এক মহিলার মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হুগলির হরিপালে ব্লক মেডিক্যাল অফিসারকে মারধরের অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে। প্রহৃত বিএমওএইচ সৌরভ শীল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত বাবলু গায়েন পলাতক। অন্য এক অভিযুক্ত, হাসপাতালেরই কর্মী মনোজিৎ দাস গ্রেফতার হয়েছেন। বাবলুর স্ত্রী রত্না গায়েন আশুতোষ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী।
|
সৌরভ শীল।
নিজস্ব চিত্র। |
অভিযোগ যাই থাক, হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না দলীয় নেতাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, “এক নিরীহ মহিলা মারা যাওয়ায় কিছু গ্রামবাসী হাসপাতালে গোলমাল করেছে। তবে বাবলু সেখানে ছিলেন না।” বাবলু নিজে অবশ্য জানিয়েছেন তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ফোনে বলেন, “আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম ঠিকই, তবে ডাক্তারবাবুর গায়ে হাত তুলিনি। গালাগালও করিনি। উনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন। এর বেশি কিছু বলব না।”
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার মৌসুমী পাত্র নামে কিঙ্করবাটির এক মহিলা জ্বর, পেটব্যথার উপসর্গ নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। মঙ্গলবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছর চৌত্রিশের ওই মহিলার মৃত্যু হয়। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, মৃতার বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, তাঁর হৃদরোগ ছিল। সেই কারণেই মৃত্যু নিয়ে প্রথমে কোনও অভিযোগ তোলেননি তাঁরা। সন্ধ্যায় মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেই অবশ্য পরিস্থিতি বদলে যায়।
অভিযোগ, রাত ১০টা নাগাদ তৃণমূলের আশুতোষ অঞ্চল সভাপতি বাবলু গায়েনের নেতৃত্বে এক দল গ্রামবাসী হাসপাতালে চড়াও হয়। সৌরভবাবু তখন ইমার্জেন্সিতে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সৌরভবাবুকে হাতের সামনে পেয়ে মারতে শুরু করে ওই গ্রামবাসীরা। চলতে থাকে গালিগালাজ। চিকিৎসার গাফিলতিতেই ওই মহিলা মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে হামলাকারীরা। সৌরভবাবু বলেন, “আমার উপরে যথেচ্ছ কিল, চড়, ঘুসি, লাথি পড়তে থাকে। মারের চোটে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। প্রাণে বাঁচতে কোনওক্রমে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ি। কেউ একজন ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। তাতে রক্ষা পাই।” বিএমওএইচ-এর অভিযোগ, “আমাকে অকথ্য গালাগাল করছিল। অথচ গত বছরেই ভাল পরিষেবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে আমরা পুরস্কার পেয়েছি।” খবর পেয়ে হরিপাল থানার পুলিশ আসে। তত ক্ষণে পালিয়েছে হামলাকারীরা। ওই হাসপাতালেই প্রাথমিক চিকিৎসা হয় সৌরভবাবুর। রাতেই বিষয়টি তিনি জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের জানান। বুধবার সকালে থানায় ঘটনার কথা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তারই ভিত্তিতে দুপুরে মনোজিৎকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, মারধর, ভীতি প্রদর্শন প্রভৃতি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মন্ত্রী অভিযুক্ত নেতাকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও একাধিক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, বিএমওএইচ-এর গায়ে হাত তোলায় দলের ওই নেতা জড়িত ছিলেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। |