পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
প্রদীপের নীচে
বঞ্চনার সাতকাহন
শিলান্যাসের পরে পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ ন’বছর। কিন্তু আবাসন তৈরি হয়নি। হয়েছে নামমাত্র দু’টি ছোট ভবন। পর্যাপ্ত পানীয় জল, শৌচাগারের ব্যবস্থাও হয়নি। বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে নিকাশি জল গিয়ে প্রধান নর্দমায় পড়ার জন্য শাখা নর্দমাও নেই। সব মিলিয়ে ঘিঞ্জি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটছে বারাসতের আদিবাসী পল্লির বাসিন্দাদের। অথচ, এই পল্লি বারাসত পুরসভা ভবনের ঠিক পিছনেই।
৬০টি পরিবার নিয়ে এই আদিবাসী পাড়া। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরেই পাড়াটি পুরসভার বঞ্চনার শিকার। পানীয় জল, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার কোনওটাই তাঁরা পাননি। এলাকায় জলসংযোগ বলতে পুরসভার মাত্র পাঁচটি জলের কল এবং চারটি গভীর নলকূপ।
ফলে পানীয় জল নিতে বাসিন্দাদের দীর্ঘ লাইন দিতে হয়। তাঁদের বক্তব্য, এর মধ্যে মাত্র একটি নলকূপের জল খাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাকি তিনটি নলকূপের জলে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকায় তা খাওয়া যায় না। আবার, পুরসভার কলের জলে প্রায়ই ময়লা পাওয়া যায়।
এলাকার মূল বড় নর্দমাটি খোলা। প্রতিটি বাড়ি থেকে ময়লা জল বড় নর্দমায় পড়ার জন্য কোনও শাখা নর্দমা নেই। শাখা নর্দমা না থাকায় বাড়িতে ব্যবহারের জল রাস্তায় ছড়িয়ে যায়। অভিযোগ, বাসিন্দাদের সংখ্যার নিরিখে ওই পাড়ায় শৌচাগারের সংখ্যাও কম। এমনকী, মহিলাদের জন্য আলাদা শৌচাগার বা স্নানাগারও নেই।
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, আবাসন প্রকল্প শিলান্যাসে আটকে না থেকে বাস্তবায়িত হলে এই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দারই দিন গুজরান হয় দিনমজুরি করে। সরকারি খতিয়ানেও তাঁরা আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া। ওই এলাকার বাড়িগুলি বাঁশ-মাটির বা ইটের খোলা দিয়ে তৈরি। অধিকাংশ বাসিন্দারই সেই বাড়ি মেরামত করার সামর্থ্য নেই। তাঁরা আজও অপেক্ষায় আছেন কবে আবাসন তৈরি হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুরজ খালপো বললেন, “আবাসন তৈরি হলে পাকা ঘরের সঙ্গে জলসংযোগ, শৌচাগার ও নিকাশি সমস্যা দূর হবে। প্রাথমিক ভাবে দু’টি ছোট ভবন তৈরি হয়েছে। সেখানে ১৮টি পরিবার বসবাস করছে। আগে সকলের জন্য আবাসন তৈরি করা হোক।”
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলে দু’টি ভবন তৈরি করলেও ঘরগুলি এত ছোট যে বাস করার অযোগ্য। বহু আদিবাসী বাসিন্দা ওই ঘর নিতেই রাজি হননি। আমরা ইতিমধ্যেই রাজীব আবাস যোজনা প্রকল্পে সকলের জন্য বড় বাড়ি তৈরির পাইলট প্ল্যান জমা দিয়েছি। তখন একেবারে শৌচাগার, নিকাশি নর্দমা তৈরি করা হবে। পানীয় জলের সমস্যারও সমাধান করা হবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.