জেলার নানা এলাকায় নির্দল ‘তৃণমূল’ প্রার্থীদের সক্রিয় প্রচারে সিঁদুরে মেঘ দেখছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সোমবার সন্ধ্যায় বোলপুরের সিয়ান-মুলুকে প্রচারে এসে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গির বদলে কিছুটা হলেও সুর নরম করতে দেখা গেল তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। সভায় যোগ দেওয়া দলীয়কর্মীদের উদ্দেশে বললেন, “দলের মন্ত্রী, বিধায়কের নাম ব্যবহার করে কিছু নির্দল প্রার্থী প্রচারে নেমেছেন। সেই মন্ত্রী, বিধায়কদের সভায় নিয়ে আসব। তাঁরা যদি বলেন, ‘নির্দলকে ভোট দিন, তবে আপনারা নির্দলকেই ভোট দেবেন। আমার কিছু বলার থাকবে না।” এ দিনের পথসভায় রাজ্যের মৎসমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত-সহ বহু দলীয় প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। |
তৃণমূলের পতাকা নিয়েই প্রচার করছেন বিক্ষুব্ধেরা।—নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূলেরই একাংশের দাবি, বিরোধীদের রোজদিন ‘হুমকি’ দিয়ে বিতর্ক তৈরি করা দলের জেলা সভাপতিকে এ দিন নিজের বাড়ির কাছের পথসভায় খানিকটা চিন্তিতই দেখা যায়। অন্য দিকে, সিপিএমের বোলপুর জোনাল সম্পাদক উপল রুদ্র বলেন, “এই পঞ্চায়েতে আসলে ওদের নিজের ঘরের মধ্যেই লড়াই। তাই মঞ্চ থেকে হুমকি দেওয়া কিংবা হুঙ্কার ছাড়ার মতো বিষয় থেকে অনুব্রতবাবু বিরত থেকেছেন।” তাঁর অভিযোগ, সন্ত্রাস করে, ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে বিরোধীদের এখানে তৃণমূল মনোনয়নপত্রই জমা দিতে দেয়নি।
বাম জমানায় সিপিএমের খাসতালুক বলে পরিচিত সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েতে এ বারের ভোটে কোনও স্তরেই প্রার্থী দিতে পারেনি বামফ্রন্ট। এখানে তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি লড়াই হচ্ছে ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়ানো তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর। এ দিন সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েতের সিয়ান বাসস্টপ এলাকায় ওই পথসভায় দলের জেলা সভাপতিকে তাই অনেকটাই সংযত দেখা যায়। ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলেরই এক বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর কটাক্ষ, “আসলে বেশির ভাগ জায়গায় জেলা সভাপতির গোষ্ঠীর প্রার্থীদের জোর লড়াই দিচ্ছে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। আর সে কারণেই সিয়ান-মুলুকের নির্বাচনী প্রচারে স্বভাবসিদ্ধ হম্বি-তম্বি দেখাতে পারেননি তিনি।” তবে নিজের বক্তৃতার পুরোটা জুড়ে সংযত থাকলেও এক সময় দলীয়কর্মীদের সতর্ক করতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দলের নাম ভাঁড়িয়ে ডাকাত, তোলাবাজ, লুটেরারা নির্দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। তাঁদের থেকে সাবধান থাকবেন। একমাত্র জোড়া ঘাসফুল প্রতীকধারী তৃণমূলকেই ভোট দিন।” যদিও ‘নির্দল তৃণমূল’ বলে দাবি করে প্রচারে নামা বিক্ষুব্ধদের দাবি, দলের জেলা সভাপতি যা-ই বলুন, মা-মাটি-মানুষের পাশে থাকা ‘তৃণমূল’ই জিতবে। |