বিধি-বাম। তাই নির্বাচনে আদর্শ আচরণ বিধির গেরোর এ বার অরণ্য সপ্তাহ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না মন্ত্রী-বিধায়কেরা। শুধু ডিএম, এসডিও, বিডিওদের মতো আমলাদের কাছে। ইতিমধ্যে রাজ্য থেকে এমনই নির্দেশ এসেছে জেলায়। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর লালগড়ে অরণ্য সপ্তাহ অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেখানে ছিলেন শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত। আগের বছর মেদিনীপুরে অনুষ্ঠান হয়। তখন ছিলেন তৎকালীন মানস ভুঁইয়া। এমন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানোরই চল আছে রাজ্যে। তাঁদের দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন বা মঞ্চ থেকে সরকারি সাহায্য বিলি করানো হয়। এ বার অবশ্য বিধি-বাম। ফলে, অরণ্য সপ্তাহ উদ্যাপন অনুষ্ঠান থেকে দূরেই থাকতে হচ্ছে মন্ত্রী-বিধায়কদের।
একটা সময় বন দফতরের কর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না অরণ্য সপ্তাহ উদ্যাপন অনুষ্ঠান হবে কি না। হলে কী ভাবে হবে। পরে দফতর থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়। জানা গিয়েছে, কমিশন সেই চিঠির জবাবে জানিয়েছে, অরণ্য সপ্তাহ পালন করা যাবে। তবে সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নন, প্রশাসনের আধিকারিকেরা উপস্থিত থাকবেন। বন দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক কর্তার কথায়, “রাজ্য থেকে বিষয়টি জানতে পারার পরই অরণ্য সপ্তাহের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ বার মন্ত্রী-বিধায়কদের নয়, শুধু আমন্ত্রণ জানানো হবে ডিএম-এসপিদের।”
প্রতি বছর ১৪ থেকে ২০ জুলাই রাজ্য জুড়ে অরণ্য সপ্তাহ পালিত হয়। সেই মতো দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় চারা গাছ বিলি হচ্ছে। তবে, জেলাস্তরের মূল অনুষ্ঠানটি হবে ১৭ জুলাই। মেদিনীপুর শহরে। ওই দিন পদযাত্রা, আলোচনা সভা প্রভৃতির আয়োজিত হবে। খড়্গপুর মহকুমাস্তরের মূল অনুষ্ঠানটি হবে ১৯ জুলাই। ওই দিন হিজলি ইকো পার্ক এবং স্থানীয় অডিটোরিয়ামে বেশ কিছু কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে আবার রাজ্যস্তরের মূল অনুষ্ঠানটিও ১৮ জুলাই জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
অরণ্য সপ্তাহে জেলা জুড়ে প্রায় ২০ লক্ষ চারা বিলি করা হবে। থাকবে আকাশমণি, ইউক্যালিপটাশ, আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, পেপে প্রভৃতির চারা। এক-একজন ব্যক্তিকে দু’টি করে চারাগাছ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রেও চারা বিলি করবেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। মন্ত্রী-বিধায়কের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নন। এমনিতে সারা বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচি চলে। নানা সংগঠন, সংস্থাও এগিয়ে আসে। বসতি এলাকার আশপাশে নতুন গাছ লাগাতে উদ্যোগী হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটা বড় এলাকা জুড়েই রয়েছে জঙ্গলমহল। অশান্তির জেরে একটা সময় এখানে প্রচুর গাছ কাটা পড়েছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যথেচ্ছ গাছ কেটে পাচার করেছে। সেই সময় জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ন এলাকায় বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা কাজ করতে পারেননি। ফলে, তেমন নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি। এর জেরে জঙ্গলে শাল, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি গাছের সংখ্যা কমেছে। আগের পরিস্থিতি না-থাকলেও এখনও গাছ পাচারের অভিযোগ ওঠে। রাজ্যে পালাবদলের নতুন সরকার ফের জঙ্গলমহলকে তার পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছিল। তাই নতুন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে এই এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সবুজের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে গত বছরও জেলায় প্রায় ২০ লক্ষ চারা গাছ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ বারও সেই লক্ষ্যমাত্রাই রাখা হয়েছে।
বন দফতরের রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার কথায়, “প্রতি বছরের মতো এ বারও অরণ্য সপ্তাহ উদ্যাপিত হচ্ছে। প্রচুর চারা বিতরণ করা হবে। সবুজ বাড়লে আমাদের চারপাশের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে।” খড়্গপুর বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহর কথায়, “সবুজ সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও মানবসভ্যতা রক্ষার জন্য আজ আরও বেশি করে গাছ লাগানো প্রয়োজন।” দফতরের এক কর্তা বলছিলেন, “সারা বিশ্বেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য আজ প্রশ্নের মুখে। বন ধ্বংস হলে সমাজের ক্ষতি। সে ক্ষেত্রে আবহাওয়ারও দ্রুত পরিবর্তন হবে। তা হচ্ছেও। তাই আমাদের সকলের উচিত, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সবুজকে বাঁচানো।” |