|
|
|
|
|
|
|
১৯৯১ সালে তৎকালীন রাজ্যপাল ১) শ্রীমতী ‘এক্স’, ২) শ্রী ‘ওয়াই’ এবং ৩) শ্রী ‘জেড’ এই তিন জনকে দু’কাঠা ১৩ ছটাক জমি দান করেছিলেন। তাই তিন জনই এর জয়েন্ট ওনার। কিন্তু ‘ওয়াই’ ও ‘জেড’ কোনও রকম পার্টিশন ডিডের মাধ্যমে নিজেদের জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা না-করেই মারা গিয়েছেন। প্রথম মালিক শ্রীমতী ‘এক্স’ শুধু বেঁচে। তাঁর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। তিন মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন তিনি ওই জমিতে নিজের ভাগটি তাঁর একজন বিবাহিতা কন্যাকে উইল করে দিতে চান একজন ছেলেকে বঞ্চিত করেই। আমার প্রশ্ন
১) পার্টিশন ডিড না-করে কি উইল করা যাবে?
২) যে ছেলেকে উইলে বঞ্চিত করা হল, তিনি কি মা মারা যাওয়ার পর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আদালতে যেতে পারেন?
শুভব্রত সেনগুপ্ত
শুভব্রতবাবু, আপনার প্রশ্নটা পড়ে মনে হচ্ছে এটি একটি কলোনির জমি। এই ধরনের জমির ক্ষেত্রে ১০ বছরের একটি ‘বিধিনিষেধ’ বা ‘এমবার্গো’ থাকে। ওই ১০ বছরে অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জমি বিক্রি করা যায় না। তবে সেই ১০ বছরের বিধিনিষেধটি আপনার জমিতে আর লাগু হচ্ছে না।
তবে আপনার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আমার একটি প্রশ্ন আছে। আর সেটি হল, ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’-এর কোনও উত্তরাধিকারী আছেন কি না। মনে রাখতে হবে জমিটি অবিভক্ত। অর্থাৎ ‘আনডিভাইডেড’ ও ‘আনডিমারকেটেড’। এই অবস্থায় ‘ওয়াই’ ও ‘জেড’-এর উত্তরাধিকারী থেকে থাকলে, তাঁরা অবশ্যই অবিভক্ত ওই জমির স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী হয়ে রয়েছেন। আর যদি ‘ওয়াই’, ‘জেড’-এর কোনও উত্তরাধিকারী না থাকেন, তা হলে শ্রীমতী ‘এক্স’-ই হলেন ওই জমিটির বর্তমান মালকিন। আপনি বলছেন, ‘শ্রীমতী এক্স-এর তিন ছেলে এবং তিন বিবাহিতা কন্যা বর্তমান। এই অবস্থায় তিনি তাঁর একজন বিবাহিতা কন্যাকে উইল-এর মাধ্যমে সম্পত্তিটি দান করতে চান।’
আপনার প্রশ্নটি হল— নিজেদের মধ্যে পার্টিশন ডিড না-থাকা অবস্থায় শ্রীমতী ‘এক্স’ এক ছেলেকে বঞ্চিত করে বিবাহিতা কন্যাকে উইল মারফত সম্পত্তি দান করতে পারেন কি?
আমার উত্তর, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পারেন। অবশ্য যদি ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’ উত্তরাধিকারীহীন অবস্থায় মারা গিয়ে থাকেন তা হলেই। কারণ সে ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে পার্টিশন ডিড না -থাকলেও, পুরো সম্পত্তির মালিক বা মালকিন এখন শ্রীমতী ‘এক্স’। যেহেতু একমাত্র তিনিই বেঁচে আছেন। কাজেই তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী যে-কোনও একজনকে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ঘোষণা করতেই পারেন।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলি, ছেলে উইলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে অবশ্যই যেতে পারেন। মেয়েকে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি দেওয়া হলে, তাঁকে উইলের প্রোবেট নেওয়ার সময়ে আদালতে আসতে হবে। সেই সময়ে ছেলেকেও ‘নোটিস’ দেওয়া হবে। ছেলে শুনানির দিনে ওই আদালতে উপস্থিত থেকে আপত্তি দাখিল করতে পারেন।
আর যদি শ্রীমতী ‘এক্স’ রেজিস্টার্ড দানপত্রের মাধ্যমে তাঁর বিবাহিতা কন্যাকে তাঁর সম্পত্তি দান করেন, তা হলে অবশ্য ছেলের হাত-পা অনেকটাই বাঁধা। রেজিস্টার্ড দানপত্র রেজিস্টার মহাশয়ের সামনে রেজিস্ট্রি করতে হয় উপযুক্ত স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে। এবং দানপত্র সম্পাদন করার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হয়।
আমরা তিন ভাই, এক বোন। দিদিই সব চেয়ে বড়। বাবার মৃত্যুর পর কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে যে-চাকরিটি দেওয়ার কথা বলা হয়, মায়ের উপর চাপ দিয়ে আমার বড় দিদি সেটা নিজের নামে করে নেন। এবং তাতে যোগ দেন। মায়ের ইচ্ছে ছিল চাকরিটা বড় দাদা পাক। এ দিকে, আমরা যে- বাড়িতে আছি সেটাও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা। বাড়ির কাগজপত্র ব্যাঙ্কের কাছেই গচ্ছিত। দিদি তাঁর উপার্জনের কোনও অংশই সংসারে দেন না। বাড়ির ঋণ শোধ করার জন্যও টাকাপয়সা দেন না। এই রকম অবস্থায় আমার মা বাবার নামে থাকা বাড়ির কোনও ভাগ দিদিকে দিতে চাইছেন না। আমার প্রশ্ন, এর আইনি প্রক্রিয়া কী? বাবার নামে বাড়ি কী ভাবে মায়ের নামে করব? দিদিকে সম্পত্তি না-দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা আছে কি?
অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী, কসবা
যেহেতু বাবা উইল বা অন্য কোনও ভাবে সম্পত্তি বণ্টন না-করেই মারা গিয়েছেন, সেহেতু সম্পত্তির উত্তরাধিকারী শুধু আপনার মা নন, আপনারা সবাই। এমনকী দিদিও। অর্থাৎ মা, দিদি, আপনারা তিন ভাই উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পত্তির সমান অংশ পাবেন। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তিতে বাকি সকলের মতো আপনার দিদির ভাগেও পড়বে পাঁচ ভাগের এক ভাগই। সুতরাং আপনারা দিদিকে সম্পত্তির ভাগ দিতে চাইছেন বা চাইছেন না, তাতে কিন্তু দিদির কিছুই আসে যায় না।
তবে দিদি চাইলে তাঁর নিজের এক পঞ্চমাংশ ভাইদের দান করে দিতে পারেন। অন্য দিকে, মা-ও তাঁর এক-পঞ্চমাংশ শুধুমাত্র ছেলেদের দান করতে পারেন। আবার সম্পত্তি মায়ের নামে করতে গেলে ভাই-বোনদের সকলকে তাঁদের নির্ধারিত অংশ মাকে দান করে দিতে হবে। একমাত্র তা হলেই মা পরে সেই সম্পত্তি শুধু আপনাদের নামে উইল বা দানপত্র করে দিতে পারেন। সেটা অবশ্য আপনার দিদি করবেন বলে মনে হয় না।
|
(আইনি পরামর্শ জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়)
|
|
|
|
|
|