জমি ও টাকা পয়সার জন্য বাবার সামনেই বৃদ্ধা মাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে ছেলে-সহ পুত্রবধূ, নাতি এবং নাতনির বিরুদ্ধে। বুধবার রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জ দাসপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতার নাম বিলাসিনী দাস (৮০)। তাঁর স্বামী ৯০ বছরের বৃদ্ধ শ্রীপদবাবুর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে শোওয়ার ঘরে ওই বৃদ্ধাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে পর মৃতার ছেলে চন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ মহামায়া, নাতি অমিত ও নাতনি আলপনাকে জেরার জন্য থানায় নিয়ে যায়। পরে গ্রেফতার করা হয়।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “মৃতার স্বামী ও প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনকে ধরা হয়েছে। ওই বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূর বিবাদ চলছিল। বৃদ্ধার স্বামী বা তাঁর মেয়েদের লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তে বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করার কোনও চিহ্ন না মিললেও মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। যদিও চন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “মা অসুস্থ হয়েই মারা গিয়েছেন। আমাদের বিনাদোষে ফাঁসানো হচ্ছে।”
বিলাসিনীদেবীর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে চন্দ্রনাথবাবু মেজ। বড় মেয়ে বেলাদেবী, সেজ ভক্তিদেবী ও ছোট শক্তিদেবীর রায়গঞ্জে বিয়ে হয়েছে। ভক্তিদেবী বলেন, “১৩ কাঠা বসত জমি নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই দাদা, বৌদি বাবা ও মায়ের উপর অত্যাচার চালাত। ওঁরা বৃদ্ধভাতার টাকাও কেড়ে নিত। নিজেরা পাকা ঘরে থেকে বাবা-মাকে টিনের ভাঙা ঘরে থাকতে বাধ্য করেছিল।” তাঁর অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় দাদা আমাদের তিন বোনকে বাড়িতে ঢুকতে দিত না। বাবার মুখ থেকে শুনলাম দাদা, বৌদি এবং ভাইপো, ভাইঝি মিলে শ্বাসরোধ করে মাকে খুন করেছে। মা’র শেষকৃত্যের পর ওঁদের নামে থানায় লিখিত নালিশ করব।”
শ্রীপদবাবুর অভিযোগ, “এমনিতে, জমি লিখে না দেওয়ায় ছেলে ও পুত্রবধূ আমাদের নিয়মিত খেতে দিত না। মারধর করে বৃদ্ধ ভাতার টাকাও কেড়ে নিত। মঙ্গলবার ছেলে ও পুত্রবধূ ফের ওঁদের নামে জমি লিখে দেওয়ার কথা বলে। বৃদ্ধভাতার টাকা দাবি করে। আমরা রাজি হইনি। আমার সামনেই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি ও নাতনি স্ত্রীর মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে, গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করেছে।” ওই বৃদ্ধ দম্পতির প্রতিবেশী শুভ দাস, অসিত দাস ও সমীর গোস্বামী জানিয়েছেন, “জমি ও টাকা পয়সার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চন্দ্রনাথবাবু ও মহামায়াদেবী বৃদ্ধ বাবা-মা-র উপর অত্যাচার করছিলেন। ইচ্চা থাকলেও পারিবারিক বিষয় হওয়ায় আমরা নাক গলাইনি। তবে এ দিন যা হয়েছে তা ভাবাই যায় না। দোষীদের কড়া শাস্তি চাই।” |