বাম টুপিতে সাফল্যের পালক, তবে ব্যর্থতার কাঁটাও কম নয়
স্ব-মূল্যায়ণের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সেরার শিরোপা পেয়েছে হাওড়া জেলা পরিষদ। নিজস্ব তহবিলে জমা রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) টাকায় ভালো কাজ করার পুরস্কার যা পেয়েছে, তাতে নিজস্ব তহবিলের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও প্রায় দেড় কোটি টাকা, যা জেলা পরিষদের কর্তারা ইচ্ছামতো উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারবেন। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসাপত্রও মিলেছে।
কিন্তু সাফল্যের টুপিতে পালকের সঙ্গে রয়েছে কাঁটাও। যেমন কুলিয়াঘাটে সেতু তৈরিতে ব্যর্থতা। ২০০৬ সালে এই সেতু তৈরির দায়িত্ব পায় জেলা পরিষদ। কিন্তু একের পর এক টেন্ডার করেও কোনও ঠিকা সংস্থাকে রাজি করানো যায়নি। জেলা পরিষদের কৈফিয়ত, বরাদ্দ ছয় কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে আট কোটি টাকা করলেও কেউ কাজ করতে রাজি হয়নি। ফের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯ কোটি টাকা করার অনুরোধ জানিয়ে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের কাছে আবেদন করেছে জেলা পরিষদ। শুরুই হয়নি প্রকল্প।
অথচ কুলিয়াঘাটের সেতুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনানের ভাগ্য। রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ঘেরা এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র উপায় হল নৌকা। স্থলপথে যোগাযোগের অভাবের ফলে এই এলাকায় গড়ে ওঠেনি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের পাকা রাস্তা। হাসপাতাল তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও চিকিৎসক আসতে না-চাওয়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে।
দলীয় রাজনীতির ফাঁসেও আটকে পড়েছে হাওড়ার উন্নয়ন। পাঁচলা, ডোমজুড়, সাঁকরাইল, বালি-জগাছা এবং উলুবেড়িয়া-২, এই পাঁচটি ব্লকের ৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা যৌথভাবে করে থাকে কেএমডিএ এবং জেলা পরিষদ। এর শর্ত হল, কেএমডিএ টাকা দেবে, প্রকল্প রূপায়ণ করবে জেলা পরিষদ। কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই সব উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রয়েছে ৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। জেলা পরিষদ এবং কেএমডিএ পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩০ শতাংশ রাস্তা বেহাল হয়ে রয়েছে।
জেলা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে জেলায় যে সব রাস্তা তৈরি হয়েছে, তাদের দশা তথৈবচ। শর্ত ছিল, তৈরির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত রাস্তা বেহাল হলে তা সংস্কার করবে সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থা, তার পর জেলা পরিষদ। জেলার বহু রাস্তা তৈরির পাঁচ বছর পর থেকে বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু সেগুলি সংস্কারে আগ্রহ দেখায়নি জেলা পরিষদ। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। এর দায় অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপরেই চাপালেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্তারা। তাঁদের সাফাই, এই খাতে টাকা দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। না-দেওয়ার ফলেই কাজ করা যায়নি।
জেলার পর্যটনের উন্নয়নে গড়চুমুকে গড়ে উঠেছে ‘মৃগদাব’ হরিণ প্রকল্প। কিন্তু সামতাবেড়েতে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে ‘শরৎ স্মৃতিবন’ পর্যটনকেন্দ্র রয়ে-গিয়েছে খাতায়-কলমে। সার্কিট ট্যুরিজম প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ বছর আগে ৩৭ লক্ষ টাকা দিয়ে রেখেছে জেলা পরিষদকে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু হয়নি। এ দিকে অবিলম্বে কাজ শুরু করা না-হলে টাকা ফেরত দিতে হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার চাপ দিচ্ছে।
প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “আয় বাড়িয়ে জেলা পরিষদ যে ভাবে পুরস্কার পেয়েছে তাতে ফাঁকি রয়েছে। কেএমডিএ এলাকায় বাড়ি তৈরির অনুমতি দেয় জেলা পরিষদ। তার জন্য তারা মোটা টাকা নেয়। এই ভাবে আয় বাড়ানোর কোনও কৃতিত্ব থাকে বলে আমি মনে করি না। সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ব্যর্থ।” অন্যদিকে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি বামফ্রন্টের মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় এবং পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব কাজ করে ফেলেছি এই দাবি আমরা করি না। তবে সব প্রকল্পই আমরা শুরু করেছি। ভবিষ্যতে যাঁরা আসবেন আন্তরিকতা থাকলে তাঁরা এই সব কাজ শেষ করতে পারবেন।”
  খরচের খতিয়ান (হাওড়া) ২০১২-১৩ সালের হিসেব  
কিছু প্রকল্প যাতে বরাদ্দের এক টাকাও গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি
• ক্রীড়া ও যুব (১২ লক্ষ)
• পরিবহণ উন্নয়ন (৬ লক্ষ)
• প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা (২২ লক্ষ)
• সাংসদের উন্নয়ন তহহিল
বৃন্দা কারাট (১০ লক্ষ) ও সুলতান আহমেদ (৯ লক্ষ)
কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে
প্রকল্প হাতে মোট টাকা পড়ে আছে খরচ হয়েছে (%)
স্বজলধারা ৫৫ লক্ষ
হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার উন্নয়ন ২০ লক্ষ
জনস্বাস্থ্য ও জল সরবরাহ ৪২ লক্ষ
আমার ঠিকানা ৪.৫৯ কোটি
তথ্য ও সংস্কৃতি- প্রচার ২ লক্ষ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ৩৫ লক্ষ
বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল ১১ লক্ষ
ক্ষুদ্র সেচ ২ লক্ষ
সার্কিট ট্যুরিজম ১.৭৭ কোটি
সংখ্যালঘু অধুষিত জেলায়
বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প
৯.৪৬ কোটি
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন
১৪ লক্ষ
আশ্রয় ৮ লক্ষ
ইন্দিরা আবাস যোজনা ১ লক্ষ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.