সিইও-র টেবিল থেকে
প্রয়োজন, আয় ও বয়স বুঝে প্রকল্প বাছুন, শুধু প্রিমিয়াম দেখে নয়

• স্বাস্থ্যবিমার খরচ বাড়ছে, কিন্তু কালঘাম ছুটছে টাকা পেতে

স্বাস্থ্যবিমার যা বাজার, তার মাত্র ২০% ধরতে পেরেছে বিমা সংস্থাগুলি। বাকি ৮০% এখনও অধরা। এ বছরই স্বাস্থ্য খাতে খরচ হবে প্রায় ৪২০০ কোটি ডলার। বস্তুত, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য খাতে খরচের মাত্র ২ শতাংশের মতো বিমা থেকে আসে। আর এই খাতে খরচের একটা বড় অংশ এ দেশে সরকারই বহন করে।
আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলি, এই বিমার বিষয়টা একটু কঠিন। শর্তগুলি কিন্তু সাধারণ ভাবে সব সংস্থার ক্ষেত্রেই এক। ইনশিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটির বলে দেওয়া গতেই বিমার দলিল তৈরি হয়ে থাকে।
সম্প্রতি বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নতুন নিয়ম তৈরি করেছে। বিমার যত শর্ত আছে, তার মধ্যে ৪২টি প্রধান শর্তকে বেছে নিয়ে সেগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছে তারা। লক্ষ্য একটাই। যাতে কোনও ভাবেই শর্তের অপব্যাখ্যা না-হতে পারে। কোনও সংস্থা যদি এই ব্যাখ্যা না-মানে, তা হলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আমাদের সংস্থার তরফ থেকে নানা ধরনের বিমা আনার চেষ্টা করছি। উদ্দেশ্য, বিভিন্ন আয়ের মানুষের চিকিত্‌সার প্রয়োজন মেটানো। একই সঙ্গে, বিমার খরচ যাতে সাধ্যাতীত না হয়, চা দেখা। এর জন্য আমরা গোটা দেশকে তিনটে ভাগে ভাগ করেছি প্ল্যান ‘এ’, প্ল্যান ‘বি’ এবং প্ল্যান ‘সি’। প্ল্যান ‘বি’-র মধ্যে কলকাতা আছে।
প্ল্যান ‘এ’-র মধ্যে যে-সব শহর আছে সেখানে বিমার খরচ বেশি। ‘বি’-তে কম। সি-তে আরও কম। কারণ চিকিত্‌সার খরচ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। কিন্তু বিমা থেকে গ্রাহক যে- সুবিধা পাবেন, তাতে কিন্তু কোনও ফারাক নেই। ‘ক্যাশলেস’-এর মতো সুবিধা সব জায়গাতেই এক রকম।
আবার এর মানে এটাও নয় যে, আমি প্ল্যান ‘সি’ নিয়ে প্ল্যান ‘এ’-র শহরে গিয়ে অসুস্থ হলাম, কিন্তু বিমার সুযোগ পেলাম না। তবে এ জন্য একটা আলাদা প্রিমিয়াম দিতে হতে পারে।
• আপনারাই কি প্রথম এই ধরনের বিমা প্রকল্প বাজারে ছাড়লেন?
না। আরও কয়েকটি সংস্থা এই ধরনের প্রকল্প বাজারে ছেড়েছে। তাদের সংখ্যা সম্ভবত গোটা দুই তিনেক। কিন্তু এ রকম প্রকল্প এনেছে নতুন সংস্থাগুলিই।

