কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) উপরে হামলার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। বুধবার দুপুরে কালিয়াচকের নওদা-যদুপুর গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলার পরে ওই দাবি জানান। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত যাতে হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, “আমাদের জেলা সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপরে হামলা হয়েছে। পুলিশকে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, চকলেট বোমা ফাটানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর মতো তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই রায় দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে পুলিশের মধ্যে। নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাচ্ছি। দেখি মুখ্যমন্ত্রী কী করেন?”
পাশাপাশি, প্রদীপবাবুর প্রশ্ন, যদি চকলেট বোমা ফাটানো হয়ে থাকে তা হলে কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করেছিল সেটা পুলিশ বলতে পারছে না কেন? একটিও চকলেট বোমার মোড়ক পুলিশ বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এমনকী, খোদ প্রধানমন্ত্রী ফোন করে যেখানে খবর নিয়েছেন, সেখানে রাজ্যের তরফে কোনও মন্ত্রী একবারও ফোন পর্যন্ত না-করায় অসৌজন্যের অভিযোগ করেছেন প্রদীপবাবু। |
মালদহের তৃণমূল নেতা তথা পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, “সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে রাজ্য। হাইকোর্টও নির্দেশ দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন কি না সেটা প্রদীপবাবুর জানা উচিত। তা ছাড়া, ওই দিন যদুপুরে গুলি-বোমা ফেটেছে বলে প্রমাণ করতে পারলে আমি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেব।” সেই সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবুর প্রশ্ন, “ঘটনার সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নিরাপত্তা রক্ষীরা কি করছিলেন? যদি ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে তাঁদের তো শাস্তি হওয়া উচিত।” মালদহ পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, বেশ কিছু পটকার মোড়ক উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে খুনের চেষ্টা, বোমা ফাটানো, অস্ত্র আইন, সব ধারাই প্রয়োগ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “অভিযোগ পেয়ে সেই অনুযায়ী ধারা প্রয়োগ করে কালিয়াচক থানায় মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক কাজ শেষ হলে পদক্ষেপ করা হবে।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরে যদুপুর এলাকায় কংগ্রেসের ‘রোড শো’ চলাকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা, গুলি ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। তা অবশ্য গাড়িতে কিংবা কারও গায়ে লাগেনি। কংগ্রেসের তরফে লিখিত ভাবে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ করা হয়েছে, তৃণমূল মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা ওই হামলা করেছে। ঘটনার পরে রাজ্যের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানিয়ে দেন, কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি। দূরে কোথাও ছোটখাট পটকা ফাটানো হয়েছে বলে পুলিশ সুপারও দাবি করেন। ওই ঘটনা জানার পরে প্রধানমন্ত্রী ডালুবাবুকে ফোন করে খোঁজ নেন। এদিন দুপুর ১ টা নাগাদ নওদা যদুপুর বাজারে পৌঁছন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তাঁকে সামনে পেয়ে কংগ্রেসের জেলা পরিষদের মহিলা প্রার্থী রিজবা বিবিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে ধরে বলতে শোনা যায়, “আমি ডালুদার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলাম। আমার হয়ে ডালুদা এখানে প্রচারে এসেছিলেন। যদুপুর বাজারে প্রচারের কনভয় যেতেই বোমা-গুলি ছুঁড়তে থাকে তৃণমূল কংগ্রেস দুষ্কৃতীরা। বোমা-গুলির পরে রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। এখানে আধা সামারিক বাহিনী না দিলে আমরা ভোট করতে পারব না। ভোটাররা ভোট দিতে পারবে না।”
এই অভিযোগ শোনার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ্য নিবার্চন কমিশনের সচিবকে ফোন করেন। দ্রুত যদুপুর ও মোজামপুরে আধা সামরিক বাহিনী পাঠানোর আর্জি জানান তিনি। এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সিপিএমের অনেক দোষ ছিল। কিন্তু সিপিএম কোনদিন ছ্যাঁচরামি করেনি।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস এখন গুন্ডাদের দল এবং মালদহের এসপি বড় তৃণমূল হয়েছেন। সেই জন্য এসপি বলছেন, আমার উপর হামলা হয়নি। যদি সৎসাহস থাকে তবে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক।”
|
ডালুবাবুর উপর আক্রমণ নিয়ে |
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালুবাবু) উপরে মঙ্গলবার হামলার অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে চাপানউতোর অব্যাহত। ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। মালদহের তৃণমূল নেতা তথা পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন, “ওই দিন যদুপুরে গুলি-বোমা ফেটেছে বলে প্রমাণ করলে আমি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেব।” নওদা-যদুপুর বাজারে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলার পরে গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রদীপবাবু। কৃষ্ণেন্দুবাবুর উত্তর, “প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন কি না সেটা প্রদীপবাবুর জানা উচিত।” আবু হাসেমের কথায়, “সিপিএমের অনেক দোষ ছিল। কিন্তু সিপিএম কোনওদিন ছ্যাঁচরামি করেনি।” |