বর্ষায় আন্ত্রিকের প্রকোপ বাড়ে। কিন্তু ওষুধ কোথায়? ওষুধের ‘স্টক’ দেখতে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গুদামে আন্ত্রিকের ওষুধ নরফ্লক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন শেষ। ব্লিচিং পাউডারও পড়ে রয়েছে মাত্র ২-৪ ব্যাগ। বর্ষায় সাপে কাটা রোগীও বাড়ে। কিন্তু সর্পদষ্টের ওষুধও অমিল! জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন এমনই দশা। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও সমস্যা একই রকম।
এমন হওয়ার কারণ কী?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার এক একটি সংস্থাকে এক একটি ওষুধ সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছে। কোনও একটি ওষুধের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছে রাজ্যের সব জেলা থেকে ওই ওষুধ চাওয়া হচ্ছে। একটি সংস্থার পক্ষে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অতি কম ওষুধ পাচ্ছে হাসপাতালগুলি। ওষুধের অভাবে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা।
প্রথমেই ধরা যাক সাপে কাটার ওষুধের কথা। সাপে কাটলে এক জন রোগীকে ‘অ্যান্টিভেনাম সিরাম’ (এভিএস) দিতে হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গুদামে প্রায় ২ মাস ওই ইঞ্জেকশন ছিল না। জেলার কয়েকটি হাসপাতালে কিছু ইঞ্জেকশন পড়ে ছিল। ফলে কোথাও সাপে কাটা রোগী ভর্তি হলে অন্য হাসপাতাল থেকে চেয়েচিন্তে দু-চারটে ভাওয়েল নিয়ে এসে কাজ চালাতে হত। জেলায় সাপের উপদ্রবও বেশি। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে জেলায় ৪৫১ জনকে সাপে কেটেছিল। তার মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হলেও বাকিরা সুস্থ হয়ে যায়। ২০১১ সালে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫২। মৃত্যু হয় ৩ জনের। ২০১২ সালে রোগীর সংখ্যা কমে হয় ৩৩২ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ২ জনের। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, একজনকে সাপে কাটলে ন্যূনতম ১০ থেকে ৩০ ভাওয়েল এভিএস দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে তার থেকে বেশিও লাগে। এই পরিস্থিতিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের গুদামে কোনও এভিএস না থাকায় গত মে মাসে এভিএসের অর্ডার দেওয়া হয়। সম্প্রতি সেই ওষুধ এসে পৌঁছলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ হাজার এভিএস চাওয়া হলেও এসেছে মাত্র ৯০০টি। এই অবস্থায় অনেক সাপে কাটা রোগীই জেলার হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ওষুধ ‘নেই’ বলে তাদের অন্যত্র রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দীর্ঘক্ষণ বিনা চিকিৎসায় এক জন সাপে কাটা রোগী কী বাঁচবে? তার সদুত্তর নেই কারও কাছে।
একই অবস্থা ব্লিচিং পাউডারের ক্ষেত্রেও। মাত্র দু’ব্যাগ ব্লিচিং পাউডার পড়ে থাকায় প্রায় ২ মাস আগে ব্লিচিং পাউডারের জন্য বরাত পাওয়া সংস্থাকে ৪০০ ব্যাগ ব্লিচিং পাউডারের অর্ডার দেওয়া হয়। তবে দিনকয়েক আগে ব্লিচিং পাউডার এসেছে মাত্র দুশো ব্যাগ। আর ২ মাস আগে অর্ডার দেওয়া হলেও নরফ্লক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন এখনও আসেনি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর প্রধান কারণ হল একটি সংস্থাকে একটি ওষুধের বরাত দেওয়া। বর্ষাকালে জেলার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রচুর ব্লিচিং পাউডারের অর্ডার এসেছে। একটি ওষুধের জন্য একটি সংস্থাই বরাত পাওয়ায় সেই সংস্থার কাছে তা পাহাড় প্রমাণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি সময়ে প্রয়োজনীয় ওধুষ সরবরাহ করতে পারছে না। দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও মাথায় হাত। জেলার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “দুর্নীতি রুখতে নাকি একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু একজনের পক্ষে কী রাজ্যজুড়ে ওষুধ সরবরাহ সম্ভব? যদি এক একটি সংস্থাকে ৪-৫টি জেলাও দেওয়া হত, তাহলে বোধ হয় সমস্যা থাকত না। এ ক্ষেত্রে আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।” |
আরও দু’টি ইনভার্টার হাসপাতালে
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
লোডশেডিং মোকাবিলায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইনভার্টার কিনতে উদ্যোগী হলেন ময়নাগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি ভিক্তিতে আজ, মঙ্গলবার দুটি ইনর্ভাটার আনা হচ্ছে। এদিকে বিকল জেনারেটর মেরামতের জন্য সরবরাহকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “ময়নাগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেনারেটর ভাড়া করতে বলেছিলাম। কিন্তু যেহারে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে তা বেশি হওয়ায় ইনভার্টার কিনতে বলেছি। বিকল জেনারেটর মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” ময়নগুড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ বলেন, “হাসপাতালে একটি ইনভার্টার আছে। মঙ্গলবার আরও দুটি কেনা হবে। সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন থেকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের জেনারেটর বিকল হয়ে পড়ে। লোডশেডিং-এ রোগীদের ভরসা মোমবাতি ও হাতপাখা। |
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনের জের |