আপনি আপনার অন্যান্য সংস্থার কর্তাদের সুরে সুর মিলিয়েই বললেন যে, বিমা প্রকল্প সাধারণ ভাবে একটু ‘কমপ্লিকেটেড’। আবার বলা হয়, গ্রাহকেরা যখন বিমা প্রকল্প কিনছেন তখন ধরেই নেওয়া হচ্ছে তিনি পুরোটা জেনে-বুঝেই কিনছেন। অন্য দিকে, এটাও মেনে নেওয়া হচ্ছে যে, অনেক সময়ে না-বুঝেই প্রকল্প কিনছেন গ্রাহক।
বিমা প্রকল্প গ্রাহকদের পরিপ্রেক্ষিতে খুব যে জটিল, তা নয়। যেমন ধরা যাক স্বাস্থ্যবিমার কথাই। আপনার যদি বিমা কেনার সময়ে কোনও অসুখ থাকে, তার জন্য সেই বিমা থেকে আপনি কোনও সুবিধা পাবেন না। কিন্তু তা চার বছরের জন্য। ধরা যাক, আপনি রক্তচাপের রোগী। বিমা কেনার চার বছর বাদে যদি রক্তচাপজনিত কোনও অসুখ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন কিন্তু ওই বিমা থেকে চিকিত্‌সার খরচ পাবেন।
বিমা তো ঝুঁকির জন্যই আপনি করান। বিমা সংস্থাও প্রকল্প থেকে প্রাপ্য সুবিধার অঙ্ক কষে থাকে সেই ঝুঁকি বাস্তব হওয়ার সম্ভাবনা মেপেই।
বিমা নিয়ে গ্রাহকদের জানার জায়গাটা এটাই। এ ব্যপারে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিরাট পরিকল্পনা নিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে। এই প্রয়াসে যুক্ত বিমা সংস্থাগুলিও।
এটা ঠিকই যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। দেশের অভ্যন্তরীণ উত্‌পাদনের মাত্র ০.৭% বিমা বাবদ খরচ। আমাদের দেশে বিমার যে-বাজার হওয়া উচিত, তার কিছুই এখনও ছুঁয়ে ওঠা যায়নি।
জীবনবিমার ক্ষেত্রে একটা সঞ্চয়ের ব্যাপার থাকে। আপনি মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পান। কিন্তু স্বাস্থ্যবিমার মতো সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে টাকা ফেরতের ব্যাপার নেই। ফলে এখানে সচেতনতার প্রশ্নটা খুব বড়।
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, এ ব্যাপারে আমাদের সংস্থার ভূমিকা কী? আমরা মূলত ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই প্রকল্প বিক্রি করে থাকি। এখানে ক্রেতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগের মাধ্যমে বিমা বিক্রির চেষ্টা করি আমরা। যেমন ‘পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট পলিসি’। প্রথম বছরেই আমরা প্রায় এক কোটি টাকার পলিসি বিক্রি করেছি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে এই পলিসি থেকে টাকা পাওয়া যাবে।
অনেকেই এই পলিসিতে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির ‘কভার’ দিয়ে থাকেন। কিন্তু পঙ্গুত্ব নিয়ে নানা বিবাদ তৈরি হয়। কে কতটা পঙ্গু হলেন, তার উপর নির্ভর করে এই বিমা থেকে কতটা উপকার পাবেন। আর বিবাদ শুরু হয় এখান থেকেই। আমরা এ সব এড়িয়ে বলছি, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে এই পলিসি থেকে টাকা পাওয়া যাবে। একটা সোজা পলিসি, জটিলতা ছাড়া।

• স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে টি পি এ-র ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এই অভিযোগ নিয়ে সচেতন। তবুও সমস্যা ও অভিযোগ একই জায়গায় থেকে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিমা শিল্প কী ভাবছে?
আমি আমাদের সংস্থার কথা বলতে পারি। আমরা চেষ্টা করি যাতে এই ধরনের অভিযোগ কখনই না-ওঠে। আমাদের সংস্থার মাত্র তিন বছর বয়স। আমাদের লক্ষ্য গ্রাহকদের যাতে এই সমস্যায় না-ভুগতে হয়।

• যাঁরা ক্লেম করেন, তাঁদের কিন্তু সেই ক্লেম কোথায়, কী অবস্থায় বিমা সংস্থার কাছে পড়ে রয়েছে, তা জানার কোনও উপায় থাকে না। বিমা বাতিল হলে, কেন তা বাতিল হল, সেটা জানতেও কালঘাম ছুটে যায়।
এটা যে সংস্থাগুলি ইচ্ছে করে করছে, তা কিন্তু নয়। বেশির ভাগ সময়েই এটা আসলে কর্মীদের প্রশিক্ষণের সমস্যা। কর্মীদের কাজের উপর নজরদারিরও সমস্যা। নিশ্চয়ই তা হওয়া উচিত নয়।

• আমি যদি সাধারণ বিমা কিনতে চাই, তা হলে কোন বিমা কিনব, সেই সিদ্ধান্ত কী ভাবে নেব?
আপনাকে প্রথমেই নিজের প্রয়োজনটা দেখতে হবে। আপনার আয় কতটা। পরিবারে ক’জন সদস্য। বয়সের বিন্যাস। এর উপর নির্ভর করে আপনার ভবিষ্যত্‌ প্রয়োজনের একটা তালিকা করতে হবে। এটা সাধারণ ভাবে বলা খুব মুশকিল। তবুও এটাকেই প্রাথমিক ভেবে এগোতে হবে।
প্রিমিয়াম ভেবে এগোলে কিন্তু সমস্যা হবে। তার মানে এই নয় যে, প্রিমিয়ামের কথা ভাবতে হবে না। কিন্তু এগোতে হবে প্রয়োজনের কথা ভেবেই।

• আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিশেষ একটা বিমা কিনব। কিন্তু কোন সংস্থা থেকে বিমা কিনব, তা তো নির্ভর করবে কোন সংস্থা কত তাড়াতাড়ি আমার দাবি মেটাবে। এই তথ্য কিন্তু কোনও সংস্থাই দেয় না। কোনও সূচক আছে?
বিমা নিয়ন্ত্রক কোন ‘ক্লেম’ কত তাড়াতাড়ি মেটাতে হবে, তার নিয়ম ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু আপনি ঠিকই বলেছেন। এই ধরনের নির্দিষ্ট সূচক এখনও নেই, যার উপর নির্ভর করে কোন সংস্থা থেকে গ্রাহক বিমা কিনবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.