ক্রমাগত পিছিয়েছে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। তবু বীরভূমের বেশ কিছু পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত উন্নয়নের কাজ শেষ করে উঠতে পারেনি। লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি। যেমন, ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে পশ্চাদপদ এলাকা উন্নয়ন বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন থেকে রাস্তা সংস্কারের জন্য ১৩ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। ঝিকড্ডা পঞ্চায়েতের পারুলিয়া গ্রামে ঝিল সংস্কারের জন্যও টাকা পাওয়া গিয়েছে। অথচ কোনও কাজই হয়নি। কেন? ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের কাজল সাহার দাবি, “নির্বাচন ঘোষণার কিছু দিন আগে টাকা এসেছে। ফলে কাজে দেওয়া যায়নি।”
আর এক তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, মহম্মদবাজারের নৃপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “জেলা পরিষদ অনুমোদন দিতে গড়িমসি করার কারণে দু’টি রাস্তার কাজ করা যায়নি।” প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ‘পুরাতনগ্রাম থেকে দিঘলগ্রাম-জঙ্গল’ পর্যন্ত আট কিলোমিটার এবং দেউচা থেকে কেন্দ্রসরাইল মোড় পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তার দাবি দীর্ঘ দিনের। |
বাকি কাজ, সিউড়ি ২ ব্লকের ইন্দ্রগাছিয়া থেকে গাংঠে হয়ে আড্ডা পর্যন্ত
৯ কিলোমিটার
কাঁচা রাস্তা পাকা করার কাজ চলছে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় |
কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা করা গেল না। হিংলো ও ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। সাঁইথিয়া ব্লকের মাঠপলশা পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান মাসুদা খাতুনের অভিযোগ, “বিরোধী তৃণমূল সদস্যদের অসহযোগিতায় প্রয়োজন মতো উন্নয়ন করা যায়নি। গরিব মানুষেরা বঞ্চিত হয়েছেন।”
অন্য দিকে, বিদায়ী জেলা সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “রাজ্য সরকার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকে বাদ দিয়ে আমলাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। এমনকী জেলা পরিষদের প্রাপ্য টাকাও নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায়নি। গত ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষের টাকা নির্বাচনের মুখে পাওয়া গিয়েছে। বাকি দু’টি বর্ষের টাকা এলই না।”
জেলা পরিষদের বিদায়ী তৃণমূল সদস্য মিহির মণ্ডল বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের হাতে থাকা জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তাঁর বক্তব্য, “সভাধিপতি অসুস্থতার জন্য গত তিন বছর ধরে মুম্বই-সিউড়ি যাতায়াত করছেন। ফলে জেলা পরিষদকে বিশেষ সময় দিতে পারেননি। তাই উন্নয়নের কাজ পিছিয়ে পড়েছে।” দুর্নীতির অভিযোগও করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, স্বজলধারা প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা খরচ হলেও, বাস্তবে কোনও কাজ হয়নি। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা তছরুপ করা হয়েছে। বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই তোলা নিয়েও ৭৭ লক্ষ টাকার তছরুপ হয়েছে।
এক দিকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্য দিকে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘাত, দুইয়ের মাঝে জেলার পরিকাঠামোর উন্নতি থমকে রয়েছে। যেমন, দুবরাজপুরে শাল নদীর উপরে একটি আধুনিক ব্রিজ তৈরির দাবি দীর্ঘ দিনের। বর্তমানে সিউড়ি-আসানসোল রাস্তার মাঝে ওই নদীর উপরে একটি ভগ্নপ্রায় ভাসমান ব্রিজ আছে। বর্ষায় নদীর জল ছাপিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে বয়ে যায়। অধিকাংশ দিনই ওই রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ওখানে একটি উঁচু ব্রিজ করার প্রস্তাব জেলা পরিষদকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও তৈরি হয়নি। আর একটি জনসুবিধার প্রকল্প ছিল সুলভ শৌচাগার। টাকা পড়ে থাকলেও কাজ শেষ হয়নি।
এমনকী জেলার নিজস্ব তহবিলে অর্থ সংগ্রহের কাজও থমকে গিয়েছে। জেলা পরিষদের আওতাধীন বেশ কয়েকটি টোল আছে। গত ৩-৪ মাস আগেই যেগুলির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তবু নতুন করে টেন্ডার ডেকে কাউকে না দিয়ে পুরনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে দিয়েই সেগুলি চালানো হচ্ছে। গত ৩-৪ মাস ধরে ওই টোলগুলি বাবদ প্রাপ্য টাকা জেলা পরিষদের ফান্ডেও জমা পড়েনি।
অবশ্য নিজস্ব তহবিল খরচই বা হচ্ছে কোথায়? নিয়ম বলছে, উন্নয়নের যে কোনও কাজে খরচ করা যায় নিজস্ব তহবিল। যে জেলায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন দারিদ্র সীমার নীচে, সেখানে নিজস্ব তহবিলের এক-তৃতীয়াংশই খরচ হয়নি। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। কোন রাজনীতি এই অনুন্নয়ন, অদক্ষতাকে জন্ম দিচ্ছে? |