প্রশাসক বসিয়েও গতি আসেনি উন্নয়নের কাজে
হাবরা ১ নম্বর ব্লকে ফুল ও ফল চাষ করেন প্রচুর চাষি। তাঁদের উৎসাহ ও ঋণ দেওয়ার জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন প্রকল্পে কয়েক লক্ষ টাকা আসে হাবরা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে। অথচ তার একটি টাকাও হাতে পাননি চাষিরা। টাকা ব্লকেই পড়ে রয়েছে। স্থানীয় চাষি নরেন মন্ডল বলেন, “আর্থিক ঋণ নিয়ে আমাদের চাষ করার আর ক্ষমতা নেই। পঞ্চায়েত সমিতিতে বারবার গিয়েছি। ওরা জানিয়েছে, টাকা দেওয়া যাবে না।” ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী তৃণমূল সভাপতি জাকির হুসেন বলেন, “সতের লক্ষ টাকা পড়ে আছে ঠিক। কিন্তু প্রকল্পটি দেখভালের জন্য ওই দফতরের কোনও কর্মী নেই। তাই টাকা দেওয়া যায়নি।” গোটা জেলাতেও ছবিটা খুব আলাদা নয়। পানের বরজ ও ফুল উৎপাদনের জন্য জেলা পরিষদে এসেছিল দেড় কোটিরও বেশি টাকা। প্রায় সবটাই পড়ে রয়েছে তহবিলে।
নামখানায় ভাঙছে বাঁধ। আয়লার পরে বাঁধ তৈরির বরাদ্দ খরচ হয়নি তিন বছরেও।—ফাইল চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদ দখল নিয়ে রাজনৈতিক ডামাডোল চলার পর প্রশাসক বসেছে ২০১২ সালের এপ্রিলে। উন্নয়নের নিরিখে অবশ্য তার আগে-পরে খুব কিছু তফাত হয়নি। মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’, ‘গীতাঞ্জলি’, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালনের মতো বেশ কিছু প্রকল্প। এমনকী কোন প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে, কত খরচ হয়েছে, তার হিসেবও নেই। এমনকী রাস্তার মতো বিষয়েও জেলা প্রশাসন অন্ধকারে। কত রাস্তা রয়েছে তার তত্ত্বাবধানে, কত রাস্তা সারানো দরকার, তার তথ্যই নেই।
কেন উন্নয়নে এমন অচলাবস্থা? ২০০৮ সালে পঞ্চায়ত নির্বাচনে জেলা পরিষদ দখলে রাখে বামেরা, কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ যায় তৃণমূলের দখলে। ফলে রাজনৈতিক কোন্দলে প্রথম থেকেই বারবার থমকে থাকে কাজ। লোকসভা ভোটের পরেই স্থায়ী সমিতিগুলি নিষ্ক্রিয় করে দেয় তৃণমূল। ফলে দীর্ঘদিন স্থায়ী সমিতির বৈঠক হতে পারেনি। সমিতির অনুমোদন না পাওয়ায় কোনও প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। এ রকম নড়বড়ে অবস্থার মধ্যেই ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে সভাধিপতির ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রশাসক বসিয়ে দেয় তৃণমূল সরকার। গত এক আর্থিক বর্ষে এই জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকেই।
