বামফ্রন্ট ০। তৃণমূল ১২। কংগ্রেস ৮। বিজেপি-১। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা-২ পঞ্চয়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি সিপিএম। নিজেদের খাসতালুকেই ধরাশায়ী হয়েছিল তারা। ২০০৮ -এ শূন্যের সেই লজ্জা এ বার ঢাকতে তৎপর বাম নেতৃত্ব। যদিও কাজটা যে সহজ হবে না সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল বাম নেতা-নেত্রীরাও।
২০০৮-এর ফলে দলের ওই বিপর্যয়ের ময়নাতদন্তে নেমে বাম নেতৃত্ব পেয়েছিলেন নানা তত্ত্ব। উঠে এসেছিল এলাকায় রেশন কার্ড বিলি, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ নিয়ে মানুষের অসন্তোষের কথা। পাশপাশি বেশ কিছু এলাকায় বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের মনে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ভোটবাক্সে। সর্বোপরি দলীয় কোন্দল ছিল বিপযর্য়ের অন্যতম কারণ। এবং তা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যার ফলে ১৯৭৮ সালের পর গত বছরই পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হয় বামেদের। |
হাবরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২টি (বাঁশপুল ও গুমা-২) পেয়েছিল সিপিএম। কংগ্রেস পেয়েছিল একটি (বেড়াবেড়ি) আর তৃণমূলের দখলে গিয়েছিল ৫টি (গুমা-১, বিড়া-রাজীবপুর, দিঘড়া-মালিকবেড়িয়া, শ্রীকৃষ্ণপুর ও ভুরকুন্ডা)। পরবর্তীতে বাঁশপুল পঞ্চায়েতটিও দখল করে তৃণমূল। তবে পঞ্চায়েত সমিতিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা থাকা সত্ত্বেও বোর্ড গঠনে প্রকাশ্যেই এসে পড়েছিল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। র্শীষ নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করেই নিচুতলায় বামবিরোধীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছিল দলের একাংশ।
অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই পঞ্চায়েত সমিতি। বিধানসভার ভোটে এখান থেকেই তৃণমূলের ধীমান রায় জিতেছিলেন প্রায় ২৭ হাজার ভোটে। উল্টোদিকে ছিলেন সিপিএমের সত্যসেবী কর। লোকসভাতেও এই এলাকা থেকে ভোটে এগিয়েছিলেন তৃণমূলের কাকলিঘোষ দস্তিদার। |
এ হেন তৃণমূলের শক্তপোক্ত জমিতে সিপিএম তথা বামেরা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন কী ভাবে? সত্যসেবীবাবুর দাবি, “গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের কোনও ছাপ রাখতে পারেনি তৃণমূল। সভাপতির পদ নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যে টানাপোড়েনও মানুষ ভালভাবে নেয়নি। গত বার আমাদের সম্পর্কে লোকের শিথিলতা তৈরি হয়েছিল। সেটা অনেকটাই কাটানো গিয়েছে। তা ছাড়া দলছুট কর্মী-সমর্থকেরাও দলে ফিরে আসছেন।” নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূলের জমানায় ইন্দিরা আবাস যোজনায় দুর্নীতি, বেহাল রাস্তা সংস্কারে ব্যর্থতা, সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে অনিয়ম, বেহাল নিকাশি, বিদ্যাধরী নদীর সংস্কার না হওয়া ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছে বামেরা।
পাল্টা প্রচারে তৃণমূল তুলে ধরেছে উন্নয়নের তালিকা। যার মধ্যে তাদের দাবি, আর্সেনিকমুক্ত ৩০০টি পানীয় জলের কল বসানো, ইন্দিরা আবাস যোজনায় প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ি তৈরি, ব্লকের প্রায় ৪৫ শতাংশ পরিবারকে ১০০ দিনের কাজের জবকার্ড বিলি, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ২-৩টি পিচের রাস্তা তৈরি ইত্যাদি। সমিতির বিদায়ী সভাপতি সুশান্ত দাস বলেন, “সেচ দফতরের নিজস্ব সমস্যার জন্যই বিদ্যাধরী নদীর সংস্কারের কাজ বেশিদূর এগোয়নি। দলমত নির্বিশেষে সব পরিবারকে রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণপুরে কিষানমান্ডি তৈরির জন্য জমি দেখা হয়েছে।” ব্লকের ২টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে আগের বার ভাগ করে নিয়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। এ বার বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে অলিখিত আসন সমঝোতা হয়েছে বলে জানালেন এলাকার মানুষই। গত বার পঞ্চায়েতে আসন ছিল ১৪টি, এ বার হয়েছে ১৭টি। কংগ্রেস ১০টি আসনে ও তৃণমূল ১১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বেশ কিছু আসনে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। যদিও ধীমানবাবু সব আসনে প্রার্থী দিতে না পারা, দলের মধ্যে প্রার্থ নিয়ে ক্ষোভকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, সব আসনেই জিতবে তাঁদের দল। |