তৃণমূলের নেতা কর্মীরা তো বটেই, ঘাস ফুলের প্রতীকে দাঁড়ানো প্রার্থীর জন্য বাড়ি বাড়ি ভোট ভিক্ষা করছেন খোদ ‘সিপিএম’ও। কোনও বোমা বন্ধুকের মুখে প্রাণ সংশয় নয়। নয় কোনও লিখিত-অলিখিত জোটের শর্তেও। কিছুটা অবিশ্বাস্য হলেও ময়ূরেশ্বরের ঢেকা পঞ্চায়েত এলাকার গিধিলা সংসদে এমনই চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই তৃণমূল প্রার্থীকে জেতাতে উঠে পড়ে লেগেছে ‘সিপিএম’। তবে এই সিপিএম অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দল নয়। বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। ঘটনাচক্রে এ বার গিধিলা সংসদে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তাঁর স্ত্রী চিন্তারানি ভল্লাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি স্ত্রীকে জেতাতে তাই দোরে দোরে ঘুরছেন ‘সিপিএম’।
‘সিপিএম’-এর পোশাকি নাম আসলে বুদ্ধদেব ভল্লা। কিন্তু এলাকার মানুষ তাঁকে ওই নাম জানেন না বললেই চলে। বরং তাঁকে ‘সিপিএম’ নামেই বেশি চেনেন। বুদ্ধদেববাবুরা অবশ্য এক সময় সিপিএম দলই করতেন। বাবা সাগর ভল্লা ছিলেন দলের একনিষ্ঠ কর্মী। ভূমি এবং বর্গা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকাও নিতেন বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যে সিপিএমের সূচনা কালে অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে জন্ম হয়েছিল বলে সাগরবাবু একমাত্র ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘সিপিএম’। বছর পাঁচেক আগে তৃণমূলে যোগ দেন ওই ভল্লা পরিবার। তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএম প্রার্থী করেছে ছায়ারানি ভল্লাকে। ছায়াদেবী আবার সম্পর্কিত শাশুড়ি হন ওই তৃণমূল প্রার্থীর। কিন্তু বৌমা-শাশুড়ির লড়াই থেকেও এলাকায় বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে বুদ্ধদেববাবুর ডাক নামকে কেন্দ্র করে ভোটের প্রচার। |
|
|
তৃণমূল প্রার্থী চিন্তারানি ভল্লাকে জেতাতে এ ভাবে ভোট
ভিক্ষা করছেন স্বামী ‘সিপিএম’। ছবি: অনির্বাণ সেন। |
|
গ্রামাঞ্চলে সংরক্ষিত পদে মহিলাদের দাঁড় করানো হলেও বিবাহিতাদের ক্ষেত্রে স্বামী এবং অবিবাহিতাদের ক্ষেত্রে বাবাকেই প্রার্থী হিসেবে ধরে নেন এলাকার মানুষজন। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচনের আগে পরে ‘ব’ কলমে স্বামী কিংবা বাবাই যাবতীয় কাজ করেন। তাঁদের নামেই ভোটও চাওয়া হয় বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। সেই হিসেবে এলাকায় ভোট প্রচার বেশ মজার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। তৃণমূল কর্মী রণজিৎ বসু, উৎপল দাসরা বলেন, “সিপিএম পার্টির লোকেরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসছেন ‘ভোটটা এ বার যেন সিপিএমকেই দেবেন। ভোটারদের একাংশ ওই প্রচার বার্তাকে কাস্তে-হাতুড়ি তারার প্রার্থীর বদলে ব্যক্তি ‘সিপিএমের’ স্ত্রীকে ভোট দেওয়ার আর্জি বলে মনে করছেন। কেন না, ওই সব বাড়িতে আমরা যখন ব্যক্তি সিপিএমকে নিয়ে প্রচারে যাচ্ছি তখন পরিবারের লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলছেন, আর বলতে হবে না কালই তো ওরা (সিপিএম) ‘সিপিএম’কে ভোট দিতে বলে গিয়েছেন।”
বুদ্ধদেববাবু এবং তাঁর স্ত্রীর কথায়, “নিজেদের তো ভোট রয়েইছে। নাম বিভ্রান্তির কারণে সিপিএমেরও কিছু ভোট আমরা পেয়ে যাব।” সিপিএম প্রার্থী ছায়ারানি ভল্লা অবশ্য বলছেন, “নামে কী এসে যায়। প্রাথমিক ভাবে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলেও, ভোটাররা প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন। তাই আশঙ্কার কিছু নেই।”
গত নির্বাচনে ওই আসনে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। এ বারে তৃণমূল-বিজেপি-কংগ্রেস এবং ফব জোট করে লড়েছিল। এ বার দক্ষিণপন্থীদের কোনও জোট হইনি। তারা আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। অন্য দিকে, ফব-র সঙ্গে জোট করে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে ওই সংসদে ৫৫৬টি ভোট পেয়ে অনেকটাই এগিয়েছিল সিপিএম। ৪১৫টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। কংগ্রেস জোটের তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ২৫০টি ভোট। তাই লড়াইয়ের ময়দানে কেউ কাউকে এক চুল জমি ছাড়তে রাজি নয়। পদ্ম ফুল ফুটবে? শাশুড়ির সিপিএম, না ‘সিপিএমের’ স্ত্রী শেষ হাসিটা হাসবেন তা জানতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কটা দিন! |