মহিলা শিক্ষাকর্মীকে সালোয়ার-কামিজ পড়তে নিষেধ করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত পঞ্চানন। বুধবার ওই ঘটনা নিয়ে সহকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন মহিলা শিক্ষাকর্মী বেবি সরকার। তাঁর দাবি, অধ্যক্ষের ভর্ৎসনায় তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে দিন কিছুক্ষণের জন্য হাসপাতালেও ভর্তি হন। বিষয়টি জানাজানি হতেই আলিপুরদুয়ারের শিক্ষা মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি অমিতাভ রায় (যিনি আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজেরও অধ্যক্ষ) বলেন, “কলেজে পোশাক বিধি নেই। কেউ এমন নির্দেশ দিয়ে থাকলে তা নিন্দনীয়। আমি বিষয়টি নিয়ে পরিচালন সমিতির সভায় আলোচনা করব।”
আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত পঞ্চানন দাবি করেছেন, তিনি ও ধরনের নির্দেশ দেননি। তিনি বলেন, “কলেজের পোশাক বিধি নেই। তা হলে আমি কেন কাউকে নিষেধ করব। ওই মহিলা কর্মী কিছুদিন আগে নিজেই আমাকে জানান, তিনি অসুস্থতার কারণে শাড়ির বদলে সালোয়ার কামিজ পড়ে যাতায়াত করবেন। তাই সে দিন খোঁজ নিয়েছিলাম উনি সুস্থ হয়েছেন কি না? সুস্থ হলে ফের শাড়ি পরে আসবেন কি না সেটা জানতে চেয়েছিলাম। তা নিয়েই অযথা বিতর্ক হচ্ছে। উনি যে কোনও পোশাক পরে আসতে পারেন।” যদিও কলেজের এক মহিলা কর্মীর অভিযোগ, তাঁর মাধ্যমেই বেবি সরকারকে সালোয়ার না পরে শাড়ি পরার নির্দেশ দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। এখন বিতর্ক হওয়ায় অবস্থান পাল্টাতে অধ্যক্ষ বাধ্য হয়েছেন বলে ওই মহিলা কর্মী মনে করেন। কলেজের অধ্যক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি কারও মাধ্যমে কোনও নির্দেশ দেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষা কর্মী ইউনিয়নের আলিপুরদুয়ার কলেজের সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেছেন, “অধ্যক্ষ ওই মহিলা কর্মীকে শাড়ি পড়ে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাঁকে এখন হেনস্থা করা হচ্ছে।” কলেজের ইতিহাসের শিক্ষিকা শ্রাবণী ঘোষ বলেন, “আমরা তো কলেজে চুড়িদার পরে আসি। কোনও দিন কোনও বিধিনিষেধের কথা তো শুনিনি। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে বিশদে না জেনে কিছু বলতে পারব না।”
কলেজ সূত্রের খবর, চতুর্থ শ্রেণির মহিলা কর্মী বেবি সরকারের কিছু সমস্যা থাকায় তিনি কলেজে সালোয়ার কামিজ পড়ে আসবেন বলে অধ্যক্ষকে কিছুদিন আগে জানান। অভিযোগ, গত তিন-চার দিন ধরে অধ্যক্ষ অন্য মহিলা কর্মীদের মাধ্যমে তাঁকে শাড়ি পড়ে আসার জন্য চাপ দেন। বেবী দেবীর অভিযোগ, “বুধবার অধ্যক্ষের কাছে যাই। তিনি শাড়ি না পরে আসায় আমাকে ধমক দেন। আমি শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি।”
বেবী দেবী কলেজের ‘হেড ক্লার্ক’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, “২০০৫ সালে বড়বাবু আমার থেকে ২ লক্ষ টাকা নেন। সেই ধার শোধ দেননি। টাকা চাওয়ায় অধ্যক্ষকে দিয়ে হেনস্থা করাচ্ছেন বড়বাবু।” কল্যাণবাবু টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “আমি টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেটা শোধ করে দিয়েছি। বেবি সরকার দেরিতে কলেজে আসায় তাঁকে সতর্ক করা হয়। সে জন্য অযথা মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “ঘটনা বাঞ্চনীয় নয়। যদি অধ্যক্ষ নির্দেশ দিয়ে থাকেন তা হলে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। আশা করি অধ্যক্ষ নির্দেশ তুলে নেবেন।” মাদারিহাট বীরপাড়ার আর এসপির বিধায়ক কুমারী কুজুরও অধ্যক্ষের সমালোচনা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “অধ্যক্ষের ভুল স্বীকার করা উচিত।” তৃণমূল কংগ্রেস আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সদস্য মৌসুমী বাগচী জানান, যেখানে পোশাকে বিধি নেই সেখানের চাপ সৃষ্টি করা অন্যায়। |