|
|
|
|
জালিয়াতি ফাঁস |
বিচারপতির ভুয়ো নির্দেশ নিয়ে জামিন চেয়ে ধৃত ৭ |
দেবাশিস দাশ • কলকাতা |
কলকাতা হাইকোর্টের আগাম জামিনের নথি আদালতে পেশ করে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। নথি পেশের ফলে ওরা সাত জন নিশ্চিত ছিল যে, আদালতে আত্মসমর্পণ করে ওই নথির ফলে সকলেই জামিন পেয়ে যাবে। ওরা সবাই বধূ নিযার্তন ও খুনের চেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত।
সেই নথি হাওড়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিচারকের মুখ গম্ভীর হল। সাত জনের আগাম জামিন আর হল না। আগের অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত হল নতুন মামলা। পুলিশে এ বার অভিযোগ করলেন মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। আদালত থেকে ওই সাত জনের ঠাঁই হল শ্রীঘরে।
আগাম জামিনের নথি পেশ করেও কেন জেলে যেতে হল ওই সাত জনকে? বিচারক জানিয়ে দিলেন, ওই সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অতি গুরুতর। আদালতে যে নথি তারা পেশ করেছে, তা জাল। হাইকোর্টের এমন এক বিচারপতির সই তাতে রয়েছে, যিনি বেশ কিছু দিন আগেই বদলি হয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ, ওই বিচারপতির নির্দেশ বলে যা দাবি করা হয়েছে, সেটি জাল। বিচারপতির সই-সহ হাইকোর্টের জাল নথি কী ভাবে তৈরি হল, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি।
বুধবার দুপুরে হাওড়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আত্মসমর্পণের জন্য এসেছিল জগাছা থানার বধূ নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার মামলার ওই সাত অভিযুক্ত। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, এক মুহুরির মাধ্যমে সিজেএম কোর্টে আগাম জামিনের নথিটি জমা দেয় অভিযুক্তেরা। তাদের দাবি, ওই নথি হাইকোর্টের। হাইকোর্ট যে তাদের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে, তা স্পষ্ট বলা আছে ওই নথিতে। তাই নিম্ন আদালত ওই মামলায় যেন তাদের জামিন দেয়।
হাওড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী পায়েল ঘোষ মুখোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্তেরা কলকাতা হাইকোর্টের নথি দাবি করে যে জামিনের আদেশ আদালতে জমা দিয়েছিল, তাতে কলকাতা হাইকোর্টের এমন এক জন বিচারপতির নাম ছিল যিনি অনেক আগেই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, নথি থেকে দেখা যায় উচ্চ আদালত মামলার কেস ডায়েরি না দেখেই জামিন মঞ্জুর করে দিয়েছে, যা প্রায় অসম্ভব। এই সব তথ্য এবং জামিনের অন্যান্য সব নথি বিচার করে হাওড়া আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অরুণকুমার নন্দী বুঝে যান ওই নথি জাল। এর পরে অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া দূরের কথা, তিনি ওই সাত জনকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সরকারি আইনজীবী বলেন, “সিজেএম নিজে হাওড়া থানায় কলকাতা হাইকোর্টের নথি জাল করার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন এবং ঘটনার পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দেন।” হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সদর নিশাত পারভেজ বলেন, “সিজেএম যে অভিযোগ করেছেন, তার তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের পাশাপাশি হাইকোর্টের নথি জাল করার অভিযোগও আনা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|