|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
মাতৃসদন |
আশঙ্কার ভবিষ্যৎ
প্রসেনজিৎ পাঠক |
কেনা পড়ে রয়েছে সমস্ত সাজসরঞ্জাম। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে এখনও চালু করা যাচ্ছে না পানিহাটি পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদনের অন্তর্বিভাগ। ফলে প্যাকেট-বন্দি হয়ে নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন ‘সুডা’ (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) এ ধরনের ‘কিওরেটিভ’ প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে না। আর পুরসভার নির্ধারিত স্বল্প বেতন কাঠামোয় কোনও চিকিৎসক বা নার্স কাজ করতে চাইছেন না। তাই পানিহাটি পুরসভার ইএসওপিডি (এক্সটেন্ডেড স্পেশালিস্ট আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট) সেন্টারের স্ত্রী-রোগ অন্তর্বিভাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। |
|
১৯৯৮-এর ৪ এপ্রিল পানিহাটি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ কলোনিতে পুর-উদ্যোগে নির্মিত ইএসওপিডি-র বহির্বিভাগটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। নিউ কলোনি কমিটির দেওয়া প্রায় আট কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা ওই বহির্বিভাগে নাক-কান-গলা, শিশু, গাইনি, চক্ষু, চর্ম, দাঁত ও জেনারেল মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ১০ টাকা ও ৩০ টাকার টিকিটে রোগী দেখা শুরু করেন। পুরসভার পক্ষ থেকে কিছু ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থাও
চালু হয়।
পরে পানিহাটি পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, সোদপুর রোডে যে পানিহাটি মাতৃসদন চালু রয়েছে তার পরিপূরক হিসেবে এই কেন্দ্রের দোতলায় স্ত্রীরোগের চিকিৎসার জন্য অন্তর্বিভাগ চালু করা হবে। সেই মতো কেন্দ্রের দোতলা তৈরি করা হয়। কেনা হয় রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার জন্য প্রয়োজনীয় বহুমূল্য চিকিৎসা সামগ্রী। যার মধ্যে রয়েছে বয়েলস অ্যাপারেটাস, অপারেশন থিয়েটারের জন্য বিশেষ ধরনের আলো, ২৫টি শয্যা, স্টেরিলাইজার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ট্রলি, ফ্রিজ, ইমার্জেন্সি লাইট, বিছানা, তোষক, পর্দা ইত্যাদি। তৈরি হয় লেবার রুম, অপারেশন থিয়েটার ও
অন্যান্য কক্ষ। |
|
কিন্তু অন্তর্বিভাগের জন্য সব ব্যবস্থা থাকলেও চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সুডা যেহেতু ‘প্রিভেন্টিভ’ কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে, তাই অন্তর্বিভাগে ভর্তি রেখে ‘কিওরেটিভ’ কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সাহায্য করতে তারা বাধ্য নয়। ফলে অন্তর্বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগের যাবতীয় দায় নিতে হয়েছে পুরসভাকেই। বহির্বিভাগের ৭টি বিভাগে নিযুক্ত ১০ জন চিকিৎসক মাসে ৩৬০০ টাকা করে বেতন পান। অন্তর্বিভাগে নিযুক্ত চিকিৎসক এবং আরএমও-দের জন্য পুরসভা-কর্তৃক বরাদ্দ মাসিক বেতন ১৫০০০ টাকা। কিন্তু এই স্বল্প বেতনে কোনও চিকিৎসক কাজ করতে চাইছেন না বলে পুরসভা সূত্রে খবর। বেতন কাঠামোর জন্যই পাওয়া যাচ্ছে না প্রশিক্ষিত নার্সও।
পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ রায় বলেন, “চিকিৎসক ও নার্স পেলে এখনই অন্তর্বিভাগ চালু করা যায়। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না বলে চিকিৎসা সামগ্রী পড়ে থেকে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অনেক চিকিৎসা সামগ্রী ৫-৬ বছর ধরে পড়ে আছে। প্যাকিং খুলে রাখলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই কেনার পর থেকে এখনও প্যাকিং খোলা হয়নি। মানবসম্পদ নিয়োগের খরচ সুডা-র তহবিল থেকে পাওয়া যাবে না। |
|
আর সময়োপযোগী বেতনের সমস্ত ব্যয় পুর তহবিল থেকেও বহন করা সম্ভব নয়। তাই অন্তর্বিভাগটি চালু
করা যায়নি।”
পুরপ্রধান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলেন, “কর্মী নিয়োগ করলে পুরসভাকেই বেতন দিতে হবে। কিন্তু পুরসভার সামান্য সামর্থ্যে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্স পাওয়া যাচ্ছে না। ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করতে কোনও চিকিৎসকই রাজি হচ্ছেন না। বহির্বিভাগে নামমাত্র বেতনে চিকিৎসকেরা রোগী দেখছেন। দেখছি, অন্তর্বিভাগটি কী ভাবে চালু করা যায়।” পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ |
ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|