কিন্তু দীর্ঘ দিন জেলা পরিষদ কার্যত অচল থাকায় সরকারি প্রকল্পগুলি গতি হারিয়েছে। নিজ ভূমি নিজ গৃহের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও এগোয়নি, কারণ জমির পাট্টা দেওয়া যায়নি। বৃদ্ধ, আতুরদের খাদ্য দেওয়ার প্রকল্প ‘সহায়’ কার্যত শুরুই করা যায়নি অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে টাকা পড়ে থাকলেও সংখ্যালঘুদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়া যায়নি। একই হাল জেলার ব্যারাকপুর ও বসিরহাটে মহকুমার পঞ্চায়েতগুলিতেও। মোট বরাদ্দের এক- তৃতীয়াংশই খরচ করেনি জেলা পরিষদ।
সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে বাগদা, গাইঘাটা বা হাবরার মতো কৃষিপ্রধান এলাকাগুলি। প্রচুর সব্জি উৎপন্ন হয় এইসব এলাকায়। কিন্তু দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এই সব এলাকায় সরকারি হিমঘর তৈরি হয়নি। মার খাচ্ছে সব্জি। ওই এলাকাগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী কিষান মান্ডির শিলান্যাস করলেও আজও তা তৈরি হয়নি। গত পাঁচ বছরে এই জেলায় বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে বারাসত ২ নম্বর ব্লকের শাসন। পঞ্চায়েতের ত্রি-স্তরেই রাজনৈতিক কোন্দলে সেই শাসনের রাস্তাঘাট তো দূরের কথা, ইন্দিরা আবাস, রাজ্য শিশু শিক্ষা মিশনের মতো প্রকল্পগুলিতে কোনও কাজই হয়নি।
  খরচের খতিয়ান (উত্তর ২৪ পরগনা)
২০১২-১৩ সালের হিসেব
 
কিছু প্রকল্প যাতে বরাদ্দের এক টাকাও গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি
• ত্বরান্বিত গ্রামীণ জল সরবরাহ (৮ লক্ষ)
• তফসিলি জাতি ও উপজাতি উন্নয়ন নিগম (৬ লক্ষ)
• ঘূর্ণিঝড় ত্রাণ (৭ লক্ষ)
• নিয়ন্ত্রিত বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়ন (১১ লক্ষ)
• ক্রীড়া (১৭ লক্ষ)
• জিআইএ সড়ক যোজনা (৪৮ লক্ষ)
• হেলেঞ্চায় তফসিলি জাতি ও উপজাতির হস্টেল (৩৯ লক্ষ)
• মৎস্য আপৎকালীন তহবিল (১৩ লক্ষ)
• জেলা পরিকল্পনা (৯ লক্ষ)
• বিএমএস- স্বাস্থ্য (১২ লক্ষ)
• জওহর রোজগার যোজনা (৫ লক্ষ)
• বারাসতে ফ্লাডলাইট (১২ লক্ষ)
• স্বনির্ভর গোষ্ঠী (৫৫ লক্ষ)
• বাড়ি ও রাস্তা নির্মাণ (২৭ লক্ষ)
• চণ্ডীপুর জিএস কলোনি (১৪ লক্ষ)
• রাস্তা ও সেতু (পূর্ত) (২৩ লক্ষ)
কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে
প্রকল্প হাতে মোট টাকা পড়ে আছে খরচ হয়েছে (%)
পানের বরজ ও ফুল উৎপাদন ১.৫৬ কোটি
প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয়
যোজনা- স্বাস্থ্য
১৬ লক্ষ
বিধায়কের এলাকা
উন্নয়ন তহবিল
১.৩৭ কোটি
সাংসদের উন্নয়ন তহবিল
(টাকি রোড)
৪৫ লক্ষ
সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ৪.৪৬ কোটি
প্রাণিকল্যাণ ৫১ লক্ষ
পূর্ত/সড়ক সেস ২.৪৭ কোটি
টোটাল স্যানিটেশন ক্যাম্পেন ১১.৯২ কোটি
সংখ্যালঘু উন্নয়ন ১.৯১ কোটি
কৃষি প্রকল্প ৩২ লক্ষ
কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার
ম্যানেজমেন্ট ইনিশিয়েটিভ
২৯ লক্ষ
গ্রামীণ জল সরবরাহ ৫৮ লক্ষ
শহর ও গ্রাম পরিকল্পনা ৫৭ লক্ষ
ইন্দিরা আবাস যোজনা ৩.১১ কোটি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.