সেটা ছিল এক পয়লা বৈশাখের সকাল। আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া বাবাকে নিয়ে ছেলেটা যাচ্ছিল উত্তর কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজে। রাস্তায় বিস্তর যানজট পেরিয়ে যখন সে হাসপাতালে পৌঁছল, তখন সেখানে পুরোদস্তুর ছুটির মেজাজ। এক জনও ডাক্তারবাবু নেই। ছেলেটার বাবা মারা গেলেন। কিন্তু স্মৃতিটা বেঁচে রইল। পুরনো ক্ষতের মতো জেগে রইল একটা প্রশ্নও যদি সে দিন ডাক্তারবাবু ডিউটিতে থাকতেন, তা হলে কি বাবাকে বাঁচানো যেত না?
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস অবলম্বনে ‘অলীক সুখ’ ছবিটা তৈরির সময়ে পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বারবার নিজের সে দিনের প্রশ্নটা নেড়েচেড়ে দেখেছেন। পার্থক্য একটাই। তাঁর সে দিনের অভিজ্ঞতায় শুধু রোগীর সন্তানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, কিন্তু ছবিতে অন্য পক্ষের অবস্থানটাও সামনে এসেছে। ডাক্তারেরা যে সমাজবিচ্ছিন্ন কোনও জীব নন, তাঁদেরও যে পারিবারিক-সামাজিক জীবন রয়েছে, পেশার বাইরেও নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া রয়েছে, ধরা পড়েছে সেই বাস্তবও। আর তাই রোগীপিছু তিন-চার মিনিটের সময়সীমা কিংবা ওষুধ কোম্পানির টাকায় বিদেশ সফরের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় ছবিতে আসা সত্ত্বেও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিত্সকেরা। তাঁদের বক্তব্য, সমালোচনা স্বাগত। পাশাপাশি, আত্মপক্ষ সমর্থনের কিছু জায়গা যে পাওয়া গিয়েছে, সেই ঢের। চিকিত্সক-রোগী সম্পর্ক ভাঙতে ভাঙতে যখন বহু ক্ষেত্রেই প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে, তখন এমন একটা প্রয়াস তাঁদের দৃষ্টিতে যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। |
‘অলীক সুখ’-এর এক দৃশ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও দেবশঙ্কর হালদার। |
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার যেমন বললেন, “ডাক্তারদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক অনেক সময়েই ভগবান দিয়ে শুরু, মারধরে গিয়ে শেষ হয়। এই ছবিতে তবু ডাক্তারদের মানসিকতাও খানিকটা বোঝার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের কথা আমাদের মতো করে বলার অবকাশ তো খুব বেশি নেই।”
ডাক্তারের জীবন নিয়ে অতীতে একাধিক ছবি হয়েছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরোগ্যনিকেতন’-এ ধরা পড়েছিল সাবেক ও বর্তমানের চিকিত্সকের দ্বন্দ্ব। ‘অগ্নীশ্বর’ ছবির মুখ্য চরিত্র অগ্নীশ্বর চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্র। ‘হাটেবাজারে’-তেও ডাক্তারের চরিত্র ছিল মুখ্য। তা হলে ‘অলীক সুখ’ আলাদা কীসে?
