প্রথা ভাঙার সাহস দেখাল না নতুনডি
ভোট দিতে গেলেন না মুসলিম মেয়েরা
সেই ট্র্যাডিশনই বজায় থাকল। পুরুলিয়ার নতুনডি গ্রামের মুসলিম মহিলারা এ বারেও ভোট দিলেন না।
অথচ প্রথা ভাঙার সুযোগ এ বারেই সবচেয়ে বেশি ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে যে গ্রামের মুসলিম মেয়েরা কোনও দিন ভোট দেননি, সে গ্রামেও এ বার মহিলা প্রার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হয়েছে। মহিলা প্রার্থীও দাঁড়া করানো হয়েছে। কিন্তু প্রার্থীরা নিজেরাও ভোট দিতে বেরোননি, বাকি মেয়েরাও না।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বড়দা-নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনডি গ্রামে মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলারা স্বাধীনতার পর থেকেই ভোট দেন না। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে প্রথম বার মুসলিম মহিলাদের বুথমুখো করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সর্বদল বৈঠক হয়েছিল। গ্রামের মসজিদের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক। পুরুষদের সামনে মহিলারা ভোট দিতে আসবেন না জেনে পৃথক ভাবে একটি বুথে শুধু মহিলা ভোটকর্মী ও মহিলা পুলিশকর্মীর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তার পরেও প্রথা ভাঙার সাহস দেখাননি নতুনডি গ্রামের মুসলিম মহিলারা।
ভোটের লাইন। অনেক মহিলা থাকলেও নেই কোনও মুসলিম মহিলা ভোটার।
বৃহস্পতিবার নতুনডি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে।— নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটে সেই ছবির বদল ঘটবে বলে কিছুটা আশাবাদী ছিল প্রশাসন। কারণ, সংরক্ষণের ফলে নতুনডি গ্রামের ৭৩ নম্বর আসন সংরক্ষিত হয়েছে মহিলাদের জন্য। সিপিএম প্রার্থী করেছিল ওই গ্রামেরই সফিয়া বিবিকে। তৃণমূলের প্রার্থী আমিনা বিবি। “এ বার নতুনডি গ্রামেরই দুই মহিলা প্রার্থী হওয়ায় আশা ছিল হয়তো মুসলিম মহিলারা বুথে আসবেন। কিন্তু, প্রার্থীরাই ভোট দিলেন না, গ্রামের বাকি মহিলারা দেবেন কী করে? জানি না, আর কোন উপায়ে বোঝানো সম্ভব!” দিনের শেষে হতাশা ঝরে পড়ল জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার গলায়। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাসের মন্তব্য, “কেউ স্বেচ্ছায় ভোট দিতে না এলে প্রশাসনের আর কী করার আছে!”
৭৩ ও ৭৪ নতুনডি গ্রামের এই দু’টি বুথ মিলিয়ে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৬৯১। তাঁদের মধ্যে জনা তিরিশেক তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের। অধিকাংশ মহিলা ভোটারই মুসলিম। বগ্রামের প্রান্তে নতুনডি হাই মাদ্রাসার বুথে এ দিন সকালে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি বুথেই লম্বা লাইন পুরুষদের। দুপুর ২টোর পরে দল বেঁধে এলেন তফসিলি জাতি ও জনজাতি মহিলারা। কেবল মুসলিম মহিলারা এলেন না। অথচ, গ্রামের স্কুলে কিন্তু পড়তে আসেন ওঁরা। রয়েছে স্বনির্ভর দল। ডাকঘরের পোস্টমাস্টার লুৎফুন্নেসা বেগম নতুনডি গ্রামেরই বাসিন্দা। অন্য সরকারি কাজও করেন গ্রামের মহিলারা। শুধু ভোট দিতেই অনীহা। কেন? তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তৃণমূলের এলাকার নেতা শেখ রফিক, সিপিএমের শেখ জাহাঙ্গির এবং কংগ্রেসের হাসিমুদ্দিন খানের দাবি, “পুরুষেরা চাইলেও মহিলারা ভোট দিতে যেতে চান না।”
কেন? আসল কথাটা বলেছেন পোস্টমাস্টারই। লুৎফুন্নেসা বেগমের কথায়, “গ্রামাঞ্চলে মুসলিম পরিবারে পুরুষদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়। নতুনডি গ্রামের পরিবারগুলিও ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে পুরুষেরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করলে হয়তো প্রথা ভাঙার সাহস মহিলারা দেখাতে পারতেন।” রফিক, জাহাঙ্গির, হাসিমুদ্দিনরা সেটা পারেন কি না, তা পরীক্ষার জন্য আর খুব বেশি সময় নেই। লোকসভা নির্বাচন আসছে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.