বিশেষ পুরস্কার দুই ভারতীয়-সহ সাত জনকে
শিক্ষাকে ভয় বলেই গুলি চালায়: মালালা
তঙ্ক থেকেই বেরিয়ে আসে তালিবানের বন্দুকের গুলি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে সহজ-সরল বিশ্লেষণ বছর ষোলোর মালালা ইউসুফজাইয়ের। গত অক্টোবরে তালিবানের গুলির অন্যতম নিশানা হয়েছিলেন মালালা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই গুলির উৎসকেই বিশ্ব দরবারে আঙুল দিয়ে চিনিয়ে দিলেন তিনি। নির্বিকারে!
সন্ত্রাসবাদীদের আবার আতঙ্ক কী সে? মালালার বিশ্লেষণ, “চরমপন্থীরা বই আর কলমকে ডরায়। আসলে শিক্ষার শক্তিতেই আতঙ্কিত তাঁরা।” সেই আতঙ্ক থেকেই চলে গুলি। ঠিক যেমন ভাবে মালালা ও তাঁর সঙ্গীদের শেষ করে পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকায় নারীশিক্ষার প্রসারের কাজ থামাতে চেয়েছিল তালিবান। কিন্তু পারেনি। এবং মালালার বয়ানে, “আমাদের কেউ থামাতে পারবে না।”
শুক্রবার ছিল মালালার ষোলোতম জন্মদিন। আর সেই দিনই নিউ ইয়র্কে সদর দফতরে যুব সম্মেলনের আয়োজন করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি-মুন, ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এবং সাধারণ সভার প্রেসিডেন্ট ভুক জেরেমিক। দিনটিকে ‘মালালা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিশ্বের নানা প্রান্তে নারীশিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, এমন সাত মহিলাকে বিশেষ সম্মানও দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে ছিলেন দুই ভারতীয়কর্নাটকের অশ্বিনী এবং উত্তরপ্রদেশের রাজিয়া। প্রত্যেকেরই আদর্শ মালালা।
রাষ্ট্রপুঞ্জে মালালা। ছবি: এপি
আর মালালার আদর্শ শান্তি ও অহিংসা। তাই তাঁর অপরাধীদের হাতের কাছে পেলেও হত্যা করার কথা ভাবতে পারেন না তিনি। প্রতিশোধস্পৃহাই নেই যে! তিনি মনে করেন, “শিক্ষার জন্য শান্তি দরকার।” একই সঙ্গে তালিবানের প্রতি তাঁর বার্তা, “আমার জীবনে কিচ্ছুটি বদলায়নি। শুধু আমার হতাশা, ভয় এবং দুর্বলতার মৃত্যু হয়েছে। আর জন্ম নিয়েছে শক্তি, সাহস। বাকিটা একই রয়েছে। সেই একই লক্ষ্য, সেই একই আশা, সেই একই স্বপ্ন।” তালিবানের গুলি তাঁর মাথায় ঢুকলেও মাথা নোয়াতে পারেনি এক রত্তিও, বুঝিয়ে দিলেন সোয়াটের সাহসিনী।
কিন্তু তালিবান-বিরোধিতাই যে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, তা নয়। বরং, পাকিস্তান তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে শিশুশিক্ষা তথা নারীশিক্ষা অবহেলিত, সেখানে শিক্ষার প্রসার কী ভাবে করা যায়, তা নিয়েই ভাবনা-চিন্তা করছেন তিনি। শুক্রবারও মালালা বলেন, “আমি এখানে সকলের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কথা বলতে এসেছি। আমি চাই, তালিবান এবং এ হেন প্রত্যেক জঙ্গির ছেলে এবং মেয়েরাও সেই শিক্ষার অধিকার পাক।” মনে করিয়ে দেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাবে বাধা পাচ্ছে শিশুশিক্ষা, নারীশিক্ষা। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে প্রতিবন্ধকতা তালিবানি রক্তচক্ষু, ভারতে শিশুশ্রম। সঙ্গে রয়েছে দারিদ্র, অবিচার, জাতিভেদ এবং শোষণের মতো আরও নানা প্রতিকূলতা। লড়াইটা সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধেই।
শিক্ষার মাহাত্ম্যের কথা বারবারই ফিরে এসেছে মালালার কথায়। উঠে এসেছে সুন্দর উপমাও। কিশোরী বোঝাচ্ছেন, অন্ধকার যে ভাবে আলোর মাহাত্ম্য ফুটিয়ে তোলে, নীরবতা যে ভাবে শব্দের গুরুত্ব তৈরি করে, তালিবানের বন্দুক সে ভাবেই সোয়াট উপত্যকার বাসিন্দাদের বুঝিয়েছে কলমের জোর, জ্ঞানের কারিকুরি। সেই শিক্ষা যাকে তালিবান ভয় করে। আর তাই তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য স্কুল, শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী। কিন্তু তাতে যে তাঁকে থামানো যাবে না, তা স্পষ্ট।
এ কাজে তিনি আহ্বান জানান নারী সমাজকেই। বলেন, “একটা সময়ে মেয়েরা অধিকারের লড়াই করতে গিয়ে পুরুষদের সাহায্য চাইত। কিন্তু কাজটা আমাদের নিজেদের করতে হবে।” তাঁর বিশ্বাস, সমাজের অর্ধেককে পিছনে ফেলে উন্নতি অসম্ভব। তাই মহিলাদের জন্য সাম্য, সম্মান আর শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে চান মালালা। বদলাতে চান ছবিটা। পরিবর্তনের সে অদম্য স্পৃহাকেই কুর্নিশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। যে ইচ্ছার কাছে মাথা নুইয়েছে তালিবানের গুলি, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, সেই দুরন্ত স্পৃহার নামই মালালা যে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.