অবাক স্থানীয়রা
শামিমার প্রচারে এত বাইরের লোক কেন
পাঁচ বছর ধরে যিনি ছিলেন দলের ‘উন্নয়নের মুখ’, এ বার তিনি নিজের মুখরক্ষা করতে পারবেন তো?
নানা মহলে তো বটেই, প্রশ্নটা উঠছে তাঁর দলের অন্দরেও। একে তো গতবারের জেতা আসন থেকে এ বার তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে অন্য আসনে। তার উপরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে গোটা প্রচার-পর্বে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর ক্ষেত্রে প্রায় নিষ্ক্রিয়ই থেকেছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা ঘিরেও ছড়িয়েছে নানা গুঞ্জন। বিরোধী হিসেবে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি এবং সিপিএম।
নানা ‘অস্বস্তি’র মধ্যে প্রচার-পর্ব সারলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদায়ী জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের শামিমা শেখ। গত বারের (২০০৮ সাল) ভোটে বাঁকড়াহাট জেলা পরিষদের ৬৩ নম্বর আসন থেকে জিতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূলের ‘উন্নয়নের মুখ’। তৃণমূল তখন বিরোধী আসনে। পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম যে দু’টি জেলা পরিষদ বামেদের হারাতে হয়েছিল, তার একটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা। শামিমাকে জেলা সভাধিপতি হিসেবে তুলে ধরে তৃণমূল উন্নয়নের নানা আশ্বাস দিয়েছিল। জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানেই সভা করেছেন, সেখানেই দেখা গিয়েছে শামিমাকে। কিন্তু এ বার ওই আসনটি তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় শামিমাকে দাঁড়াতে হয়েছে বিষ্ণুপুরের ৬৫ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে। কিন্তু পাঁচ বছরে জল গড়িয়েছে অনেক। আগে দলের যে সমর্থন পেয়ে এসেছেন শামিমা, এ বার তা কোথায়? দলের জেলা নেতৃত্বের একটা বড় অংশই বলছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটাঝাড়ে জড়িয়ে গিয়েছে শামিমার ভোট-ভাগ্য। বিষ্ণুপুর-২ ব্লকের চক-এনায়েতনগর, চণ্ডী, পঞ্চানন ও গোবিন্দপুর-কালীচরণ এই চারটি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে ওই জেলা পরিষদ আসন। প্রচার-পর্বে শামিমাকে যে সব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বেরোতে দেখা গিয়েছে, তারা বেশির ভাগই বহিরাগত। যাঁদের দেখে অবাক স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
কেন এত দ্বন্দ্ব?
জেলা তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জন। সব চেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে পাঁচ বছরে শামিমা ও তাঁর স্বামী রমজান আলির জমি কেনাবেচার ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠা। যা মানতে পারছেন না জেলা তৃণমূলের অনেক নেতাই। বেশ কয়েক মাস আগেই বিষয়টি পৌঁছয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত। মমতা জেলা পরিষদের বিভিন্ন বৈঠকে শামিমার কাজ এবং জেলা পরিষদ পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেন। কেউ কেউ আড়ালে-আবডালে এ-ও অভিযোগ তুলছেন, রমজান জেলা পরিষদ পরিচালনার কাজে হস্তক্ষেপ করতেন। জোর করে কৃষিজমি দখল করতেন। এমনকী, জমি ব্যবসার জন্য শামিমা-রমজান বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিয়েও শোধ না করায় (এ নিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল একটি ব্যাঙ্ক) দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ভাবছেন অনেক নেতাই।
বিষ্ণুপুর এলাকার এক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা বলেন, “শামিমা এখানকার জেলা পরিষদ আসনে বহিরাগত। বাঁকড়াহাটের দলীয় কর্মীদের নিয়েই নির্বাচন পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন শামিমা। এখানকার দলীয় কর্মীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে, তাঁদের একটা বড় অংশ নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তার উপরে রমজানের ঔদ্ধত্যও লোকজন ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।”
শামিমা অবশ্য এই ‘অস্বস্তি’কে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তিনি বলেন, “দলের কয়েক জন একটু বিরূপ হয়েছেন। তবে, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ কানে আসছে, সবই মিথ্যা। জমি কেনাবেচা আমাদের পরিবারিক ব্যবসা। সেখানে কোনও দুর্নীতি হয়নি। অপপ্রচারে ভোটের ফলে কোনও প্রভাব পড়বে না।” একই সুরে তাঁর স্বামী রমজানও বলেন, “কিছু লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে কুৎসা করছে। ভোটে তারা সুবিধা করতে পারবে না।”
কিন্তু বিরোধী দলের প্রতিপত্তিও তো কম নয়! ওই আসনটিতে গত বার জিতেছিল সিপিএম (যদিও বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে)। এ বার এখানে বিজেপির উত্থানও চোখে পড়ার মতো। বছর দুয়েক ধরে বিষ্ণুপুর-১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক সংগঠনে প্রভাব বাড়িয়েছে তারা। গ্রামগুলির সর্বত্রই তৃণমূল বা সিপিএমের দলীয় পতাকার পাশে জায়গা করে নিয়েছে পদ্মফুলও। প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার না করে প্রচারে বিজেপি পঞ্চায়েত আইনের সুবিধার বিষয়গুলি তুলে ধরেছে। কংগ্রেস বাড়ি বাড়ি গিয়ে শামিমার ‘বহিরাগত’ পরিচিতিকেই বেশি করে তুলে ধরেছে। সঙ্গে জুড়েছে তাঁদের জমি ব্যবসার ফুলে-ফেঁপে ওঠার কাহিনি। সিপিএম অবশ্য প্রচারে এই এলাকায় জেলা পরিষদের ‘অনুন্নয়ন’ এবং ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণকেই হাতিয়ার করেছে।
এতেও অবশ্য দমছেন না শামিমা। তাঁর দাবি, “আমাকে জেলার সব মানুষই ভালবাসেন। গত দু’বছর জেলা পরিষদে খুব সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছি। মানুষ আমাকেই জেতাবেন। বিরোধীদের মুখ পুড়বে।”
শামিমার ভোট-ম্যানেজারদের কপাল কিন্তু কুঁচকেই রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.