এক প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বুধবার সকালে উত্তেজনা ছড়াল হাওড়া জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসক ও নার্সের গাফিলতিতে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মৃতার আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। হাসপাতালের জিনিসপত্র ভাঙচুরের চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রসব বেদনা ওঠায় হাওড়া জেলা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হন ডোমজুড় সলপের বাসিন্দা সোনা সর্দার (২২)। বছর দুয়েক আগে তাঁর সঙ্গে ওই এলাকার বাসিন্দা দীপক সর্দারের বিয়ে হয়। বুধবার দীপকবাবু অভিযোগ করেন, সোনাকে যখন হাসাপাতলে ভর্তি করা হয় তখন তাঁর অন্য কোনও রকম শারীরিক জটিলতা ছিল না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে রাত দেড়টা নাগাদ প্রসবের জন্য তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা পরে হাসপাতলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তাঁকে জানান, তাঁর একটি কন্যা সন্তান হয়েছে এবং স্ত্রীও ভাল আছেন।
দীপকবাবুর অভিযোগ, এর প্রায় তিন ঘণ্টা পরে হাসপাতালের নার্সেরা জানান, তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে মারা গিয়েছেন সোনা, তার উত্তর অবশ্য যে চিকিৎসক ওই বধূর প্রসবের দায়িত্বে ছিলেন তিনিও দেননি। ঠিক কখন মৃত্যু হয়েছে, তা-ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাতে চাননি। কার্তিক দলুই নামে মৃতার এক আত্মীয়ের অভিযোগ, “কী ভাবে মৃত্যু হল, তা আমাদের জানানোই হয়নি। প্রসবের পরে সোনার গুরুতর অবস্থার কথাও কেউ জানাননি আমাদের। জানালে হয়তো ওকে বাঁচানোর জন্য আমরা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু সেই সুযোগও আমাদের দেওয়া হয়নি।”
পুলিশ জানায়, এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে যেতেই হাসপাতালে ছুটে আসেন মৃতার আত্মীয়স্বজন। তাঁরা অভিযোগ করেন, কন্যাসন্তান জন্মানোর পরে লেবার রুমের চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতিতে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। উত্তেজিত আত্মীয়েরা এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে গেলে হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়। ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। হাওড়া হাসপাতালের সুপার সুবোধ মণ্ডল বলেন, “ওই মহিলার স্বাভাবিক প্রসব হয়েছিল। প্রসবের পরে ওই প্রসূতির ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের ধারণা, এই কারণে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়না-তদন্তের আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। আমরা এই মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ পেয়েছি। এ জন্য বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |