রাতভর প্রায় পনেরো ঘণ্টা শ্বশুরবাড়ির ঘরেই ঝুলে রইল বধূর দেহ। আর বন্ধ দরজার বাইরে দেহ পাহারায় রইল পুলিশ। স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও পুলিশের ভয়ে আটকে রইলেন বাড়িতেই।
পরদিন সকালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এসে দেহের সুরতহাল করার পরে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। ঘটনাস্থল, পুরুলিয়া শহরের আমলাপাড়া এলাকা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই এলাকায় অস্বাভাবিক মৃ্ত্যু হয় প্রিয়াঙ্কা খাঁ (২২) নামে ওই বধূর। মৃতার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছেই খবর পেয়ে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে। কিন্তু, রাতে প্রিয়াঙ্কার বাবা, বাঁকুড়া শহরের কাঠজুড়িডাঙার বাসিন্দা অসিতবরণ মল্লিকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা করে।
|
প্রিয়াঙ্কা খাঁ |
দু’বছর আগে পেশায় ব্যবসায়ী নিরুপম খাঁ-এর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার। তাঁদের এক বছরের মেয়ে আছে। নিয়ম অনুযায়ী, বিয়ের সাত বছরের মধ্যে কোনও বধূর অপমৃত্যু হলে ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিক দেহের সুতরহাল করেন। তার পরেই দেহ ময়নাতদন্তে যায়। এক্ষেত্রে মঙ্গলবার সন্ধ্যার ঘটনা হলেও পুরুলিয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অরূপ দত্ত দেহের সুরতহাল করেছেন বুধবার সকালে। আর সারা রাত প্রিয়াঙ্কার ঝুলন্ত দেহ পড়ে ছিল বন্ধ ঘরে। কেন রাতেই ম্যাজিস্ট্রেটকে এনে সুরতহাল করানো হল না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশের যুক্তি, সুরতহালে খুঁটিনাটি অনেক কিছু দেখতে হয় এবং তার রিপোর্ট মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসাবে গ্রাহ্য করে আদালত। তাই রাতে ঝুঁকি না নিয়ে দিনে সুরতহাল করা হয়েছে। তা ছাড়া, মৃতার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা দস্তুর। ওই বধূর বাপের বাড়ির সদস্যরা বেশি রাতে পুরুলিয়া এসেছিলেন। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওই বধূর দেহ বন্ধ ঘরের মধ্যে ছিল। সকালে দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কেউ যাতে প্রমাণ নষ্ট না করতে পারে, সে জন্য বন্ধ দরজার বাইরে তিন জন কনস্টেবল রাখা হয়েছিল।” অসিতবরণবাবুর অভিযোগ, পণের দাবিতে মেয়ের উপরে অত্যাচার হত শ্বশুরবাড়িতে। মেয়ের স্বামী নিরুপম, শ্বশুর প্রদীপ খাঁ শাশুড়ি অঙ্গুরিবালা-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশ নিরুপম ও প্রদীপবাবুকে গ্রেফতার করেছে। বাকিরা পলাতক। |