ভয় থাকলেও ভোটে গেল বলরামপুর
লাকায় নতুন করে মাওবাদী গতিবিধির খবর এখন খুব কম লোকেরই অজানা। কিন্তু আতঙ্ক সরিয়ে রেখে বৃহস্পতিবার ভোটের লাইনে দাঁড়াল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল।
বলরামপুর ব্লকে একদা মাওবাদী উপদ্রুত ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এ দিন দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। কেরোয়া উচ্চ বিদ্যালয় বুথে ৬৬৮ জন ভোটার। এক ভোটকর্মী জানালেন, বেলা ১১টার মধ্যেই সেখানে ২১৬টি ভোট পড়ে। বেলা বেড়েছে, বেড়েছে ভোট-সংখ্যাও। একই ছবি এলাকার কুমারডি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। প্রিজাইডিং অফিসার স্বর্ণেন্দু পাঠক জানালেন, বুথে মোট ভোটার ৪৬৬। বেলা ১২টা বাজার আগেই শ’দু’য়েক ভোট পড়ে গিয়েছে।
খেকরিডি গ্রামে ভোটকেন্দ্রের কাছেই দিন কয়েক আগে মাওবাদীদের নামাঙ্কিত পোস্টার মিলেছিল। ভোট বয়কটের ডাক দেয়নি মাওবাদীরা। তবে তাদের নাম শুনলেই আগে যেখানে এলাকায় ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেত, এ বার সে ছবি বদলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা বাউরি সোরেন, ভীমচন্দ্র মণ্ডল বুথের অদূরে একটা কালভার্ট দেখিয়ে বললেন, “এই কালভার্টেই পোস্টার পড়েছিল।” কাদের? খানিক চুপচাপ। পরে গলা ঝেড়ে দু’জন বললেন, “একটা চাপা আতঙ্ক আছে। তবু মানুষ ভোট দিচ্ছেন।” সকাল সওয়া ১০টার মধ্যে খেকরিডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ৬০৩ জনের মধ্যে ১৬০ জন ভোট দিয়েছেন।
বুথের পথে। অযোধ্যার উসুলডুংরুতে। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটারেরা যেমন বুথমুখো হয়েছেন ,তেমনই এ দিন ভোট দিয়েছেন মাওবাদী হানায় নিহত পরিবারের যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের পরিজনও। খুনটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা মাওবাদীদের হাতে নিহত অজিত সিং সর্দারের কন্যা ও বাকু সিং সর্দারের বোন কুমকুম সিং সর্দার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির ২ নম্বর আসনে। দাদা রাজেনের সঙ্গে মোটরবাইকে চড়ে এই পারবাইদ বুথেই এসেছিলেন ভোট দিতে। কুমকুমের কথায়, “বনপার্টির (মাওবাদী) সন্ত্রাসের প্রতিবাদে প্রার্থী হয়েছি। এই অঞ্চলের উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য, যদি জিতি।” মেয়ে শ্যামলীকে নিয়ে ঘাটবেড়ার বাসিন্দা মনিকা মাহাতো এসেছিলেন কেরোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে। মনিকাদেবীর স্বামী রাজেন মাহাতোকে ২০১০-এর জুলাইয়ে কুমারডি মোড়ে গুলি করে মারে মাওবাদীরা। মনিকা বললেন, “সন্ত্রাস কখনও জয়ী হতে পারে না।”
এলাকার পরিস্থিতি কেমন? মাওবাদী হামলায় বাবা এবং ভাই খুন হওয়ার পরে সপরিবারে ঝাড়খণ্ডে থাকেন রাজেন। বললেন, “দিন কয়েকের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূলের অনেক শীর্ষ নেতাই এলাকার অবস্থা নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। বলেছি, মানুষ ভোট দিতে চান।” এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেছেন, “সব ঠিক আছে। মানুষ সব ভয় জয় করে ভোট দিচ্ছেন।”
এরই মাঝে বলরামপুর-সহ মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঘাটবেড়া এলাকার একাধিক ভোটকেন্দ্রে এ দিন সকালের দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্মীরা বুথ সামলেছেন। এই এলাকার পারবাইদ ভোটকেন্দ্র, যেখানে বিধানসভা ভোটের সময়ে মাছি গলতে না পারার মত নিরাপত্তা বেষ্টনী রচনা করা হয়েছিল, এ দিন সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা টহল দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে আসছেন। একই ছবি সকালের দিকে কুমারডি, খেকরিডিতেও দেখা গিয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপের অভিযোগ, বলরামপুর-সহ জেলার অনেক বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। বদলে রাজ্য পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, “মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ছিল না। এটা কেন হল, বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচাযকে জানিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.