লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ
হওয়ার দিকে টিম ধোনি
বিদেশের মাটিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দ্বিমুকুট জয়ের উচ্ছ্বাস দেখতে দেখতে কয়েকটা মুখ মনে পড়ে গেল।
ওরা আমারই সব বন্ধু-বান্ধব। কেউ কেউ ভারতীয় ক্রিকেটের বেশ পরিচিত মুখ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত তখন সবে রওনা হয়েছে। আর একটা আড্ডায় দেখলাম, আমার বন্ধুমহল দিব্য টুর্নামেন্টে ভারতের ভবিষ্যতও ঠিক করে ফেললসপ্তাহখানেকের মধ্যেই দেশে ফিরে আসবে ভারত! গ্রুপ স্টেজ থেকেই নাকি বিদায়!
আজ টিমে কোনও সিনিয়র ছাড়া, বিদেশের মাটিতে পরপর দু’টো টুর্নামেন্ট টিম ইন্ডিয়া জেতার পর, ওই মুখগুলো দেখতে ইচ্ছে করছে। আর ওদের দোষ দেব কেন, ক্যারিবিয়ানে প্রথম দু’টো ম্যাচ হারার পরেও তো ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞদের কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতাটা আদতে ফ্লুক। হয়ে গিয়েছে। ক্যারিবিয়ানে নামতেই কঙ্কালটা বেরিয়ে পড়ল!
ভাবতে ভাল লাগছে, জবাবটা ধোনিরা এমন ভাবে দিল, যা কি না চিত্রনাট্য হিসাবে কোনও বলিউডের পরিচালককেও দু’বার ভাবতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ধোনির টিমের সঙ্গে একটা শব্দ শুনছিলাম, চাপ। আরে, শুধু চাপ কোথায়? মহাচাপ বললেও কিছুই বলা হয় না। ভাবুন, ইংল্যান্ডে এমএসডি-রা গেল সমালোচনার কড়াইয়ে ভাজা হয়ে। স্পট-ফিক্সিংয়ে ভারতীয় ক্রিকেট ছিন্নভিন্ন, খোদ ভারত অধিনায়ককে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক। ওরা জানত, যদি হেরে দেশে ফেরে, ইট-পাটকেল পড়ত বাড়িতে। ওরা জানত, ভারতীয় ক্রিকেটকে যদি কেউ বাঁচাতে পারে, তা হলে সেটা ভারতীয় টিম। ওরা জানত, চাপের মহাসমুদ্রে গিয়ে পড়তে হবে, সেটা হজম করতে হবে, দায়িত্ব নিয়ে দেশকে জেতাতে হবে।
তাই ধোনিদের এই দ্বিমুকুট জয়কে আমি বিশ্বকাপ জয়েরও আগে রাখব। কারণ এই চাপটা ধোনিকে বিশ্বকাপ ফাইনালে নেমেও সামলাতে হয়নি!
দু’টো টুর্নামেন্টে কী কী সব টিমকে খেলেছে ধোনিরা ভাবুন! দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ড। সবাইকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভাবতে পারেন, কতটা শারীরিক ও মানসিক রগড়ানি সামলে ট্রফি দু’টো জিততে হয়েছে? বিশ্বকাপ জেতার পরেও অনেকে বলেছিলেন, জিতেছে তো উপমহাদেশে। কিন্তু এ বার? একটা ইংল্যান্ডে, আর একটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
সবচেয়ে বড় কথা, ভারত আগাগোড়া দাপুটে ক্রিকেট খেলে জিতেছে। এই ফাইনালটাই ধরা যাক। রোহিত শর্মা যে হাফসেঞ্চুরিটা করে গেল, সেটা মাস সাত-আট আগেও করতে পারত না। ও বুঝেছিল, ক্যারিবিয়ানের উইকেট রানের নয়। প্রত্যেকটা রানের জন্য লড়তে হবে। রোহিত পেরেছে। ভুবনেশ্বর কুমারও পেরেছে। ভুবিকে নিয়ে অনেকে সন্দিহান ছিলেন যে এই পেসে বিদেশে ওর সুইংয়ের দাপট থাকবে কি না। কিন্তু ভুবি-ও পেরেছে। ঠিক তেমন আবার বিরাট কোহলি দেখিয়ে দিয়েছে, ও জাত ক্যাপ্টেন। ভবিষ্যতে ওর হাতে ব্যাটন তুলে দিলে ভুল কিছু হবে না।
