জোর পুরুষের মুলুকও পুরুষের? |
• আখুন বাবা • পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে গত বছর ১৬ বছরের তাহিরার মৃত্যু হয় বীভৎস ভাবে। স্বামীর হাতেই হিংস্র অ্যাসিড আক্রমণে সম্পূর্ণ দগ্ধ হয়ে যায় তার শরীর। এক বছর পুলিশ-আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি তাহিরার মা। কেউ তাঁর কথা শুনতেই চায়নি। এত দিনে পরিস্থিতি পাল্টাল। তাহিরার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া পড়ল। তার স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল। কী করে ঘটল এমন ‘অঘটন’?
ঘটতে পারল, কেননা এ বার এই ঘটনার বিচারের দাবি তুলল প্রথম নারী-চালিত ‘জিরগা’ (পাশতুন সম্প্রদায়ের মধ্যে যার অর্থ ‘স্থানীয় পঞ্চায়েত’)। খাইবার অঞ্চলের প্রথম মহিলা-চালিত জিরগা এটি, পাকিস্তানেরও প্রথম! উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে জিরগা-ই স্থানীয় বিবাদ-মামলা মেটানোর প্রথম ধাপ। কিন্তু অদ্যাবধি সমস্ত জিরগা-ই পুরুষ-সদস্য নিয়ে চলে বলে পুরুষদের অভিযোগই শোনা হয়, মেয়েদের অভিযোগ গণ্যই করা হয় না। |
জোর যার মুলুক তার-এর লিঙ্গভিত্তিক রূপায়ণ এখানে সম্পূর্ণ, জিরগা-শাসিত গোটা অঞ্চলটিতে। এই জন্যই তাহিরাদের মতো মেয়েরা তাদের বিরুদ্ধে ভয়ানকতম অপরাধ ঘটলেও বিচার দাবি করতে পারে না। এ বার বেঁকে বসেছেন স্থানীয় মহিলারা। অনেক হয়েছে! এ বার তাঁরাই জিরগা তৈরি করবেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
নেবেন তো? না কি, আবারও পরবর্তী স্তরে গিয়ে আটকে যাবে মহিলা জিরগার রায়? অতটা এখনই বলা যাচ্ছে না। ‘মেয়েরা শেষে জেগে উঠেছে’ গোছের অতটা আশাবাদীও হওয়া যাচ্ছে না। তবে, যে কোনও শুরুরই একটা শুরু আছে। সেই দিক থেকে, প্রবল লিঙ্গবৈষম্যে জর্জরিত, সন্ত্রাসধ্বস্ত এই অনুন্নত পার্বত্য উপজাতি এলাকায় যে এতটা এগিয়ে আসতে পারলেন মহিলারা, এও বিরাট খবর!
|
• মেকটিলা • মনে হয়, স্বাভাবিক ছবি। কিন্তু ঠিক স্বাভাবিক নয়। যে পাথর-মাটির স্তূপের পাশ দিয়ে চলেছে দৈনন্দিন সাইকেল, তা আসলে ধ্বংসস্তূপ। মায়ানমারের মেকটিলা অঞ্চলে গত মার্চে যে রক্তাক্ত দাঙ্গা ঘটে বৌদ্ধ ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে, যার ফলে প্রায় হাজার-কুড়ি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন, শতাধিক মানুষ নিহত হন, তারই ধ্বংসস্তূপ। বাইরে থেকে অশান্তি অনেকখানি থিতিয়ে এসেছে মনে হলেও ঘটনার বিচার নিয়ে ক্ষোভ ধিকিধিকি ফুলকিতে বাড়ছে। |
অভিযোগ উঠছে: বর্মী আদালত সচেতন ভাবে মুসলিমদের বেশি শাস্তি দিচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে দেশময় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার মেকটিলা আদালতের রায়: একসঙ্গে ২৫ জন বৌদ্ধ দাঙ্গাকারীর জন্য ১৫ বছরের জেল। এর আগে এত জনকে একত্রে শাস্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। তবে এতেও অসাম্যের অভিযোগ স্তিমিত হবে বলে মনে হয় না। মায়ানমারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে তীব্র সংঘর্ষ, বিচারব্যবস্থা দিয়ে তার মোকাবিলা করা যাবে কি?
|
ক্রেমলিন প্যালেসে ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে হোয়াইট হাউস থেকে ফোন এল। কেন, অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই— এডওয়ার্ড স্নোডেনের কাজকর্ম বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ‘নালিশ’ করলেন বারাক ওবামা। অভিযোগ করলেন, ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি এজেন্সির এই পলাতক কর্মীটি কিন্তু রাশিয়ার মঞ্চ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচার-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন অভিযোগকে বেশি সিরিয়াসলিই নিয়েছেন পুতিন। কর্তৃপক্ষ স্নোডেনকে ফের মনে করিয়ে দিয়েছে, তিনি যত দিন ইচ্ছে রাশিয়ায় থাকতে পারেন, কিন্তু শর্ত মেনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ক্ষতিকর, অথবা রুশ-মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের পক্ষে নেতিবাচক একটা কাজও করা চলবে না। অর্থাৎ, স্নোডেনের প্রশ্নে যতই সাহসী হোক রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে রাজি নয়।
এডওয়ার্ড স্নোডেন মস্কো বিমানবন্দরেই দেখা করেছিলেন বেশ কয়েক জন মানবাধিকার কর্মীর সঙ্গে— তাঁর অজ্ঞাতবাস আরম্ভ হওয়ার পর এই প্রথম জনসমক্ষে এলেন তিনি। ওবামার ফোন এই ঘটনার পরেই। প্রেসিডেন্ট পুতিন যে নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটা কি লঙ্ঘিত হচ্ছে না স্নোডেনের আচরণে— প্রশ্ন হোয়াইট হাউসের। তার পরই স্নোডেনকে মনে করিয়ে দেওয়া হল, রাশিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত করা চলবে না। স্নোডেন দিনকয়েক আগে, প্রথম বার, এই শর্ত মানতে রাজি হননি— আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এই বার অবশ্য জানিয়েছেন, রাশিয়ার শর্ত মেনে নিতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
স্নোডেনের ক্ষেত্রে যা-ই ঘটুক, পুতিন নিজে কিন্তু অতি সাবধান: কোনও গোপন সরকারি নথিই আর তিনি কম্পিউটারে রাখতে চান না। কে জানে কখন কে দেখে ফেলবে! কুড়িটি টাইপরাইটার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি মাথায় থাকুক, আদি ও অকৃত্রিম টাইপ করা কাগজেই থাকবে গোপন কথা। সাইবার-রাহাজানি থেকে বাঁচতে। |