উপনির্বাচনে হাওড়া লোকসভা জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু সাঁকরাইল বিধানসভা এলাকাটি একনও গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে তাদের। আর সিপিএমের ভরসাও সেই সাঁকরাইলই।
গ্রামীণ হাওড়ার এই বিধানসভা এলাকাটিকে লোকসভা নির্বাচনে এগিয়েছিল সিপিএম। দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা এলাকারও কিছুটা এলাকা পঞ্চায়েতে। সেখানেও এগিয়ে ছিল সিপিএম।
তবে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীন পাঁচলা এবং ডোমজুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলই এগিয়ে ছিল। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল।
এই উদয়নারায়ণপুরই ছিল এক সময়ে সিপিএমের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত। তা হলে সিপিএম কী ভাবে ফিরে আসতে চাইছে? জেলা সিপিএমের বক্তব্য, হাওড়ায় বামফ্রন্টের পতন শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই। ওই বছর জেলায় ১৫৭টির মধ্যে বামফ্রন্টের দখলে থাকা ১২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশই চলে আসে বাম বিরোধীদের হাতে। একই ফল হয় পঞ্চায়েত সমিতিতে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১৬টি আসনের সব ক’টিতে পরাজিত হয় তারা। কিন্তু তারপরেও পরিবর্তনের মাত্র দু’বছরের মধ্যে দু’টি বিধানসভা এলাকায় শাসক দল যে ভাবে পিছিয়ে পড়েছে, সেটাকেই প্রত্যাবর্তনের সুযোগ হিসাবে নিতে চাইছে সিপিএম। তাদের দাবি, ২০০৮ সালের বামবিরোধীদের সাফল্যের প্রধান কারণ ছিল গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে মহাজোট। কিন্তু জেলা পরিষদ স্তরে সেই জোট না হওয়ায় তা বামফ্রন্টের দখলেই থেকে যায়। এ বারে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপি পৃথক ভাবে লড়াই করছে। তাই ভোট কাটাকাটির আশাতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে বামফ্রন্ট।
তৃণমূলের হয়ে প্রচারের রাস তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। হাওড়ায় ইতিমধ্যেই দু’টি বড় জনসভা করেছেন। দফায় দফায় জেলায় প্রচারে এসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়, তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল যুবার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা। জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তাঁরা। পথসভা, রোড শো-এ অংশ নিয়েছেন। পোস্টার ফেস্টুন দেওয়াল লিখনে ছেয়ে গিয়েছে জেলা।
বামফ্রন্টে প্রচারের মূল দায়িত্বটি নিয়েছে বড় শরিক সিপিএমই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি জনসভা করেছেন। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মতো নেতারা একাধিক জনসভা করেছেন। তবে জনসভা হয়েছে জোনাল কমিটি ভিত্তিক। একটি জোনাল কমিটির সভায় অন্য জোনাল কমিটির কর্মী সমর্থকদের আসতে মানা করে দেওয়া হয়েছিল। জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, “আমরা দেখতে চেয়েছিলাম যে জোনাল কমিটির অধীনে জনসভা হচ্ছে, তারা কতটা জমায়েত করাতে পারে। এতে আমাদের শক্তিও বোঝা যাবে।”
দু’পক্ষেরই দাবি, সভাগুলিতে ভিড় দেখে মনে হয়েছে মানুষ তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন।
কিন্তু আপাতত দু’পক্ষের অবস্থাই প্রায় কাছাকাছি। অঙ্কের হিসেবে কিছুটা এগিয়ে তৃণমূলই। মাত্র মাসখানেক আগেই হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু তাঁদের গলার কাঁটা হয়ে রয়ে গিয়েছে গ্রামীণ হাওড়ার সাঁকরাইল ও দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট। দক্ষিণ হাওড়ার কিছুটা পঞ্চায়েত এলাকা। সাঁকরাইল পুরোটাই পঞ্চায়েত এলাকা। এই দুই বিধানসভা কেন্দ্র এলাকাতেই এগিয়ে ছিল সিপিএম।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের তাই দাবি, “চাকা ঘুরছে। মানুষ আমাদের দিকে ফিরে আসছেন।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য বলেন, “সিপিএম যতই চিৎকার করুক, পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই বিপুল সাফল্য পাব আমরা।” |