হুল্লোড়
রসরাজ ক্রিকেট একাদশ

“ইন দ্য ইয়ার নাইন্টিন হান্ড্রেড অ্যান্ড টোয়েন্টি নাইন, স্যার, হোয়েন ইন্ডিয়া ওয়াজ প্লেয়িং এগেনস্ট অস্ট্রেলিয়া ইন দ্য মেলবোর্ন সিটি, বিজয় মার্চেন্ট অ্যান্ড বিজয় হাজারে, দে ওয়ার অ্যাট দ্য ক্রিজ অ্যান্ড বিজয় মার্চেন্ট টোল্ড বিজয় হাজারে, ‘লুক বিজয় হাজারে, দিস ইজ আ ভেরি প্রেস্টিজিয়াস ম্যাচ অ্যান্ড ইউ মাস্ট কনসিডার দ্য ম্যাচ ভেরি কেয়ারফুলি। সো কনসিডারিং দ্য কনসিডারেশন দ্যাট বিজয় হাজারে গেভ বিজয় মার্চেন্ট, বিজয় মার্চেন্ট টোল্ড বিজয় হাজারে দ্যাট আলটিমেটলি উই মাস্ট টেক আ রান অ্যান্ড হোয়েন দে ওয়ার স্ট্রাইকিং দ্য বল অন দ্য লেগ সাইড, স্যার, দ্য কনসিডারেশন কেম ইনটু অ্যান আলটিমেটাম অ্যান্ড আলটিমেটলি বিজয় হাজারে ওয়েন্ট টু বিজয় মার্চেন্ট অ্যান্ড সেড...”
‘নমকহলাল’য়ে এই বিখ্যাত উক্তিটা মনে আছে তো? অমিতাভ বচ্চনের কথাগুলো থেকে এটা অন্তত প্রমাণ হয় যে, ইংরেজি ভাষাটা বেশ মজাদার। আর একটা ব্যাপারের হিন্টও কিন্তু ছিল কথার মাঝে। চাইলে ক্রিকেটারেরাও মজাদার হতে পারে। ক্রিকেটজগতের সদস্যদের সঙ্গে আমার এত দিনের মেলামেশায় তার প্রমাণ পেয়েছি বারে বারে। এমন অনেক ক্রিকেটারের কাছে থেকে মজার কথা শুনেছি, যাঁদের দেখে কখনও মনে হয়নি এমন মজাদারও তাঁরা হতে পারেন।
-এর জন্য আমার দেখা সব থেকে রসিক এগারোজন ক্রিকেটার বেছে নিলাম।

