কুশুম্বা গ্রাম। রামপুরহাটের এই গ্রাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি। মামার বাড়ির কৈশোরের স্মৃতি মাঝে-মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় হাতড়ান। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই কুশুম্বা গ্রামেই মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাই নীহার মুখোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু করছেন না, একই সঙ্গে নীহারবাবুর স্ত্রী পম্পা মুখোপাধ্যায়ও এ বারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমরাঙ্গণে অবতীর্ণ। দল অবশ্যই তৃণমূল। তবে পম্পাদেবীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে কুশুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী বনহাট পঞ্চায়েতে থেকে। এটা নিয়েই তৈরি হয়েছে দলের অন্দর মহলে নানান জল্পনা-কল্পনা।
রামপুরহাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির বনহাট পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পিছনে পম্পা মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, “ওই আসনে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ওখানে আমাকে দাঁড়াতে হয়েছে।” নীহারবাবুর যুক্তি, “দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যা চেয়েছে তাই হয়েছে।” বনহাট পঞ্চায়েতের তৃণমূল কর্মীরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। কালীডাঙা সংসদের গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সচিব রবি সাহা, কর্মী বাবলু লেটদের বক্তব্য, “বনহাট পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন তৃণমূলের দখলে। তাই যেখানে ৪টি সংসদ নিয়ে একটি পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়, সেখানে প্রার্থী পাওয়া যায়নি এ কথা ঠিক নয়।” তাঁদের দাবি, “এলাকার একজন দলীয় কর্মীকেই প্রার্থী ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তা কার্যকর হয়নি।” দলের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, নীহারবাবু কুশুম্বা গ্রামের স্কুল নির্বাচনে তিন বার জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও দিন দাঁড়াননি। এ বার তিনি যেমন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তেমনি স্ত্রীকেও প্রার্থী করিয়েছেন। |
নীহারবাবু বলেন, “কুশুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েত ২০০৩-২০০৮ তৃণমূলের দখলে ছিল। ২০০৮ সালে ছিল বামেদের দখলে। তিনি কুশুম্বা গ্রামের যে সংসদে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে তৃণমূল কেবল মাত্র একবার ২০০৩ সালে জয়ী হয়েছে। বাকি সময় বামেরা জয়ী হয়েছে। এ বারেও ওই সংসদে কেউ প্রার্থী হতে চায়নি। তাই দলের সংগঠন টিকিয়ে রাখতেই কঠিন জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।” আর স্ত্রীকে প্রার্থী করার বিষয়টি দলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন বলে দাবি নীহারবাবুর। আশিসবাবু বলেন, “দলের নীচু তলার কর্মীরা যা চেয়েছেন, সেটাই হয়েছে। এখানে চাপিয়ে দেওয়া বা প্রভাব খাটানোর গল্প, সবই স্ব-কল্পিত।” পম্পাদেবী অবশ্য বলেন, “আমার ব্যাপারটা দিদি জানেন।” শাশুড়ি তাপসীদেবীও বললেন, “এক মাস আগে কালীঘাটে গিয়েছিলাম। মমতাকে সব বলেছি। উনি না জানলে কি আর প্রার্থী হত বৌমা।” স্বামী-স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় কটাক্ষ করেছেন সিপিআই প্রার্থী চন্দন মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, “রেলে চাকরি দেওয়ার নাম করে এলাকার বেকার যুবকদের কাছ থেকে টাকা তোলা, ইন্দিরা আবাসের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা তোলা। এ সবই মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাই করেছেন।” নীহারবাবু অবশ্য একটাই কথা বলেন, “কারও মুখে তো হাত দেওয়া যাবে না। নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলে।” |