অশান্তি এড়ানো গেল না, আক্রান্ত পুলিশও
ঞ্চায়েতের প্রথম দফার ভোট নিবির্ঘ্নে মিটল না। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাতেই পুলিশের উপর হামলা চলল। শালতোড়ার একটি বুথে ঢুকে ব্যালট বক্স ভেঙে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে দিয়ে ভোটকর্মীদের আটকে রাখার ঘটনাও ঘটল। এমনকী সিপিএমের মহিলা প্রার্থীদের মারধর ও শ্লীলতাহানি করার অভিযোগও উঠল শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
পাত্রসায়র থানার কমলাসায়র গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোটারদের রাস্তায় আটকে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উত্তেজিত তৃণমূল কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে, লাঠি নিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় পাত্রসায়র থানার এক এএসআই-সহ তিন জন পুলিশ কর্মী জখম হন। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরে আরও পুলিশকর্মী গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেন। পাড়া থানার হরিহরপুর গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ গেলে, তাদের লক্ষ করে ঢিল ছোড়া হয়। জখন হন পাড়া থানার এক এএসআই-সহ ৫ পুলিশ কর্মী। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে ও লাঠি চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। পাত্রসায়রের ঘটনায় পুলিশ ৩ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করলেও পাড়ার ঘটনায় রাত পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
তবে এ দিন সকাল থেকেই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় গোলমালের ধোঁয়া উঠতে শুরু করে। ইন্দাসের আউসনাড়া গ্রামে সিপিএমের দুই মহিলা প্রার্থী ও তাঁদের এজেন্টদের বুথে যাওয়ার রাস্তায় আটকে মারধর করা হয়। সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাসের অভিযোগ, “সকাল সাড়ে ৬টায় ইন্দাস ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আমাদের প্রার্থী সীমা বাগদি ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী সান্ত্বনা বাগদি এবং দুই কর্মী বিশ্বজিৎ বাগদি ও লক্ষ্মণ সাঁতরা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৭-৮ জন তৃণমূল কর্মী তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। প্রার্থীরা ফিরতে না চাওয়ায় ওঁরা রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। সান্ত্বনাদেবীর কাপড় খোলারও চেষ্টা করে ওঁরা।” পরে সিপিএমের কর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করে ইন্দাস ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সীমাদেবীর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে তৃণমূলের লোকেরা আমাকে হুমকি দিচ্ছিল। এ দিন স্বামী বিশ্বজিৎ বাগদির সঙ্গে বুথে হেঁটে যাচ্ছিলাম। গ্রামের মধ্যেই তৃণমূলের কয়েকজন লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তা আটকে মারধর শুরু করে। চিৎকার করেও কারও সাহায্য পাইনি।” সিপিএমের আরও অভিযোগ, পুলিশকে খবর দিয়েও দেখা মেলেনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা অমিত গঙ্গেোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “ভোটের হার নিশ্চিত জেনেই সিপিএমের নেতারা ওই মহিলা প্রার্থীদের দিয়ে নাটক করিয়েছে।” ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটেও দাবি করেন, “সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
সিপিএম ও তৃণমূল কর্মীদের সংঘর্ষে এ দিন বেলা ১১টায় উত্তেজনা ছড়ায় রঘুনাথপুরে বড়দা নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনডি গ্রামে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানোকে ঘিরে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে বচসা থেকে মারপিট বাধে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের মধ্যে। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আনোয়ার খানের অভিযোগ, “লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের সিপিএমের কর্মীরা তাঁদের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। আমরা প্রতিবাদ জানালে ওরা পুলিশের সামনেই লাঠি-রড় নিয়ে চড়াও হয়। সিপিএম কর্মীদের আক্রমণের মুখে বুথের অদূরে থাকা ক্যাম্প অফিস ছেড়ে আমাদের কর্মীরা পালিয়ে যান। সেই ক্যাম্প অফিসও সিপিএমের লোকেরা ভাঙচুর করে।” সংঘর্ষে জখম যে পাঁচ জনকে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী আমিনা বিবির স্বামী কেড়ুয়ান দর্জি ও দেওর সদ রহমান দর্জি। মাথা ফেটেছে শেখ ইমতিয়াজ নামে এক সিপিএম সমর্থকেরও। কেড়ুয়ান দর্জির অভিযোগ, “বুথে হামলার পরে দলবল নিয়ে সিপিএমের লোকেরা আমাদের বাড়িতেও ভাঙচুর করে।” সিপিএমের স্থানীয় নেতা শেখ জাহাঙ্গিরের পাল্টা অভিযোগ, “এই এলাকা বরাবরই আমাদের দখলে। তৃণমূল এ দিন আমাদের ভোটারদের আটকানোর চেষ্টা করে। ওদের মারে আমাদের কয়েকজন জখম হন।” রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, “ভোটের লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে।” গঙ্গাজলঘাটির সুবর্ণতোড় বুথেও সিপিএম ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়।
এ দিকে সিমলাপালের মণ্ডলগ্রাম পঞ্চায়েতে দান্দিয়াড়া গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী দীপক সেবাইতকে বুথের সামনে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। দীপকবাবুর অভিযোগ, “আমি বুথ থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম। বিনাপ্ররোচনায় পুলিশকর্মীরা লাঠি নিয়ে তেড়ে এসে মারধর করে।” তবে পুলিশের দাবি, বুথের সামনে কিছু কর্মীকে নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন ওই প্রার্থী। তাঁকে সরে যাওয়ার জন্য বার বার বলেও কানে না তোলায় জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়। মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়। এ দিন দুপুরে কোতুলপুরের গোপীনাথপুর সরোজবাসিনী হাইস্কুলের বুথের বাইরেও পুলিশ লাঠি চালায়। সিপিএম ও কংগ্রেস পুলিশের কাছে অভিযোগ করে, তৃণমূলের কর্মীরা ওই বুথের কাছে জমায়েত করেছে। খবর পেয়ে কেন্দ্রীয়বাহিনী নিয়ে লাঠি চালিয়ে জমায়েত ছত্রভঙ্গ করে। তৃণমূলের অভিযোগ, লাঠির ঘায়ে তাঁদের দু’জন সমর্থক জখম হন।
অন্য দিকে, বড়জোড়া ব্লকের তাজপুর হাইস্কুল ও স্থানীয় রামপুর বুথে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে জোর করে বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে। বড়জোড়ার পখন্না পঞ্চায়েতের ভৈরবপুর মানা এলাকা, গদারডিহি পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর ও গদারডিহির বুথগুলিতেও একই অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বড়জোড়ার বাসিন্দা সুজয় চৌধুরীর অভিযোগ, “ওই বুথগুলিতে তৃণমূল কর্মীরা ভিতরে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পুলিশ কর্মীরা নিষ্ক্রিয় ছিল।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র সন্ধ্যায় অভিযোগ করেন, “তালড্যাংরা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, জয়পুর ও ইন্দাসের জেলা পরিষদের ১০টি আসনে কার্যত প্রহসন হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ২৫টি বুথে পুননির্বাচনের দাবি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।” প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.