হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে পাশের গ্রামে খুঁজে পেয়ে বাড়ি নিয়ে আসছিল দাদা। হাত ফস্কে যাতে না পালায়, তাই বোনের হাত কোমরের সঙ্গে গামছা দিয়ে আঁটোসাঁটো করে বাঁধাও ছিল। কিন্তু বাড়ি পৌঁছনো আর হল না। অভিযোগ, পথেই দাদাকে মারধর করে এক দুষ্কৃতী ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওই তরুণীকে। সন্ধ্যার আলোতেও দুষ্কৃতীকে চিনে ফেলেছিল দাদা। পুলিশের কাছে তার নামে অভিযোগও হয়। অভিযোগের সাত দিনের মাথায় ওই দুষ্কৃতী ধরা পড়লেও মেয়েটি এখনও নিখোঁজ।
ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার ওন্দা থানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মমেজুল খান ওন্দা থানার ধবনী এলাকার বাসিন্দা। রবিবার রাতে ওন্দার নাকাইজুড়ির কাছে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মমেজুল বিবাহিত। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, অপহৃতার বাড়ি স্থানীয় চূড়ামণিপুর গ্রামে। তাদের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। তা ছাড়া, বছর আঠারোর ওই মেয়েটি ও তার পরিবারের একাধিক সদস্য কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। জেলা ত্রাণ তহবিল থেকে ওই পরিবারকে নিয়মিত সাহায্য করা হয়।
অপহৃতার পরিবারের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে মেয়েটি প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে আশপাশের গ্রামে চলে যেত। ঘটনাটি ঘটার কয়েক দিন আগেও সে নিখোঁজ হয়ে যায়। মেয়েটির বাবা বলেন, “৬ জুলাই সন্ধ্যায় আমার বড় ছেলে পাশের একটি গ্রামে মেয়েকে খুঁজে পায়। বোনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল আমার ছেলে। সেই সময় তাদের পথ আটকায় মমেজুল। ছেলেকে মারধর করে মেয়েকে নিয়ে চম্পট দেয় সে।” মেয়েটির দাদার কথায়, “বোনকে নিয়ে চলে যাওয়ার আগে ঘটনার কথা কাউকে না বলার জন্য আমাকে মমেজুল শাসায়।”
৮ জুলাই ওন্দা থানায় মমেজুলের নামে অভিযোগ দায়ের করে অপহৃতার পরিবার। ওই ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল মমেজুল। অবশেষে নাকাইজুড়ি এলাকার কাছে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও মেয়েটির হদিস মেলেনি। বাঁকুড়া জেলা নারীনিগ্রহ বিরোধী কমিটির সম্পাদিকা লিনা সরকার এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তিনি বলেন, “ঘটনাটি জানার পরেই আমরা পুলিশকে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম। কিন্তু, পুলিশের তদন্তে কিছু ঢিলেমি ছিল। যে কারণে অভিযুক্তকে ধরতে দেরি হয়েছে। মেয়েটিকেও এখনও খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।” জেলার এক পুলিশ কর্তার কথায়, “অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই নিয়মিত মেয়েটির খোঁজ চলছে বিভিন্ন এলাকায়। আশা করছি শীঘ্রই মেয়েটির খোঁজ মিলবে। অপহরণের ঘটনায় মমেজুলের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে আমাদের অনুমান।”
ওই ঘটনার পর থেকেই অপহৃতার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন পড়শিরা। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, মমেজুল এর আগেও এলাকায় নানা উৎপাত করেছে। মেয়েদের পিছনে লাগার জন্যে একবার গ্রামবাসীদের কাছে মারও খেয়েছিল।” মেয়েটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে আশঙ্কা। ভুগছেন পরিবারের লোকেরা। পড়শিদের কাছে মাঝেমধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁরা। মেয়েটির বাবার আক্ষেপ, “ও প্রায়ই হারিয়ে যেত। কিন্তু, আমরা জানতাম বেশি দূরে কোথাও যাবে না। আশেপাশের গ্রামেই পাওয়া যেত। এখন জানি না কত দূরে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছে ওই ছেলেটা।” |