ট অফিস থেকে মজুরদের মেটানো টাকার পরিমাণের থেকে বেশি মজুরি দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে কেন্দ্রে পাঠানো রিপোর্টে।
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের নেত্রী শাহনাজ বেগমের অভিযোগ, “ওই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩৯০০টি জব কার্ড রয়েছে। তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ভাবে গোঁজামিল দিয়ে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কয়েক লক্ষ টাকা নয়ছয় করেছেন সোমপাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা। তার প্রতিকার চেয়ে ওই ব্লকের বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।” ওই পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সিপিএমের নীলিমা মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “যাঁরা কাজ করেছেন, কেবল তাঁদের নামের তালিকা মেনেই আমরা মাস্টার রোল তৈরি করেছি। সেই তালিকা অনুসারে পারিশ্রমিক মেটানো হয়েছে। তাতে কোনও দুর্নীতি নেই। ওই মৃত ব্যক্তি, কিংবা রেশম গবেষণাগারের কর্মীর নাম নেই মাস্টার রোলে।” তবে ইন্টারনেট মারফৎ কেন্দ্রের কাছে পাঠানো রিপোর্ট এবং মাস্টার রোলে কেন ওই মৃত ব্যক্তি ও রেশম গবেষণাগারের কর্মীদের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে দেখান হয়েছে? এমনকি ওই কাজের মজুরিও তাঁদের মেটানো হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে কেন?
নীলিমাদবীর সাফাই, “তার জন্য পঞ্চায়েত দায়ী নয়। যাঁরা কম্পিউটারে কাজ করেছেন তাঁরা, অথবা ইন্টারনেট দায়ী। আমার নই।’’ তাঁরা তো পঞ্চায়েতেরই কর্মী এবং পঞ্চায়েত প্রধানের অনুমতি ছাড়া তাঁরা নিজেরা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য মনাগড়া রিপোর্ট তৈরি করবেন কেন? এ বার অবশ্য বিদায়ী প্রধানের কাছ থেকে যুক্তিগ্রাহ্য কোনও জবাব মেলেনি।
রেজিনগর ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের ১০০ দিনের কাজ নিয়ে ওই সব অভিযোগ ওঠেছে। সেই অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তদন্ত শেষ করা যায়নি। তদন্ত শেষ হলে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তখন পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের নথি অনুসারে স্থানীয় পাঁচকেঠে গ্রামের ত্রিদিব মণ্ডল মারা গিয়েছেন ২০১১ সালে ১৫ জুলাই। ওই পঞ্চায়েতেরই ১০০ দিনের কাজের রিপোর্ট অনুসারে মৃত্যুর দু’বছর পরে ২০১২ সালের মার্চ মাসে কাজ করে তিনি মজুরিও পেয়ে গিয়েছেন! তাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, “আমার বাবা মারা গিয়েছেন দু’বছর আগে। মৃত্যুর পরে তিনি কী ভাবে কাজ করবেন ও কী ভাবে মজুরি নেবেন, তা আমাদের মাথায় ঢুকছে না। ওই কাজের সুপারভাইজার ছিলেন গ্রামেরই বীরাচরণ মণ্ডলের ছেলে।” বীরাচরণ মণ্ডলই কেন্দ্রীয় রেশম গবেষণাগারের কর্মী। তাঁর নামেই রয়েছে পৃথক দু’টি জবকার্ড। বীরাচরণবাবু বলেন, “আমি ২৫-৩০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। আমি কেন ১০০ দিনের কাজ করতে যাব?” ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য মিলবে mgnrega নামের ওয়েবসাইটে। ওই ওয়েবসাইট কিন্তু বলছে, কেবল কাজ করাই নয়, সেই কাজের মজুরিও দু’টি পৃথক জবকার্ডের মালিক বীরাচরণবাবুকে ইতিমধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। |