নভজ্যোৎ সিংহ সিধু
ওপেনিংয়ের একটা নাম নিয়ে কোনও সংশয় নেই। লাফটার চ্যালেঞ্জের সম্রাট নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। রিয়েলিটি শোয়ে আসার অনেক আগে, হাসির পোকা কামড়ানোরও আগে... সিধুর মজা করার স্বভাব টের পেয়েছি। ২০০১-এর জিম্বাবোয়ে, ধারাভাষ্যকার হিসেবে ওঁর দ্বিতীয় সিরিজ। সেই থেকে শুরু। ক্রিকেট ধারাভাষ্যের মাঝে শুধু ওঁর বিখ্যাত প্রবাদগুলোই গুঁজে দেওয়া না, হোটেল থেকে মাঠে যাতায়াতের পথেও সমানে হাসিয়ে যেতেন আমাদের। শুধু অ্যানেকডোট তো নয়, সেগুলো মজার ছলে পরিবেশন করাই ওঁর সিক্রেট।
সুনীল গাওস্কর
ওপেনিংয়ের অন্য প্রান্তে থাকবেন সুনীল গাওস্কর। ‘মাস্টার অব আফটার ডিনার উইটিজম’। তবে যদি না আপনি মানুষটাকে ভাল করে চেনেন, তাঁর ঠাট্টা-রসিকতা কখনওই ধরতে পারবেন না। অন্যকে নকল করতে গাওস্করের জুড়ি মেলা ভার। অনেক সময়ই তার শিকার উত্তর ভারতের ক্রিকেটাররা। একবার দিল্লির এক ক্রিকেটারকে নকল করে দেখিয়েছিলেন, কী করে সেই ক্রিকেটার হোটেল রিসেপশনে তক্ষুনি ‘ড’টর’ চেয়েছিল। হোটেলের চিকিৎসক যখন তাঁর রুমে পৌছলেন, সেই ক্রিকেটার বললেন, “ওহ্ জি, হোয়াই ইউ কামিং। নো নো নট ডক্টর। নিড টু পলাগ। নিড ’ডপ্টর ’ডপ্টর।” তাঁর আসলে টু-ইন-ওয়ান স্টিরিওর অ্যাডাপ্টর দরকার ছিল।
জিওফ্রে বয়কট
লোকটাকে তিনে নামাচ্ছি বটে। যদিও তিনি সিধুর থেকে কোনও অংশে কম যান না। জিওফ্রে বয়কট। মাঠে ভয়ঙ্কর সিরিয়াস আর নির্বিকার, কিন্তু মাঠের বাইরে অত্যন্ত হাসিখুশি। বয়কট কোনও দিনই খুব একটা পছন্দের চরিত্র নন, কিন্তু এক বার মিশলে জানতে পারবেন ভাল মনের মানুষ তো বটেই, হাসিয়ে পেট ফাটিয়েও দিতে পারেন বয়কট। নিজেকে আর শিল্পা শেঠিকে নিয়ে মজা করা থেকে ড্রেসিং রুমের মজার খবর জিওফ্রে বয়কটের শরীরে ‘ফানি বোন’য়ের কোনও অভাব নেই।
মনসুর আলি খান পটৌডি
মজাদার ক্রিকেটারদের এই দলের অধিনায়ক অবশ্যই পটৌডির প্রয়াত নবাব। রাজকীয়, মৃদুভাষী... একই সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত হাসির ভাণ্ডার। সে ভাণ্ডার থেকে বের হওয়া হাসির রসে গোমড়ামুখোর মুখেও হাসি ফুটতে বাধ্য। আমার সৌভাগ্য যে, ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ সেই সাত বছর বয়েস থেকে। একবার এক লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনের হয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ওঁর সঙ্গে পটৌডি প্যালেসে একটা গোটা দিন কাটিয়েছিলাম। শুনিয়ে ছিলেন নানা মজার গল্প। নিজে মুখে স্বীকারও করেছিলেন, কী ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্যদের জঙ্গলের মধ্যে গাছে বেঁধে রেখেছিলেন!
ডেভিড লয়েড
ক্রিকেটীয় কথোপকথনও যে কত মজার আর রংচঙে হতে পারে, ডেভিড লয়েডের সঙ্গে কথা না বললে বুঝবেন না। ‘বাম্বল’য়ের মজাদার ওয়ান লাইনারগুলো ধরতে হলে, ওঁর কথা মন দিয়ে শুনতেই হবে। ওঁরও সম্পদ বুদ্ধিদীপ্ত উইট, সেটা ধারাভাষ্যই হোক কি ‘হোয়েনেভার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ইউ আর, ইট’স অলওয়েজ টাইম টু স্টার্ট দ্য কার, ওর দ্য টুক টুক!’-য়ের মতো ট্যুইটগুলো।
কপিল দেব
ভারতের সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেবের সঙ্গেও এমন অনেক মজার ঘটনা জড়িয়ে আছে। এক প্রেস কনফারেন্সে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, “কবে ভারত পরবর্তী কপিল দেব পাবে?” গম্ভীর মুখে কপিল উত্তর দিলেন, “ফাদার ডেড। মাদার টু ওল্ড।”
ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার
ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ আশির দশকের গোড়ায়। ভারতের হয়ে খেলা ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু সেন্টারস্টেজ ছাড়েননি। কলকাতার ফার্ম হাউজ পার্টির মধ্যমণি তিনি। ব্রায়ান জনস্টনের এক রেডিয়ো অ্যানেকডোট যে ভাবে শুনিয়েছিলেন, হাসতে হাসতে আমাদের চোখে জল এসে গিয়েছিল। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ, মাইকেল হোল্ডিং বল করবেন পিটার উইলিকে। জনসন বললেন, “দ্য বোলার’স হোল্ডিং দ্য ব্যাটসম্যান’স উইলি।” সবাই চুপ। কিছু পরে জনস্টনও বুঝতে পারলেন ভুলটা কোথায়! তাঁর অবস্থাও তখন আমাদের মতো, হাসিতে চোখে জল। ওই দিন সেই জোক তিনবার শুনিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার।
নাসির হুসেন
সব ক্রিকেটারই যে ভাল ধারাভাষ্যকার হবেন তা নয়। নাসির হুসেনের মতো সিরিয়াস কেউ হলে তো কথাই নেই! প্রথম থেকেই শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। সেটার কারণ ওঁর অন্য ধরনের রসবোধ। ২০০৪-এর জুলাই। ধারাভাষ্যকার হিসেবে নাসিরের শুরুর দিক। নাসিরের হাতে মাইক। ব্যাট করছেন অ্যান্ড্রু স্ট্রস, দ্বিতীয় শতরান করলেন লর্ডসে। নাসির বললেন, “কী অসাধারণ সেঞ্চুরি। বোকাটা জুনে স্ট্রসকে রান আউট না-করলে, এটা ওর তৃতীয় সেঞ্চুরি হত।” ‘বোকা’ লোকটা কিন্তু নাসির নিজে! অ্যান্ড্রুকে ৮৩ রানে যে নিজেই রান আউট করেছিলেন। নিজেকে নিয়ে মশকরা করার থেকে, লোক হাসানোর আর কোনও ভাল পথ কি হতে পারে!
ড্যানি মরিসন
অনেকে মনে করেন একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেন ড্যানি মরিসন, কিন্তু গল্প বলায় ওঁর জুড়ি মেলা ভার... আমার মতে ক্রিকেটের অনুসঙ্গ মজাদার করতে ওঁর মতো লোকই আরও দরকার।
মাখায়া এনতিনি
দেশি আর বিদেশি প্লেয়ারের সামঞ্জস্য রাখতে মাখায়া এনতিনিকে দলে চাই-ই-চাই। শুধু তো ম্যাচ শেষের পার্টি নয়, মাঠের মধ্যে সিরিয়াস সাক্ষাৎকারের সময়ও কেউ জানে না এনতিনি কী করবেন। হয়তো সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গে কথা বলবেন, বা সাক্ষাৎকারের মধ্যেই উঠে চলে যাবেন কারওকে হ্যালো বলতে, আবার কিছুই হয়নি ভাব করে বসে পড়বেন সাক্ষাৎকারে!
আব্দুল কাদির
এ বার মনে হয় একজন স্পিনার লাগবে। আমার তো একজনকেই মনে পড়ছে। পাকিস্তানের ‘জাদুকর’ আব্দুল কাদির। ১৯৮৭-র ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচের সময় কাদিরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তাজ ওয়েস্ট এন্ড হোটেলের বাগানে দাঁড়িয়ে শুনিয়েছিলেন অনেক মজার কথা, সহ-ক্রিকেটারদের পিছনে লাগার কথা। যদিও সবাই কাদিরের সে সব কীর্তির ভাল প্রতিশোধই নিয়েছিলেন ম্যাচের বিশ্রামের দিন। দিনটা ছিল হোলি। প্রথমে আবির মাখিয়ে, তার পর হোটেলের পুলে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। মাথা থেকে পা রঙে মাখামাখি। ভেবেছিলেন জীবনে আর ও রং উঠবে না। খোলা মনে মজা করার জ্বালা, আর কী!

শেষে আর তিন জনকে আমার দলে রাখব। আম্পায়ার আর ম্যানেজার হিসেবে। ডিকি বার্ড আর ড্যারেল হার্পার থাকবেন আম্পায়ার হিসেবে। হেনরি ব্লোফিল্ডকে রাখব এই রসিক ক্রিকেটারদের ম্যানেজ করতে।

টিম লিস্ট
• নভজ্যোৎ সিংহ সিধু
• সুনীল গাওস্কর
• জিওফ্রে বয়কট
• মনসুর আলি খান পটৌডি (C)
• ডেভিড লয়েড
• নাসির হুসেন
• ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার (W)
• কপিল দেব
• ড্যানি মরিসন
• মাখায়া এনতিনি
• আব্দুল কাদির



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.