নাদার পাশে খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে জোড়া বলদ। একটি লালচে। অন্যটি শ্যামলা। নাদায় সবুজ ঘাসের গোখাদ্য। ডান হাত দিয়ে নাদায় খইলের গুড়ো মিশিয়ে দিয়ে বাঁ হাত দিয়ে গরুর গলায় পরম আদরে হাত বুলিয়ে দিলেন প্রৌঢ় মাধব মণ্ডল। ওই গরুই গাড়ি টেনে ভোটের বাক্স আর ভোটকর্মী বয়ে নিয়ে যাবে বুথে। ফের বুথ থেকে সেক্টর অফিসে।
গেরস্থের যত্নের আধিক্য থেকে বঞ্চিত নয় গরুর গাড়িও। গাড়ির চাকায় রেড়ির তেল দেওয়ার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। ভগবানগোলা ২ ব্লকের টিকলির চরের মাধব মণ্ডল বলেন, “কতকগুলো ব্যালট বাক্স, সরকারি ভোটকর্মী ৫-৭ জন, আর কয়েক জন পুলিশ কর্মীকে কাদাবালির রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে আড়াই কিলোমিটার দূরের বুথে। সে কি চাট্টিখানি কথা?” তিনি একা নন, নির্মলচরের ৬টি বুথের জন্য নির্বাচন কমিশনের ‘অধিগ্রহণ’ করা ৬টি গরুর গাড়ির চালকই বেশ ব্যস্ত। গোটা জেলায় সেই সংখ্যাটা তিনশোরও বেশি। জেলার গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকরিক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “ভরা শ্রাবণে ভোটের দিন। ফলে বৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী ধরে নিয়ে দুর্গম এলাকার বুথে ব্যালট বাক্স ও ভোটকর্মীদের নিয়ে যাওয়া-আসার কাজে ৫১৯টি সেক্টরের জন্য অন্তত ৩০০টি গরুর গাড়ি ভাড়া করতে বলা হয়েছে বিডিও-দের।” |
তিনি বলেন, “এ ছাড়াও থাকছে ২৮০টি ট্রাক্টর। জলকাদায় যে সব যায়গায় অন্য যানবাহন চলতে পারবে না, সেখানের জন্য ট্রাক্টর ভাড়া করা হয়েছে। ভোটের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন কাদায় আটকে যেতে পারে। ওই সমস্যা সমাধানে ৫টি মহকুমার জন্য ৫টি ‘আর্থ রিমুভার’ (জেসিপি) যন্ত্র ভাড়া করা হয়েছে। কোথাও ধসের ফলে রাস্তা আটক গেলে ওই মেশিন দিয়ে রাস্তার সারানো যাবে।” ওই এলাহী আয়োজনের মধ্যে গরুর গাড়ির ভাড়া নিয়ে একটু গোল বেঁধেছে। গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিক বলেন, “বিডিও-দের বলেছি স্থানীয় ভাবে সামঞ্জস্য রেখে গরুর গাড়ির ভাড়া ঠিক করতে।” ভগবানগালা ২ নম্বর ব্লকের বি ডি কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বুথে ভোটকর্মী ও ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া ও ভোটের পর বুথ থেকে সেক্টর অফিসে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিটি গরুর গাড়ির ভাড়া ৫০০ টাকা ধরা হয়েছে।”
তাতে সন্তুষ্ট নন গরুর গাড়ির মালিকেরা। খড়গ্রামের একটি গরুর গাড়ির মালিক হাফিজুল হাসান বলেন, “ভোটের আগের দিন দুপুর থেকে ভোটের পর দিন ভোর পর্যন্ত তিন দিনের ধাক্কা। দু’টি বলদ আর একজন গাড়োয়ান মিলে তিনটি প্রাণী তিন দিন ধরে আটকে থাকবে। বলদ আর গাড়োয়ানের খাবারেই ওই টাকা ফুরিয়ে যাবে। তাই আমাদের হাজার টাকা করে দেওয়া হোক।” তাঁরা ভাড়ার চেয়েও বেশি চিন্তিত গরুর খাবার আর বৃষ্টির সময়ের আচ্ছাদন নিয়ে। হাফিজুল বলেন, “বর্ষার সময় সর্বত্র সবুজ ঘাস মিলবে। ফলে গরুর খাবারের থেকেও বেশি সমস্যা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া নিয়ে। ভাড়া পুষিয়ে দিলে গাড়ির উপর ছই বানাতাম। কিন্তু হল কই?” জেলা প্রশাসনের কর্তা বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে রক্ষা পেতে গরুর গাড়ির জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা রয়েছে।” |