আর ধোনি? মনে আছে আমি যখন বাংলার হয়ে ওয়ান ডে খেলতে নামতাম, ডেভিডদা (উত্‌পল চট্টোপাধ্যায়) একটা কথা বলত। বলত, যত পারবি, খেলাটাকে ছোট করে আনবি। ব্যাপারটা কী বস্তু, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাইনালে ধোনির ব্যাটিং সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। ও ঠিক করে ফেলেছিল, কোনও ভাবেই আউট হবে না। ম্যাচটা নিয়ে যাবে শেষ ওভারে। গোটা পনেরো-কুড়ি রান বাকি থাকবে। তখনই ও পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে বোলারের দিকে। এরঙ্গার ওভারটার শুরুতেই ধোনির বডি ল্যাঙ্গোয়েজে যেটা পরিষ্কার ধরা পড়ল। ময়দানি ভাষায় বললে, এ বার হয় তুই থাকবি। নইলে আমি!
সব মিলিয়ে যা দেখছি, আগামী দু’বছরে এই ভারতীয় টিমকে খুব কম টিমই সামলাতে পারবে। সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতই ফেভারিট। বিশ্বকাপের কথা এখনই আনছি না, কিন্তু এ-ও বলব এই টিমটাই মোটামুটি বিশ্বকাপের টিম। যা বাকিদের রাতের ঘুম কাড়তে পারে। আমাদের হাতে কিন্তু একটা শিখর ধবন আছে যে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম টেস্টেই স্টেপআউট করার সাহস দেখাতে পারে। আমাদের কিন্তু রবীন্দ্র জাডেজা আছে, যে ধীরে ধীরে পরিণত অলরাউন্ডার হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। আমাদের একটা এমএসডি আছে, যাকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফিনিশার বললেও এখন আর ভুল হয় না। সবার উপরে, আমাদের এখন এমন টিম আছে, যারা এক দিকে যেমন অসম্ভব প্রতিভাবান, ঠিক তেমনই আগ্রাসী।
টেস্ট টিমের এমন ভূয়সী প্রশংসা আমি করব না। সেখানে অনেক উন্নতি জরুরি। কিন্তু ওয়ান ডে বা টি টোয়েন্টি টিম নিয়ে আমি বলব, ধোনিদের আর প্রমাণ করার কিছু নেই। ২০১১-র বিশ্বকাপ থেকে সব বড় বড় টুর্নামেন্টই তো জিতল ওরা। আমি চাই আরও চার-পাঁচটা বছর এ রকম থাকুক। একটা যুগন্ধর ওয়ান ডে টিম তৈরি হোক। যেমন লয়েডের বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্টিভ-পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। যাদের দেখে বাকি বিশ্ব ভয় পাবে। কাঁপবে। অদৃষ্টকে দোষ দেবে, কেন আমাদের ভারতের সঙ্গে ম্যাচ পড়ল!

ফাইনাল পুরোটা দেখেছি। ধোনির পারফরম্যান্স অসাধারণ। উল্টো দিকে ব্যাট করা ইশান্ত শর্মাকে ‘শিল্ড’ করে ম্যাচটাকে ও শেষ ওভারে নিয়ে গেল কারণ ও জানে যে কোনও সময় মাঠ পার করে দিতে পারবে। ইশান্তকে বাঁচাতে ৪৭ নম্বর ওভারটায় মাত্র এক রান নিল। ও হিসেব করে রেখেছিল, শেষ ওভারটা অনভিজ্ঞ কোনও বোলার করবে। এ রকম চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে ফাইনালটা বের করে নেওয়াটা সত্যিই দুর্ধর্ষ। ধোনির সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ মাঠ ক্লিয়ার করতে পারা। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ধোনি অন্যতম সেরা প্যাকেজ। আর বিশ্বক্রিকেটে এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা ফিনিশার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.