নির্বাচনী প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী কখনও স্মৃতি হাতড়িয়ে নিজের ছোট বেলার কথা মনে করলেন, কখনও বা জেলার উন্নয়নের কথা বললেন সবার সামনে। আশ্বাসও দিলেন কিছুটা।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম সভা করেন রামপুরহাট হাইস্কুলের মাঠে। তিনি বলেন, “রাজ্যে হচ্ছে চারটি মেডিক্যাল কলেজ। তার মধ্যে রামপুরহাট পাচ্ছে একটি।” এ ছাড়াও, রামপুরহাট পুরসভা এবং তারাপীঠের আরও উন্নয়নের আশ্বাস দিলেন তিনি। এ দিন রামপুরহাটে মঞ্চে উঠতেই তাঁর দিকে মাইক্রোফোন বাড়িয়ে দিলেন দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রতবাবু ও আশিসবাবুর নাম করলেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে মঞ্চে থাকা তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান পর্ব এবং গান চলাকালীনই অনুব্রত মণ্ডলকে আর দেখতে পাওয়া যাইনি। তখন থেকেই তিনি বেপাত্তা।
এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বক্তব্য রাখে আর একটি প্রচার সভা দুবরাজপুরের দিকে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ের বক্তব্যে উঠে এসেছে মাওবাদী প্রসঙ্গ, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও বিজেপির কথা। মাওবাদীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কিসের মাওবাদ? তুমি আদর্শ নিয়ে লড়াই কর, তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলার গ্রামে গুন্ডা তৈরি করার তোমার কোন অধিকার নেই। মনে রাখবেন, ঝাড়খণ্ড থেকে এসে বাংলায় গুন্ডাগিরি করে, টাকা তুলে, গরিব লোকের বন্ধু সেজে, মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে, এটা বাংলায় চলতে পারে না।” আবার কংগ্রেস, বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “পশ্চিম বাংলায় বিজেপির কোন অস্তিত্ব নেই। ৩৫ বছর পর বাংলায় পরিবর্তন হয়েছে। কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে বাস্তবে কোনও ঝগড়া নেই।” সিপিএমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “তোমরা সিঙ্গুরে তাপসি মালিক, নেতাই-এ খুন, নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনে খুন খুন করে কি বিচার দিয়েছ?” |
বিরল
রামপুরহাটে মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওঠার আগে
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে হাত অনুব্রত মণ্ডলের। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম। |
এই সব কথা বলার ফাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী রামপুরহাটের দলীয় পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি এবং বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে ডেকে নিয়ে বলেন, “রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় আমি দেখলাম। অনেকে রাস্তার ধারে মাটির ঘরে বাস করছেন।” এঁদেরকে ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পের সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রামপুরহাট পুরএলাকা-সহ তারাপীঠের সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তাঘাট, আলো এবং রাস্তার ধারে আরো বেশি করে গাছ লাগানোর জন্য নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ববি হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
রামপুরহাটের পরে দুবরাজপুর সারদা ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি ও মাওবাদীদের উদ্দেশ্যে প্রায় একই কথা বলেন। এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এত মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। সাধ্যমতো উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ যে এতো মানুষ এসেছেন তাঁরা কী সন্ত্রাস করে এসেছেন? সিমিএম ক্ষমতায় নেই বলে সন্ত্রাসের কথা বলছে।” দুবরাজপুরে প্রায় ১ ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রীকে বৃহস্পতিবার রাতে তারাপীঠের একটি লজে থাকার ব্যাবস্থা করতে যথেষ্ট হয়রান হতে হয় প্রশাসনকে। মুখ্যমন্ত্রীর হঠাত মামাবাড়ি আসার সিদ্ধান্ত, তারাপীঠে পুজো দেওয়া এবং তারাপীঠে থাকার চটজলদি সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে তারাপীঠে পুজো দেওয়ার। মা না ডাকলে কি তারাপীঠ আসতে পারতাম।” পুজোও দিলেন। সেই সঙ্গে মামার বাড়ি কুশুম্বা থেকে আসা মামির পাঠানো ছোলা সেদ্ধ, কাচকলার বড়া আর মুড়িও খেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন রামপুরহাটের তৈরি প্রচুর রাজভোগ এবং বারো বছর আগে ফেলে আসা মামার বাড়ির সুখস্মৃতি। |