কাকভোরে ঘুম চোখে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে হাজির মিঠুন মণ্ডল। এক কাপ স্পেশাল চায়ের অর্ডার দিয়ে সরু মাচায় বসে পড়লেন। ভোর রাতে লোডশেডিং হওয়ায় একটু আয়েশ করে ঘুম দিতে মাচার দিকে পা বাড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ জামাল মণ্ডল। কিন্তু কোথায় কী? সব তো ভোঁ ভাঁ। বড় আশা নিয়ে ঘুম চোখে দু’জনেই যার দিকে পা বাড়িয়েছিলেন সেই মাচা কোথায়?
উত্তর দিল প্রশাসন। জানা গেল ভোটের ঠেলায় ডোমকলের গ্রামে গ্রামে এখন ‘মাচা নিধন’ চালানো হচ্ছে। তাদের দাবি, মাচাই গণ্ডগোলের গোড়া। ভোটের আগে গ্রামের যাবতীয় ঝামেলার উৎপত্তি এই মাচা থেকেই। তাই ভোটের আগে রাজন্যতিক সন্ত্রাস এড়াতে উদ্যোগ।
কেবল চায়ের দোকান নয়। পাড়ার শান্ত মাচাটাও ভোটের দিন এগিয়ে আসতেই গরম হয়ে উঠছে। তাই প্রথমে পুলিশ এলাকার বাসিন্দাদের মাচা তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় প্রশাসনই সরিয়ে দিচ্ছে মাচা। |
পুলিশের দাবি, কখনও মাচায় বসে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি, কখনও বা মাচা থেকে পথ চলতি বিপক্ষের লোকদের দিকে ছুড়ে দেওয়া বাক্যবাণ থেকে বোমাবাজি। এমন ঘটনা নতুন নয়। ডোমকলের আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “ডোমকলের ভোটকে কেন্দ্র করে যে গণ্ডগোল হয়েছে, তা প্রায়ই এই
মাচা থেকেই।”
পুলিশের দাবি যে অমূলক নয়, সেটা বোঝা গেল কংগ্রেস নেতা রায়পুর পঞ্চায়েতে বিদায়ী প্রধানের কথায়ও। তাঁর কথায়, “আড্ডার জন্যই মাচায় বিভিন্ন শ্রেণির এবং দলের মানুষ জড়ো হন। আর ভোটের সময় কথা প্রসঙ্গে ওঠে রাজনীতির কথা। ছড়ায় গণ্ডগোল।”
তবে মাচা প্রসঙ্গে কামুড়দেয়াড় গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক আমজাদ আলি শেখের বক্তব্য, “চায়ের দোকানের মাচা আর পাড়ার মাচার মধ্যে তফাত আছে। গাছের ছায়ায় রাস্তা লাগোয়া ওই মাচাগুলি গ্রামের হৃদপিণ্ড। দিনান্তে হাড়ভাঙা খাটুনির পর সেখানেই একটু লম্বা নিশ্বাস ফেলে। পুলিশ সমাজবিরোধীদের দিকে একটু নজরদারি বাড়ালেই ওই মাচা উচ্ছেদ করার দরকার হত না।”
কারও কারও ঝরে পড়ছে ক্ষোভও। কুপিলার মিঠুন মণ্ডলের কথাই ধরুন না। তাঁর দাবি, “আমাদের তো চেয়ার-টেবিল নেই! সার দিন কাজের শেষে মাচায় বসে এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে ভাল লাগে এই যা। সেটুকুও বন্ধ করে দিল পুলিশ।” |