এত দিন যারা মিলেমিশে সুখদুঃখ ভাগ করে নিতেন, এখন প্রার্থী হতেই একে অপরের ছায়া মাড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন দুই পরিবারের কর্তা প্রার্থী। তাই মন না চাইলেও দুই ভাইয়ের স্ত্রী, সন্তানেরা যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন একে অন্যের বাড়িতে। ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪১ নম্বর পার্টে সিপিএম এবং তৃণমূল দলের দুই প্রার্থী আপন দুই ভাই একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বড় ভাই আফিজার রহমান সিপিএম প্রার্থী আর তার থেকে বছর বারোর ছোট ভাই জাকির হোসেন তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন।
বছর দশেক আগে বাবা মারা যাবার পরে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ হয়েছে দুই জনের মধ্যে লাগোয়া বাড়ি দুই ভাইয়ের সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার পরে এতটুকু চিড় ধরেনি। আফিজার আর জাকিরের মধ্যে এক বাড়িতে ভালমন্দ রান্না হলে আরেক বাড়িতে চলে যাত বাটি ভরা মাছ মাংস,বিরিয়ানি। এক ভাই বিপদে পড়লে আরেক ভাই পাশে দাঁড়াতেন। মসজিদে নমাজ পড়া থেকে ঈদ সহ সমস্ত উসব অনুষ্ঠান দুই পরিবারের সদস্যরা মিলেমিশে পালন করতেন।
অথচ ভোট চাইতে গিয়ে এখন একে অপরের বিরুদ্ধে এতটাই ব্যক্তিগত ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন যে পাড়ার লোকজন একেবারে তাজ্জব। দুই পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, দিন পনেরো আগে নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেবার আগে পর্যন্ত সকলে মিলেমিশে ছিলেন। একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। তা পাকা হবার পর সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাদের মধ্যে। ওই অংশে ১০৯৬ জন ভোটারের বেশির ভাগের মন পেতে দিন রাত এক করে খাটছেন তারা দুই ভাই।
সিপিএম প্রার্থী বড়ভাই আফিজারের কথায়, “এই অংশের বিদায়ী তৃণমূল পঞ্চায়েত কোন কাজ করেনি মানুষ পানীয় জল পান না। ইন্দিরা আবাস নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল মানুষ আর তাদের চাইছে না। মিছিলে লোক জড়ো করতে ভাই খাসির মাংস খাওয়াচ্ছেন।”
দুই ভাইয়ের দুই মামা ও দুই ভাগ্নের হয়ে প্রচার করছেন। আফিজারের পক্ষে থাকা তার ছোট মামা সাফিকুল ইসলামের কথায়, “বড় ভাই জিতলে সে গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করবে। ছোট ভাইয়ের দলকে মানুষ দেখল কোন কাজই হয়নি।”
তৃণমূলের প্রার্থী অপর ভাই জাকির হোসেনের পক্ষে প্রচারে নামা অপর মামা তুসলে রহমানের দাবি, “ছোট ভাইই কাজের মানুষ সে জিতলে অবশ্যই গ্রামে কাজ হবে মানুষ তাকেই ভোট দেবে।” তৃণমূলের প্রার্থী জাকির হোসেনের কথায়, দাদা দুষ্কৃতীকে আশ্রয় দিয়েছিল আমি মানুষকে খাসির মাংস খাইয়েছি। আর উনি তো কম যান না। কিছুদিন আগে বাড়িতে খাসির মাংস দিয়ে ভোজ দিয়েছিলেন। বাবার আমল থেকে আমরা কোন দিন লাল পার্টি করিনি। ও কিনা পঞ্চায়েতে দাঁড়ানোর লোভে তাই করল। আমাদের সঙ্গে ওর সম্পর্ক নেই।”
তবে গ্রামে কাজ না হবার বিষয়ে জাকিরের যুক্তি, গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি আর সিপিএ ম-এর দখলে ছিল পঞ্চায়েত সমিতি ছিল সিপিএম-এর হাতে তারা তৃণমূলের এই পঞ্চায়েতকে কোন বরাদ্দ দেয়নি।
তবে দুই ভাই পঞ্চায়েতে দাঁড়ানোতে দু বাড়ির মধ্যে সম্পর্কে দূরত্ব হওয়ার ঘটনা মানতে পারছে না উভয় পরিবারের সদস্যরা। আফিজার বাবুর স্ত্রী জোরিনা খাতুন বলেন, ছেলে মেয়ে সহ আমার মন বড্ড খারাপ তারা রীতিমত কান্নাকাটি করে কবে যে আমাদের দুটি পরিবার আগের মত এক হবে সে দিনই গুনছি।
মন খারাপ জাকিরবাবুর স্রী জ্যোৎস্না খাতুনের। স্বামী পাশে থাকায় খুব একটা কিছু না বললেও তিনি শুধু বলেন, “ওদের বাড়িতে আমাদের পরিবারের কেউ যাতায়াত করে না। খারাপ তো লাগবেই। তবে ভোট পর্ব মিটে গেলে দুই ভাই এবং তাদের পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় জোড়া লাগবে কি না এখন সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন গ্রামের মানুষ। |