রাজ্যের সীমানায় নিরাপত্তা বাড়াতে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একাধিক নতুন থানা গঠনের জন্য রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাল আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। অনুমোদন মিললেই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে বলে কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে।
কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, কুলটি থানাকে ভেঙে তিনটি ও সালানপুর থানাকে ভেঙে দু’টি নতুন থানা গঠন করা হবে। ওই সীমানা এলাকায় বর্তমানে দু’টি থানার বদলে পাঁচটি থানা এক সঙ্গে কাজ করবে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কুলটি পুরসভা ও সালানপুর ব্লক এলাকা দুটি অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেষ কয়েক দশকে ভারী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের পাশাপাশি একাধিক ছোট, বড়, মাঝারি বেসরকারি শিল্প সংস্থা গড়ে উঠেছে এখানে। আবার বাণিজ্যিক শহর হিসাবেও প্রায় সাত দশকের ঐতিহ্য রয়েছে বরাকর, নিয়ামতপুর, সালানপুরের। কিন্তু সীমান্ত লাগোয়া এই অঞ্চলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। চুরি, ছিনতাই, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির অপহরণ থেকে ব্যাঙ্ক ও দোকানে লুঠপাটের ঘটনাও ঘটেছে। তাই অনেক আগে থেকেই এলাকায় থানা বাড়ানোর দাবি উঠেছিল। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কমিশনারেট গঠন হওয়ার পরে তা আরও জোরালো হয়েছে। পুলিশও এই দাবির যৌক্তিকতা বুঝে নতুন থানা গঠনের প্রস্তাব করেছে।
কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলটি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের শ্রেণিবিন্যাস করে তিনটি থানা বানানো হচ্ছে। পুরসভার ১ নম্বর, ২১ থেকে ২৯ নম্বর ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৩২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে কুলটি থানা। এখানে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের বাস। পুরসভার ২ নম্বর থেকে ৭ নম্বর, ৯, ১০ নম্বর ও ১২ থেকে ১৫ নম্বর ওয়াডের্র প্রায় ৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নিয়ামতপুর থানা। লোকসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার। আর পুরসভার বরাকর ও সাঁকতোড়িয়া এলাকার ১৬ থেকে ২০ এবং ৩০ থেকে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হবে বরাকর সাঁকতোড়িয়া থানা। লোকসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৬ হাজার জন্য।
সালানপুর থানাকে ভেঙে এই ব্লকে আরও একটি নতুন থানা বানানো হবে বলে জানা গিয়েছে। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, সালানপুর, দেন্দুয়া, এথোড়া, সামডিহি, ফুলবেড়িয়া, বোলকুণ্ডা ও কল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রায় ৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থাকবে সালানপুর থানার অধীনে। এই অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৬৭ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ৫১ হাজার জনের বসতি এখানে। অন্য দিকে, রূপনারায়ণপুর, আল্লাডি, বাসুদেবপুর জেমারি, আছড়া, উত্তর রামপুর, জিৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি নিয়ে প্রায় ৫১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে রূপনারায়ণপুর থানা। প্রায় ৫২ হাজার লোকজনের বসতি এখানে। এই থানাগুলির প্রতিটিতে একজন করে অফিসার ইনচার্জ, ছ’জন সাব ইন্সপেক্টর, দশ জন সহকারি সাব ইন্সপেক্টর, দু’জন মহিলা সহকারি সাব ইন্সপেক্টর ও ছ’জন মহিলা এবং চল্লিশ জন পুরুষ কনস্টেবল মোতায়েন করা হবে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নতুন থানা গঠনের এই প্রস্তাব বিস্তারিত ভাবে স্বরাষ্ট্র দফতরকে পাঠিয়েছি। অনুমোদন এলেই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু করব।” কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এ ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে রেখেছে। দ্রুত অর্থের সংস্থান করে অনুমোদন পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, এলাকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করতেই পুলিশ কর্মী ও থানার সংখ্যা বাড়ানো দরকার। |