চারদিকে চাপা ‘আতঙ্ক’। তারই মধ্যে যৎসামান্য ভোটের প্রচার। ড়র, ভয় উপেক্ষা করে মনোনয়নে যোগদান করা বামফ্রন্ট প্রার্থীদের ‘শিকড়ের টান’ লড়াইতেও। কিন্তু মন ভাল নেই। কারণ, অন্য দলের মতো এ বার বোলপুর মহকুমায় বামফ্রন্ট প্রার্থীদের প্রচারে নেই রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব। স্বাভাবিক কারণে, প্রচার পর্ব এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়াতে অনীহা রয়েছে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। প্রকাশ্যে এই যুক্তি অগ্রাহ্য করে, ‘হামলা ও সন্ত্রাসের’ অজুহাত দেখালেও ঘনিষ্ঠ মহলে এই এলাকার ফ্রন্ট শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি ওপর ‘সিল মোহর’ই দিয়েছেন।
জেলার বোলপুর মহকুমায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের অনেক শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী নেতা প্রচার, জনসভা, পথ সভাতে সরব। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্মভিটে থেকে শুরু করে মনোনয়ন পর্বে এই মহকুমায় প্রতিদ্বন্দিতায় না থাকা কংগ্রেসও প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে পর্যন্ত প্রচারে নিয়ে এসেছেন। সে ক্ষেত্রে দেখতে গেলে, বামফ্রন্টের প্রচারে রাজের শীর্ষ নেতৃত্ব না থাকা, প্রার্থীদের মনোবলকে অনেকটা ‘দুমড়ে মুচড়ে’ দিয়েছে। স্বাভাবিক কারণে ক্ষোভ বাড়ছে, ফ্রন্টের ‘প্রতিকূল’ সময়ে প্রতিদ্বন্দিতা বামপন্থী প্রার্থীদের। যেমন বোলপুর ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে, একটি পঞ্চায়েত সমিতি ও একটি জেলা পরিষদ আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করা প্রার্থীদের অনেককেই বলেতে শোনা গেল একই কথা। রুপপুর গ্রাম পঞ্চায়তের আসনে বামফ্রন্টের হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সিপিএমের সুরুলের বাসিন্দা অশোক বাগদি ও সমীর বাগদি। তাঁদের কথায়, “রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব এলে তো আমরা সাহস পাই। প্রচার, সংগঠন করার রসদও পাই। কিন্তু তাঁরা অনুপস্থিত থাকলে অন্য কথা। বিরোধীদের দেখুন, কত জোর। মন্ত্রী, বিধায়ক, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকছে। আমরা সারা বছর মাঠে নেমে সংগঠন করি, মানুষের সুবিধে অসুবিধেতে পাশে দাঁড়াই। তবু এই ক-দিন তো সকলে চায়, ‘শীর্ষ নেতৃত্বের দুটো কথা শুনতে’। কিন্তু হচ্ছে কই? প্রচারে তাঁরা এলে প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের মনোবল আগের থেকে বেড়ে যায়।” তাঁদের আরও সংযোজন, “এমনি এমনি কী পালে হাওয়া লাগে। কিছুটা হলেও তো ভোটারদের চাঙ্গা করতে হয়। আর তো মোটে কটা দিন বাকি। দেখা যাক, কী হছে?”
কর্মী-সমর্থক ও প্রার্থীদের দাবি অস্বীকার না করলেও, বামফ্রন্ট নেতৃত্ব অবশ্য প্রতিদ্বন্দিতা করা মানুষের কম সংখ্যাকেই দুষছেন। মহকুমা ফ্রন্ট নেতৃত্বের দাবি, আসলে এখানে অনেক কম মানুষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই জেলার রামপুরহাট, সিউড়ি এলাকার দলীয় প্রচারে ফ্রন্ট শীর্ষ নেতৃত্ব থাকলেও, এখানে প্রচারের সম্ভাবনা কম।
সিপিএমের বোলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক উপল রুদ্র বলেন, “এই মহকুমায় খুব কম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই এখানে এ দিন পর্যন্ত শীর্ষ স্তরের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কোনও কর্মসূচি নেই। তবে আমরা আশাবাদী। জেলার বাকি জায়গায় প্রচারে শীর্ষ নেতৃত্ব আছেন। জোর কদমে চলছে নির্বাচনী প্রচার।” |