শিবপ্রসাদ বললেন, “সময় অনেক জটিল হয়েছে। এই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় ডাক্তারকে ‘ভগবান’ মনে না-করে রক্তমাংসের মানুষ ভাবাটাই জরুরি। সেই ডাক্তারের উপরে আশপাশের লোকজনকে টেক্কা দিয়ে কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনার চাপ থাকে। দামি গাড়ি, ছেলেমেয়েকে নামী স্কুলে পড়ানোর চাপ থাকে। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতেই হয়। পরপর অপারেশন, চেম্বার সামলাতেই হয়। সে নিরুপায়। এই ছবিতে সেটাই ধরার চেষ্টা হয়েছে।”
কিন্তু এতে কি হিতে বিপরীত হবে না? প্রেসক্রিপশনের প্রতিটি ওষুধের পিছনে কি ওষুধ কোম্পানির ছায়া দেখবেন না রোগীরা? কুণাল সরকার মানলেন, “বেশ কিছু সমালোচনা যে সঙ্গত, তা না মেনেও তো উপায় নেই।” তাঁর বক্তব্য, “আমরা অনেকেই তো এ সব দোষে দুষ্ট। সাদা পোশাকে কাদার ছিটে কিছুটা তো লেগেইছে। কিন্তু শুধু কাদাটা খুঁজলে চলবে না। রাতবিরেতে যে ডাক্তার রোগী দেখেন, তাঁরও পরিবার থাকে, ব্যক্তিগত জীবন থাকে, সেটাও ভাবতে হবে।”
চিকিত্সক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের বিশ্বাস, রোগী দেখার কোনও শর্টকাট হতে পারে না। তিনি বলেন, “রোগের উপসর্গ জানতে হবে, রোগীর ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে হবে। তাঁর জীবনযাত্রা জানতে হবে। এখনকার দিনে তো ওষুধ ও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রোগীকে জানাতে হয়। এত কিছু তিন-চার মিনিটে হয়?”
‘অলীক সুখ’ উপন্যাসের চরিত্র ডাক্তার কিংশুক গুহকে শিক্ষক-চিকিত্সক দেবশঙ্কর মিত্র বলেছিলেন, “ঠিক বা ভুল ডাক্তারদের হতেই পারে। যে কোনও মানুষেরই হয়। তোমার ভুলে হয়তো পেশেন্ট মারা যেতে পারত, তবু তোমার চেষ্টাটা টোটাল এবং অনেস্ট হলে তখন আর বাঁচা-মরা ঠিক-ভুল কিছুই ম্যাটার করে না।” এই ভাবনাটাকে কি ডাক্তার মহলে আরও বেশি করে চারিয়ে দিতে পারবে এই ছবি? শল্যচিকিত্সক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “কাজটা কঠিন, সন্দেহ নেই। আসলে এই নিষ্ঠা আর বিশ্বাসটাই আসল। ফল আমাদের হাতে নেই। কিন্তু চেষ্টাটা যথাযথ হলে অন্তত আক্ষেপটা থাকে না।”
একই মত সুকুমার মুখোপাধ্যায়েরও। তাঁর কথায়, “সময় দিতে হবে। এক-এক জন রোগীর জন্য এক-এক রকম সময় প্রয়োজন। এতে শুধু রোগীর উপকার হয়, তা তো নয়। আমার বিশ্বাস এক জন রোগীর সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য জানা যায়, কোনও বই বা ল্যাবরেটরিতে তা মেলে না।”
রোগীর বিশ্বাসের সঙ্গে ডাক্তারের চেষ্টা আর বাণিজ্যকে যে মেলানো দরকার, তা সকলেই মানছেন। ‘অলীক সুখ’ সেই ভাবনাকে কতটা বিস্তার দিতে পারে, চিকিত্সক মহল এখন সেটাই দেখতে চায়। |
সঞ্জয়কে ফিল্মে কাজের প্রস্তাব
নিজস্ব সংবাদদাতা • মুম্বই |
জেলে থাকলেও ফিল্মে কাজ করার প্রস্তাব পাচ্ছেন সঞ্জয় দত্ত। কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক প্রভু দেবা তাঁর ফিল্মে চাইছেন সঞ্জয়কে। যা করতে সঞ্জয় রাজি বলে জানা গিয়েছে। ’৯৩-এ মুম্বই বিস্ফোরণে নাম জড়ানোয় সঞ্জয় এখন ইয়েরওয়াড়া জেলে। এখন তাঁর কাজকর্ম দেখাশোনা করছেন স্ত্রী মান্যতা। মান্যতার সঙ্গে কথা বলে সঞ্জয়ের সম্মতি পেয়েছেন প্রভু দেবা। |