|
|
|
|
সারদা কেলেঙ্কারির ছায়া শারদোৎসবে |
অর্থসঙ্কটের আঁচ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
পুজোর আকাশে দুর্যোগের পূর্বাভাস! দুশ্চিন্তায় উদ্যোক্তারা।
ঝড়-বৃষ্টি নয়, এই দুর্যোগ অর্থাভাবের। তার ইঙ্গিত দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে নেমেই পাচ্ছেন বিগ বাজেট পুজোj উদ্যোক্তারা। মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেই দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে যে সব সংস্থা পুজোয় টাকা ঢেলেছিল, এ বার তাদের একাংশ হাত তুলে নিচ্ছে! এর অধিকাংশই অর্থলগ্নি সংস্থা। সারদা কেলেঙ্কারির জেরে যাদের অনেকেই ইতিমধ্যে পথে বসেছে। খড়্গপুরের এক উদ্যোক্তার কথায়, “গেল বছরও বাজেটের একটা বড় অংশ স্পনসর থেকে এসেছিল। বাকিটা স্থানীয় বাসিন্দা এবং ক্লাব সদস্যদের চাঁদা। সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণা ফাঁস হতেই যত বিপত্তি। শহরের এমন কিছু সংস্থা প্রতি বছর পুজোয় টাকা দেয়। এ বার বলছে, পারবে না। এই অবস্থায় জাঁকজমক করে পুজো হবে কী করে?”
দুই শহর এবং শহরতলিতে বেশ কিছু বিগ বাজেটের পুজো হয়। পুজো কমিটিগুলো নানা থিম তুলে এনে দর্শকের মন জেতার চেষ্টা করে। লড়াইও চলে। এ লড়াই জাঁকজমক, জৌলুসের। পুজোর আনন্দ আরও রঙিন করতে দুই শহরের অধিকাংশ পুজো মণ্ডপের আশপাশই রঙবেরঙের আলো দিয়ে সাজানো হয়। কোথাও টুনি বাল্ব, কোথাও বা এলইডি আলোর ঝলকানি। আর এ জন্য পুজোর বাজেটও বেড়ে চলে। বিগ বাজেটের পুজোগুলোয় খরচের একটা বড় অংশই আসে স্পনসর থেকে। সে ক্ষেত্রে স্পনসররা যদি হাত তুলে নেয়, তাহলে পুজোর জাঁক ধরে রাখা মুশকিল। |
শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র। |
রেলশহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম বাবুলাইন সর্বজনীন। এ বার ৮৭তম বর্ষ। গেল বছর বাজেট ছিল ১৪ লক্ষ টাকা। ইচ্ছে থাকলেও এ বার বাজেট বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য প্রশান্ত ঘোষ। তাঁর কথায়, “শীঘ্রই মিটিং হবে। সেখানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে বাজেট আগের বছরের থেকে বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বাজারের যা অবস্থা!” মেদিনীপুরের অন্যতম বিগ বাজেটের পুজো বার্জটাউন সর্বজনীনের এ বার পুজোর ৬৭তম বর্ষ। গত বছর বাজেট ছিল ৯ লক্ষ টাকা। এ বার? ইতিমধ্যে পুজোর নতুন কমিটি হয়েছে। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দুর্গাপদ চক্রবর্তী বলেন, “বাজেট গত বারের মতো থাকবে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা করতে হবে।”
সেই অর্থে বিগ বাজেট নয়, এমন পুজো উদ্যোক্তারাও স্বস্তিতে নেই। যেমন মেদিনীপুর অশোকনগর সর্বজনীন। পুজো কমিটির সাংস্কৃতিক বিভাগের সম্পাদক কল্যাণময় ঘোষের কথায়, “হারিয়ে যাওয়া শিল্পসংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতি বছর একাদশীতে যাত্রাপালার আয়োজন করি। পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ বারও যাত্রা হবে। সঙ্গে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সামর্থ্য মতো পরিকল্পনা করা হবে।” রেলশহরের মালঞ্চ আদিপুজো কমিটির অন্যতম সদস্য শান্তনু মাইতি বলছিলেন, “একটা মিটিং হয়েছে। বাজেট গেল বছরের মতো থাকবে। সে ভাবে বাড়ানো হবে না। আমাদের পুজো যেমন হয়, তেমনই হবে। পরবর্তী দিনে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।”
প্রতিটি পুজো কমিটি এলাকার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। বাসিন্দারা সাধ্যমতো চাঁদা দেন। সঙ্গে পুজো কমিটির সদস্যরাও চাঁদা দেন। কিন্তু, তা দিয়ে তো আর বিগ বাজেটের পুজো করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে নানা সংস্থার স্পনসরশিপই ভরসা। ফেস্টুন-ফ্লেক্স-বিজ্ঞাপন থেকে বাজেটের একটা বড় অংশ উঠে আসে। পুজোর বাকি আড়াই মাস। লগ্নি সংস্থাগুলি অবশ্য এখনই জানাচ্ছে, বাজারে মন্দা চলছে। এ বার আর বেশি টাকা দেওয়া যাবে না। এ দিকে, বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। মৃৎশিল্পী থেকে মণ্ডপ শিল্পী, সকলেই বেশি টাকা চাইছেন। অতএব সাধ থাকলেও সাধ্য থাকছে না উদ্যোক্তারাদের! মেদিনীপুর শহরের এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, “শুধু গেল বছর কিংবা তার আগের বছর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই জৌলুসের নেপথ্যে বিভিন্ন সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। হঠাৎ করে ওই সব সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিলে সমস্যা তো হবেই। সে ক্ষেত্রে হয় বাজেট কাঁটছাঁট করতে হবে। না হলে বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে।” |
|
|
|
|
|