|
|
|
|
খড়্গপুর আইআইটি |
স্থায়ী ডিরেক্টর চেয়ে অনশন শিক্ষকদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
আন্দোলনে নেমেছিলেন আগেই। এ বার প্রতীকী অনশনে বসলেন খড়্গপুর আইআইটির শিক্ষকেরা। অধ্যাপক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীকে স্থায়ী ডিরেক্টর পদে নিয়োগের দাবিতে বুধবার দিনভর ‘খড়্গপুর আইআইটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র এই আন্দোলন চলে। তবে এর জেরে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেনি। আগামী ২৭ জুলাই সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর আগে আইআইটি চত্বরে মৌন মিছিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই শিক্ষক সংগঠন। সমাবর্তনে উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পল্লব রাজুর। তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণেই ওই কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আইআইটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রায় ৪২৫ জন। কিন্তু এ দিন অনশনে সামিল হন শ’খানেক শিক্ষক। এ প্রসঙ্গে শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্র সিংহের বক্তব্য, “সকলে মিলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গরমের ছুটি বলে অনেকে বিদেশে রয়েছেন। অনেকে কখনও ল্যাবরেটরিতে যাচ্ছেন, কখনও এসে বসছেন।” তবে আইআইটি সূত্রের খবর, এক জন শিক্ষককে স্থায়ী ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে সংগঠনের এই আন্দোলনে একাংশ শিক্ষক সমর্থন করছেন না। রাজেন্দ্রবাবু অবশ্য বলেন, “উনি দক্ষ এবং সৎ। তাছাড়াও মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক তাঁকে ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করার জন্য পদক্ষেপ করেছে বলে জানতে পেরেছি। তাই দ্রুত নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।” |
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সাংবাদিক সম্মেলন। |
২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে খড়্গপুর আইআইটিতে স্থায়ী ডিরেক্টরের পদটি শূন্য। অস্থায়ী ভাবে ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অধ্যাপক শঙ্করকুমার সোম। মাঝে স্থায়ী ডিরেক্টর পদে নিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করে। আইআইটি সূত্রে খবর, অনেকেই ওই পদের জন্য আবেদন করেন। শিক্ষক সংগঠনের দাবি, তাঁদের মধ্যে পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীকেই উপযুক্ত হিসেবে নির্বাচন করে ‘সার্চ কমিটি’। কিন্তু তাঁকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। কারণ, ‘কোল নেট কেলেঙ্কারি’তে পার্থপ্রতিমবাবুর নাম জড়িয়ে পড়ায় সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিটির ছাড়পত্র মেলেনি।
কোল নেট কেলেঙ্কারি কী? আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ২০০১ সালে খড়্গপুর আইআইটি একটি প্রকল্প পেয়েছিল। কোল ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা সব জায়গা কম্পিউটার পরিচালিত করার ওই প্রকল্প রূপায়ণের সময় কোল ইন্ডিয়ার কিছু শর্ত উপেক্ষা করার অভিযোগ ওঠে। তাতে তৎকালীন আইআইটি-র শিক্ষক আর এন ব্যানার্জী, এ কে ভৌমিক (ডিন, স্রিক) ও পার্থপ্রতীম চক্রবর্তীর নাম জড়ায়। সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করায়। তবে পার্থপ্রতিমবাবুর বিরুদ্ধে তেমন কিছুই মেলেনি বলে আইআইটি সূত্রে খবর। তাই আইআইটি-র পরিচালন সমিতিও পার্থপ্রতিমবাবুকে ‘ক্লিন চিট’ দেয়। শিক্ষক সংগঠনের দাবি, পরিচালন সমিতি ২০১২ সালের মার্চে ও ২০১৩ সালের মার্চে দু’বার ‘ক্লিন চিট’ দেয়। সেই তথ্য কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠানোও হয়েছিল। তারপরেও সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন ছাড়পত্র দিচ্ছে না। সংগঠনের দাবি, সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনে তথ্য জানানোর পর দু’মাসের মধ্যে পদক্ষেপ করার কথা। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে ৪ পরেও ভিজিলেন্স কমিশন নীরব। এ বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, দেখা করার জন্যও আবেদন জানানো হয়। তবে সুফল মেলেনি। পাওয়া যায়নি দেখা করার অনুমতি। তাই আন্দোলনের নেমেছে আইআইটির শিক্ষক সংগঠন। |
স্থায়ী ডিরেক্টর নিয়োগের দাবিতে বুধবার প্রতীকী অনশন করলেন খড়্গপুর আইআইটির শিক্ষকেরা। |
তবে আন্দোলন নিয়ে শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, পার্থপ্রতিমবাবুকেই যে সার্চ কমিটি ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করতে চায় তার কী প্রমাণ? আইআইটি-র পরিচালন সমিতির দু’বার ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ারও নথি প্রকাশ করা হয়নি। আইআইটি-র ওই শিক্ষকদের বক্তব্য, “আইআইটি-র শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অকারণ কালিমা লেপে দেওয়া হচ্ছে, স্থায়ী ডিরেক্টর নিয়োগ করা হোক, এ ব্যাপারে দাবি জানানোই যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে আন্দোলন হচ্ছে তাতে পরিষ্কার, ওই বিষয়গুলি বড় কথা নয়, কোনও একজন ব্যক্তিকে ডিরেক্টর করার দাবিই বড় হয়ে উঠেছে।” বিভিন্ন পোস্টারেও তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোথাও লেখা, ‘রেস্টোর দ্য ডিগনিটি অফ আইআইটি, খড়্গপুর অ্যান্ড প্রফেসর পি পি চক্রবর্তী, ডিরেক্টর সিলেক্ট’ বা ‘আওয়ার সলিডারিটি উইথ পি পি চক্রবর্তী, ডিরেক্টর সিলেক্ট’। তারই সঙ্গে কোথাও কোথাও রয়েছে, ‘স্টপ ফলস অ্যালিগেশন এগেনস্ট ফ্যাকাল্টি অব আইআইটি খড়্গপুর,’ বা ‘ওল্ডেস্ট অ্যান্ড স্ট্রঙ্গেস্ট আইআইটি, ডু নট ক্রিয়েট ফিয়ার সাইকোসিস’। এতেই আপত্তি অনেক প্রবীণ শিক্ষকের। এ বিষয়ে বর্তমান অস্থায়ী ডিরেক্টর শঙ্করকুমার সোম বলেন, “এ ক্ষেত্রে আমার কী বলার রয়েছে। শুনেছি, একটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে।” যাঁর জন্য আন্দোলন সেই পার্থপ্রতিমবাবু অবশ্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
|
|
|
|
|