বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের সহায়তা পেয়েছিলেন। আশা পঞ্চায়েত ভোটেও মিলবে মতুয়া সহযোগিতা। আর সেই আশা নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গাইঘাটা ব্লকে জেতার স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁদের ফল ভাল না হলেও এই কয়েক বছরে তৃণমূলের নানা কাজকর্মে অনেক মানুষ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে বলে দাবি সিপিএমের। আর সেই দাবির ভিত্তিতেই ভাল ফলের আশা করছে তারাও।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে তৃণমূলের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা অব্যাহত ছিল বিধানসভাতেও। ঠাকুরবাড়ির ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণকে প্রার্থী করে ভোটে নেমে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। তাঁকে মন্ত্রীও করা হয়। মন্ত্রী হয়ে এলাকার উন্নয়নে তিনি কতটা সক্রিয় হয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারই জবাব পাওয়া যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। |
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯টি আসনের মধ্যে তৃমমূল একাই পেয়েছিল ৩৮টি। সিপিএম পেয়েছিল একটি। ১৩টি পঞ্চায়েতের প্রতিটি দখল করে তৃণমূল। জেলা পরিষদের তিনটি আসনই পায় তৃণমূল। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার অন্য কোনও ব্লকে দল এত সাফল্য পায়নি। এ বার অবশ্য প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বহু ক্ষেত্রেই দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মঞ্জুলবাবুর ছেলে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী। যা মেনে নিতে পারেনি দলের একাংশ। জলেশ্বর-২ পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৪টি। তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে ১১টি আসনে। নীচু তলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্যই এমন অবস্থা বলে দলের একাংশের মত। সুটিয়া পঞ্চায়েত থেকে এ বার সমিতির প্রার্থী গাইঘাটার প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ধ্যানেশনারায়ণ গুহ। ভোট মেটার আগেই দলের মধ্যে সম্ভাব্য সভাপতি হিসাবে ধ্যানেশবাবুর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যাওয়ায় দলের একাংশ ক্ষুব্ধ। সমস্যা তৈরি হয়েছে ইছাপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকায়। এখানে পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর আসনে দলীয় প্রার্থী শুক্লা রায়। কিন্তু দলের একাংশের অপছন্দের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন শিপ্রা বিশ্বাস। এমনকী শিপ্রাদেবীর হয়ে বুধবার শেষ বেলায় প্রচারেও নেমেছিলেন মঞ্জুলকৃষ্ণবাবু। |
যা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জেলা তৃণমূলে। যদিও শিপ্রাদেবীর দাবি, এলাকায় গোপন মিটিং করে দলের এক নেতা শুক্লাদেবীর নাম প্রার্থী হিসাবে জমা দেন। তা জানতে পেরে জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই আমি মনোনয়ন জমা দিই। কিন্তু ওই নেতা দলের প্রতীক চুরি করে শুক্লাকে দিয়ে দিয়েছেন।” শিপ্রাদেবীর হয়ে প্রচারের প্রসঙ্গে মঞ্জুলবাবুর বক্তব্য, “বিষয়টি দলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ জানেন।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু মঞ্জুলবাবুর দলবিরোধী কাজ নিয়ে দলের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “মন্ত্রীর এমন দলবিরোধী কাজ আমরা কখনওই সমর্থন করব না।”
আর এই জায়গা থেকেই ফের এখানে মাটি শক্ত হওয়ার আশা দেখছে সিপিএম। পাশপাশি গত পাঁচ বছরে পঞ্চায়েতে দুর্নীতি ও অনুন্নয়নের বিষয়গুলি প্রচারে অস্ত্র করেছে তারা। দলের বনগাঁ-গাইঘাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক রমেন আঢ্য বলেন, “মুখ ফেরানো দলীয় কর্মী সমর্থকদের বড় অংশ দলে ফিরেছেন। আশা করছি আমরা ফের সমিতি দখল করতে পারব।”
তৃণমূল অবশ্য এলাকায় উন্নয়নের তালিকা দিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে তাদের দাবি, পোঁতা হয়েছে ১৪৩টি আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ, বাড়ানো হয়েছে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শয্যাসংখ্যা। চাষিদের বিতরণ করা হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি। দেওয়া হয়েছে নতুন রেশন কার্ড। বাতিল করা হয়েছে ১৮ হাজার ভুয়ো কার্ড। জমি পেয়েছেন ২১৫ জন ভূমিহীন পরিবার ইত্যাদি।
এখন দেখার এলাকায় উন্নয়নের স্বাদ পেয়ে এখানকার মানুষ কার হাত ধরেন। |